নাগেশ্বরীতে স্বপ্ন দেখিয়ে স্বপ্ন ফাউন্ডেশনের কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য

হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে স্বপ্ন ফাউন্ডেশন স্কুল শিক্ষা প্রকল্পের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নামসর্বস্ব আশার আলো পল্লী উন্নয়ন সংস্থা । শতাধিক স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচ শিক্ষক ও একজন করে আয়া। আর এদের কাছ থেকে জনপ্রতি নেয়া হয়েছে ১০-৫০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের ব্যাপার কিছুই জানেন না উপজেলা প্রশাসন। এমন অভিযোগ স্বপ্ন ফাউন্ডেশন নামের একটি ভূয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে স্বপ্ন ফাউন্ডেশন অ্যান্ড বুটিক হাউস নামক প্রতিষ্ঠানের প্যাডে। এতে ঠিকানা রয়েছে হাউস নং-৭৫, রোড নং-১৩, সেক্টর-১৯, উত্তরা ঢাকা। প্রধান শিক্ষক মাসিক ১৪ হাজার, সহকারী ১২ এবং আয়ার আট হাজার টাকা বেতন উল্লেখ রয়েছে। জেলা সমন্বয়কারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন আজিজার রহমান। সংশ্নিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, সংস্থাটির পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বেপারী ও ভাইস চেয়ারম্যান বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মোকছেদ আলী অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ছিট মালিয়ানী স্বপ্ন ফাউন্ডেশন স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ৩০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন একজন শিক্ষক, বসে আরও চারজন। শিক্ষকরা জানান, ১ জানুয়ারি থেকে তারা পাঠদান চালাচ্ছেন। কিন্তু তিন মাসেও বেতন পাননি। পোশাক, দুপুরে খাবার ও দৈনিক ১৫ টাকা হারে বৃত্তির টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পায়নি শিক্ষার্থীরা। শুধু নিম্নমানের একটি করে বই ও স্লেট দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, আশার আলোতে যোগাযোগ করে কিছু টাকা দিয়ে স্কুল শুরু করেছি। সহকারী শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার সুমী বলেন, টাকার মাধ্যমে নিয়োগ নিয়েছি। নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি। আজও বেতন পাইনি। এখন শুনছি প্রকল্পটি ভুয়া। স্থানীয় পরেশ চন্দ্র বলেন, এলাকায় ১০-১২টি স্কুল হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ১৫ থেকে শুরু করে ৪০ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। মাসিক দুই হাজার টাকায় স্কুল ঘর ভাড়া নেওয়া হলেও কেউ ভাড়া পায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, আশার আলো পল্লী উন্নয়ন সংস্থা ২০১৭ সালের শুরুতে স্বপ্ন ফাউন্ডেশন শিশু শিক্ষা প্রকল্পের নামে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রথম দফায় স্কুলপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা নিয়ে ২৩টি স্কুল অনুমোদন দেয়। পরে বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রতি ১০-৫০ হাজার টাকা নিয়ে সরাসরি শিক্ষক ও আয়া নিয়োগ দেয় সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আজিজার রহমান মণ্ডল। পৌরসভার পায়ড়াডাঙ্গা বালাশীপাড়া স্বপ্ন ফাউন্ডেশন স্কুলের সহকারী শিক্ষক রওশনারা বেগম বলেন, বানুরখামার এলাকার খলিলুর রহমান ১০ হাজার টাকা নিয়ে এখানে আমাকে চাকরি দেয়। তবে নিয়োগপত্র দেয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। পৌরসভার মাজারপাড়া আনন্দ স্কুলের প্রকল্প পরিদর্শক নবীবুর রহমান। তিনি বলেন, আমার কাজ স্কুল দেখভাল করা। বেতনের বিষয় বলতে পারব না। আরেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্কুলগুলো কয়েকবার অডিট হয়েছে। আর একবার অডিট হলে বিস্কুট ও বেতন দেওয়ার কথা। আশার আলো পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আজিজার রহমান মন্ডল জানান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার জন্য এ প্রকল্প। নেদারল্যান্ডসের দাতা সংস্থা অর্থায়ন করবে। তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে স্বপ্ন ফাউন্ডেশন ও বুটিক হাউস। আমরা তৃতীয় পক্ষ। তিনি দাবি করেন, উপজেলায় তার ৪৮টি স্কুল রয়েছে। বাকিগুলো অন্য কেউ করতে পারে। টাকা লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। আমার কাছ থেকে অনেকে স্কুল নিয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৩০-৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন শাহ বলেন, এ রকম কোনো কার্যক্রমের চিঠি পাইনি। বিদেশি-দেশি যাই হোক, শিক্ষা প্রকল্প হলে আমাদের জানার কথা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জানার পর আশার আলো সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আজিজার রহমান মন্ডলসহ তার লোকজনকে একাধিকবার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা প্রকল্পের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। সময় চেয়েছেন।

পুরোনো সংবাদ

কুড়িগ্রাম 2325094262973314834

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item