জলঢাকায় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজছে আ’লীগ

মর্তুজা ইসলাম,জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো কয়েক মাস বাকি থাকলেও এরই মধ্যে মাঠে-ঘাটে শুরু হয়ে গেছে ভোটের হিসাব-নিকাশ।
জেলার ৪টি আসনের মধ্যে জলঢাকা - কিশোরগঞ্জ (আংশিক) উপজেলা নিয়ে গঠিত নীলফামারী - ৩ আসনটি রাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দলীয়সহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে দৌড়ঝাঁপ।
জলঢাকা উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৩ ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনে রয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৯৪জন ভোটার ।
এ বিপুলসংখ্যক ভোটারের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে পুরো জেলার রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে।
বর্তমান এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ । ফলে এ আসনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর সন্ধান করছে তারা। এদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি মনোনয়ন প্রশ্নে আ’লীগকে ছাড় দিতে নারাছ। সমস্যা রয়েছে বিএনপি-জামাত জোটেও। এ জোটে বিএনপি প্রধান দল হলেও দুই বছর আগেই জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষনা করে গোপনে নির্বাচনী কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র সাথে জামায়াতের বিরোধ চলছে বহুদিন ধরে। তাই এবারের নির্বাচনে ছাড় দিতে চাচ্ছে না তারা। জোটের প্রধান দল হিসেবে এবারে এই আসনে বিএনপি’র প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন উপজেলা ও জেলা বিএনপি’র একটি অংশ। এছাড়াও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে দু’বারের নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দেওয়ায় গোঁদের উপর বিঁষ ফোড়া হয়ে দাড়িয়েছে জামায়াতের। এবারের এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি,উপজেলা আ’লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ মনোনয়ন আলোচনায় আছেন অন্তত ছয়জন। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রতিটি ইউনিয়নের হাট-বাজার গুলোতে ব্যানার,ফেস্টুন সার্টিয়ে প্রায় প্রতিদিন এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে ভোটারদের নজরে আসার চেষ্টা করছেন। এ নির্বাচনী এলাকাটিতে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পযর্ন্ত আওয়ামীলীগ-৩ বার,জামায়াত-৩ বার,জাতীয় পার্টি-২বার,বিএনপি-১বার ও মুসলিম লীগ-১ বার নির্বাচিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যাঁরা ঃ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা এবারও মনোনয়ন চান। ১৯৭৫ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে  জাতীয় ছাত্রলীগ(বাকশাল)এর মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা খুশী হলেও কিছুদিনের মধ্যে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। তার বিরুদ্ধে জামায়াত প্রীতি,নিয়োগ বাণিজ্য ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণসহ দলের তৃণমূল পর্যায়ে  গ্র“পিং সৃষ্টির অভিযোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের দ্বায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ দাখিল করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সম্পাদক। এছাড়াও তার এহেন কর্মকান্ডের কারনে গত ১৯ ফেব্র“য়ারী ২০১৬ উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্য্যকরী কমিটির জরুরী সভা করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সকল কর্মকান্ড থেকে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে রেজুলেশন গ্রহণ করে। সেই থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগের কোন কর্মকান্ডে তাকে দেখা যায়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু ও মনোনয়ন চাইবেন বলে আলোচনা রয়েছে।২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখনো তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন ।আনছার আলী মিন্টু  অত্র নির্বাচনী এলাকায় একজন সৎ ও স্বজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালে তিনি এই আসন থেকে  মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন। এবারে মনোনয়ন পাওয়ার আশা বাদী তিনি ।
মনোনয়ন চান উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সাধারন সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল। প্রতিষ্ঠা লগ্নে থেকে তার পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাঁর পিতা মরহুম ডাঃ শফিয়ৎ হোসেন ১৯৭৫সাল থেকে মৃত্যু আগ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সহীদ হোসেন রুবেল। তিনি শিমূলবাড়ী বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজের সাবেক সভাপতি,বর্তমান উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদকসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও  সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দু’বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে দলীয় কোন্দলের কারনে পরাজিত হন। উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশ্বাস্ত এই পরিবারটির প্রত্যাশা নেত্রী এবার তাদের মূল্যায়ন করবে। এর আগেও তিনি ৩ বার মনোয়ন চেয়েছিলেন। 
এদিকে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চান উদীয়মান তরুন নেতা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর। ইতিমধ্যে তিনি উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে ব্যানার,ফেস্টুন ও পোষ্টার লাগিয়ে ভোটারদের মাঝে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতিকে ভোট করেন তিনি। এ জন্য  এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর। রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের তুখোড় ছাত্রনেতা এ কে এম শহীদুল ইসলাম এবার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচনী এলাকার হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণ-সংযোগ শুরু করেছেন। তাঁর বাড়ি ওই আসনের কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ভেরভেরি গ্রামে। ২০০৫সালে তিনি চাকরী থেকে অবসর গ্রহণ করে ২০০৮সালে প্রথম মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মীরা জানায়, এ আসনে নবীন-প্রবীণ মিলে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গ্র“পিং ও দলাদলিও চলছে অনেকদিন ধরে। এ ব্যাপারে  দলের দীর্ঘদিনের সাধারন সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল বলেন, বর্তমান এমপি’র কর্মকান্ডে দলের ভাবমুর্তির অনেক ক্ষতি হয়েছে,তবে এবারের নির্বাচনে বিতর্কিত ব্যাক্তিদের মনোনয়ন না দিয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দিলে এ আসনে নৌকা মার্কা প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত বলে আমার বিশ্বাস
জামায়াতঃ আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এ আসনে প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক জেলা আমীর আজিজুল ইসলাম হবেন বলে জামায়াত সুত্রে জানা গেছে। দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা জানায়,অনেক দিন আগে থেকে তাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০০৮ সালে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে নির্বাচন করে প্রায় ৮০হাজার ভোটের ব্যবধানে মহাজোট প্রার্থী কাজী ফারুক কাদেরের কাছে পরাজিত হন জামায়াতের এই নেতা। এবারের নির্বাচনেও তিনিই জোটের প্রার্থী হবেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। আলহাজ্ব সৈয়দ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জামায়াতের ভোটে কোন প্রভাব পড়বে না বলে নিশ্চিত করে উপজেলা জামায়াতের আমীর প্রভাষক ছাদের হোসেন বলেন, সৈয়দ আলী আমাদের দলের কর্মী বা সমর্থক কিছুই না।
বিএনপিঃ এই আসনটিতে বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা তেমনটা ভাল না হওয়ায় এবং প্রার্থী সংকটে রয়েছে বড় এই দলটি। তবে উপজেলা বিএনপি সভাপতি,পৌর মেয়র ও সাবেক এমপি আনোয়ারুল হক কবির চৌধুরীর ছেলে ফাহমিদ ফয়সাল কমেট চৌধুরী জোটের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টি ঃ আসনটিতে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির কাজী ফারুক কাদের। দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং বহাল এই দোলা-চালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এবারও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানান তিনি। কাজী ফারুক কাদের নির্বাচনী এলাকায় দুর্নীতি ও দলীয়করনের বিরোধী হওয়ায় সকলের কাছে একজন সৎ ও আদর্শবান ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মেজর (অবঃ) রানা মোহাম্মদ সোহেল নামের আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন বলে আলোচনায় এসেছেন।
স্বতন্ত্র ঃ জামায়াতের সমর্থনে জলঢাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দু’বারের নির্বাচিত শিল্পপতি সৈয়দ আলী এবারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তাঁর শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টার নির্বাচনী এলাকার সবখানে লাগানো হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় দির্ঘদিন ধরে প্রতিটি মসজিদ,মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে জামায়াতের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাবে বলে মনে করছেন সুধী মহল।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5331640527332643749

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item