ঈদকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে মুড়ি ভাজা নিয়ে ব্যস্ত তিন গ্রাম

আব্দুল আওয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি  ॥
মুড়ির গ্রাম খ্যাত ঠাকুরগাঁওয়ের হরিনারায়ণপুর, মহব্বতপুর ও গিলাবাড়ি গ্রামে গিয়ে চোখে পড়ে মুড়ি ভাজার ব্যস্ততা। এ গ্রামগুলোতে বছরের একটি মাসের প্রতিটি দিন ব্যস্ত সময় পার হয় মুড়ি ভাজা আর বিক্রি করে। এ ব্যস্ততা রমজান মাসের এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরুহয়ে চলে ঈদের  আগের দিন পর্যন্ত। ঠাকুরগাঁওয়ে এ কয়েকটি গ্রামের প্রায় সবারই পেশা মুড়ি ভাজা। কথা বলারও নেই কোন অবসর। রোজার মাসের মুড়ির চাহিদাকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে গ্রামের নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও।

এখানকার প্রায় সব বাড়িতেই এখন মুড়ি ভাজার ধুম। গীরস্ত ধানের মুড়ি। যার খ্যাতি সর্বত্র। রমজান মাস এলেই হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায়।এখানে প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।

অর্ধ শতাব্দীকালেরও অধিক সময় ধরে মুড়ি ভাজে জীবনধারণ করে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার। আগে এর সংখ্যা আরো বেশি থাকলেও নানান সীমাবদ্ধতায় এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে অনেকে।

এ বছর মুড়িকে আকর্ষণীয় ও আকারে বড় করতে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে ক্ষতিকারক হাইড্রোস। আর এই অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্টা দিয়ে টিকতে পারছে না ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম মোহাম্মদপুর, হরিনারায়নপুর, গিলাবাড়ির পাঁচ শতাধিক নারী মুড়ি ব্যবসায়ী।

অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসেই মুড়ির চাহিদা কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ির পাঁচ শতাধিক নারী এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোরে মুড়ি ভাজার কাজ শেষ করেই পায়ে হেঁটে মাথায় মুড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন এ গ্রাম-ও গ্রাম আর কেউবা শহরে ও পাইকারী বিক্রয় করার জন্য মাদারগঞ্জ হাটে।

গিলাবাড়ি গ্রামের মুড়ি ব্যবসায়ী সবিতা রানী বলেন, রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক। কিন্তু পুঁজির অভাবে ঠিকমতো মুড়ি সরবরাহ করতে পারছি না। জয়তী রানী জানান, ভোর থেকে মুড়ি ভাজি, সকাল সাড়ে ৬ টায় বাড়ি থেকে বের হই। শহরে ও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মুড়ি বিক্রি করি।

কিন্তু পুঁজির অভাব ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না এ গ্রামের নারীরা। তাদের তৈরি ভেজাল মুক্ত মুড়ির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছে না তারা। আর কেউবা ব্যবসায় টিকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে গেছে।

হরিনারায়ণপুরের কাজলী সেন জানান, মুড়ির চাল কিনে বাড়িতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করি। এরপর লবণ দিয়ে রাখি। তার পর রোদে শুকিয়ে হাতে ভাজতে হয়।

আর মেশিনে যারা মুড়ি ভাজে তারা হাইড্রোস মিশিয়ে মুড়ি বড় ও সাদা করে কম দামে বিক্রি করে। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেকা খুব কষ্টকর।

শুশিল রায় জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ি থেকে মেটানো হয়। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে পায়ে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করি। ৩ থেকে ৪ দিন মুড়ি বিক্রি করে লাভ হয় পাঁচ ছয়শত টাকা।

এ দিকে রমজানকে সামনে রেখে মুড়ির কারখানা গুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক  হাইড্রোজ নামে একধরনের পাউডার। মানবদেহে এটি ক্ষতিকারক জেনেও ব্যবসা করার জন্যই তা মেশাচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর দুটি মুড়ির কারখানাতেই দেদারছে মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া -হাইড্রোস ।

ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর জেড এন্ড জেড মুড়ির কারখানা মালিক রবিউল হোসেন জানান, মুড়িতে হাইড্রোজ মেশানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু জনসাধারণ পরিষ্কার মুড়ি ও আকারে বড় না হলে কিনছেনা। তাই হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা.আবু মো. খায়রুল কবীর জানান, যে কোনো রাসায়নিক পদার্থ কোনভাবেই হজম হয়না। সেগুলো পরবর্তীতে মানুষের দেহে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট ও শরীর ফুলে যাওয়াসহ কিডনীর রোগের সহায়ক হিসাবে কাজ করে।

পুরোনো সংবাদ

ঠাকুরগাঁও 1797540049757961132

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item