নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে মাতৃত্বকালিন ভাতায় নাম অন্তরভুক্ত করতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ,নীলফামারীঃ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালিন ভাতার তালিকায় নাম অন্তরভুক্ত করতে ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাতাভোগীরা অভিযোগ করেন মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় নাম অন্তরভুক্ত করার জন্য ইউপি সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সহ সংশ্লিষ্টদের  ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে তালিকায় নাম উঠেনা।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস সুত্রে জানা গেছে, দারিদ্য বিমোচনের লক্ষ্যে দেশে সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসাবে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত মাতৃত্বকালিন ভাতা কর্মসুচিতে গর্ভাবস্থায় ও সন্তানকে স্তনদানকালে দুস্থ নারীদের পুষ্টি ও সন্তাদের  যন্তের জন্য ২৪ মাস টাকা দেওয়া হয় জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে ৭২ জন করে মোট ৬৪৮ জন দুঃস্থ অসহায় দরিদ্র নারীকে মাতৃত্বকালিন ভাতা প্রদান করা হবে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অসহায় দরিদ্র নারী, ভুমিহীন ও দুই সন্তানের জননীকে ভাতার তালিকায় অন্তরভুক্ত করার কথা থাকলে টাকার বিনিময়ে অসহায় দরিদ্র ও দুস্থ নারীদের বাদ দিয়ে পাকা বাড়ির মালিক ও তিন সন্তানের জননীকে ভাতার তালিকায় নাম অন্তরভুক্ত করেছেন।
চাঁদখানা ইউনিয়নের  ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন চাঁদখানা গ্রামের বাসিন্দা তাহারিমা আক্তার বলেন, চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমানের ছেলে সানটু মিয়া মাতৃত্বকালিন ভাতার তালিকায় নাম অন্তরভুক্ত করার জন্য আমার কাছে ৪ হাজার টাকা নিয়েছে। তিনি বলেন টাকার কথা বললে তিনি তালিকা থেকে আমার নাম কেঁটে দেবেন।
একই ইউনিয়নের চাঁদখানা ঋষিপাড়া গ্রামের আরতিবালা, কাকলীরানী, সোনালী রানী, সদ্যবালা ও উত্তর চাঁদখানা গ্রামের আহিনা বেগমসহ সকলেই অভিযোগ করে বলেন, শুধু আমরা কেন চাঁদখানা ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে মাতৃত্বকালিন ভাতার তালিকায় নাম অন্তরভুক্ত করতে মেম্বার, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও চেয়ারম্যানের ছেলে সানটু তিন হাজার থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে তালিকায় নাম দিয়েছে। চেয়ারম্যানের ছেলে বলেছে টাকার কথা কাউকে বললে তাদের নাম কেঁটে দেয়া হবে।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, মাতৃত্বকালিন ভাতার তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য ইউপি সদস্য, ইউপি সচিব, ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যগণ ভাতাভোগীদের নাম তালিকায় অন্তরভুক্ত করতে টাকা নিয়েছে। আমার ছেলে সানটু কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। তাছাড়া মহিলা বিষয়ক অফিস থেকেওতো টাকা নেয়। এটা আবার নতুনকি।
রণচন্ডি ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বেবী আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করে। আমি গরীব মানুষ আমার সন্তান ঠিকমতো বুকের দুধ পায়না তাই চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন ব্যাক্তি স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক ও চেয়ারম্যনের কাছের লোক জুয়েল কে তিন হাজার টাকা দিয়েছিলাম রেশনিং কার্ডের তালিকায় নাম দিতে । রেশনিং কার্ডের তালিকায় নাম দিতে না পেরে সেই টাকার বিনিময়ে মাতৃত্বভাতার তালিকায় নাম দিয়েছে।
একই গ্রামের পাকা বাড়ির মালিক কৃষœ কুমার রায়ের স্ত্রী ও তিন সন্তানের জননী হিরো বালা রায় বলেন, আমার গ্রামের শিক্ষক জুয়েল মাষ্টার আমার নাম তালিকায় দিয়েছে। তিনি বলেছেন এখন আপনাদের টাকা দিতে হবেনা। ভাতা পাওয়ার পর তিনি খরচ বাবদ টাকা কেঁটে নেবেন।
এ ব্যাপারে শিক্ষক জুয়েল মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই আমার এলাকার ১,২,ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যার মাধ্যমে আমি নাম দুটো দিয়েছি। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।
রণচন্ডি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান বিমান বলেন, আমার ইউনিয়নের মোট ৭২ জন  ভাতৃত্বকালিন ভাতা পাবেন। আমি নিজে ১৫ জনের নাম দিয়ে বাকিগুলো পরিষদের সকল সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। কেউ যদি টাকা নিয়ে নাম দিয়ে থাকে তাহলে আমার করার কি আছে। গোটা ইউনিয়ন দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ সাবিকুন্নাহারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই কোথায় কোথায় সমস্যা আছে আপনি একটু আমাকে বলেন। আমি ব্যাবস্থা নেব।


সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা যাচাই বাছাই করার থাকলে  মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিকুন্নাহার একটি বা দুটি করে ইউনিয়নের মায়েদের অফিসে ডেকে এনে যাচাই বাছাই করেছেন। ফলে অসহায় প্রকৃত দরিদ্র নারীরা এ ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3418091285058741379

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item