পীরগঞ্জে ৩০ হাজার কৃষক সার পেতে ভোগান্তির শিকার

একই স্থানে ২/৩ জন ডিলার, কৃষকরা ৮/১০ কিমি দুর থেকে সার নিচ্ছে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন

মামুনুর রশিদ মেরাজুল,পীরগঞ্জ রংপুর থেকেঃ

বর্তমান সরকার কৃষকের সারের চাহিদা পুরণে প্রতিনিটি ইউনিয়নে বিসিআইসি’র সার ডিলার নিয়োগ দিলেও পীরগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নের কৃষক সার নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। একই স্থানে ৩ জন পর্যন্ত সার ডিলার থাকার ফলে কৃষকরা স্থানীয় খুচরা দোকান থেকে অতিরিক্ত মুল্যে সার ক্রয় করায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ কৃষি বিভাগ আপত্তি তুললেও ডিলারদের সমিতির কারণে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলারদেরকে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জে  ১৫ টি ইউনিয়নের ৩’শ ৩১টি গ্রামে মোট আবাদী জমির পরিমান ৩২ হাজার ৭২০ হেক্টর। ওই জমির মধ্যে এক ফসলী ৭২০ হেক্টর, দুই ফসলী ১৯ হাজার ৫৫০ হেক্টর, তিন ফসলী ১০ হাজার ৩২০ হেক্টর এবং ৪ ফসলী ২ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। মোট কৃষক পরিবার ৮৫ হাজার ৯৮৭টি। ওইসব জমিতে রাসায়নিক (ইউরিয়া-নন ইউরিয়া) সারের প্রয়োগ নিশ্চিত ও সার সহজ প্রাপ্তির লক্ষে আওয়ামীলীগ সরকার বিগত ১৯৯৬ সালে ইউনিয়নপর্যায়ে বিসিআইসি’র সার ডিলার নিয়োগ দেয়। সেই সময় থেকে টুকুরিয়া, রায়পুর, শানেরহাট, পাঁচগাছী ও রামনাথপুর ইউনিয়নের এই ৫জন ডিলার ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যবসা করতে যায়নি। ফলে ওইসব ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার চাষী সার ক্রয় ও জমিতে প্রয়োগ নিয়ে আবাদী মওসুমে প্রায়ই দুশ্চিন্তায় থাকেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের ডিলার ‘মেসার্স মিঠু এন্ড কোং’ মদনখালী ইউনিয়নের ডিলার ‘মেসার্স রানা ট্রেডার্স’র পাশে খালাশপীরহাটে, রায়পুর ইউনিয়নের ডিলার ‘মেসার্স রহমান ট্রেডার্স’ ও রামনাথপুর ইউনিয়নের ডিলার ‘ইমন ট্রেডার্স’ পীরগঞ্জ ইউনিয়নের ডিলার মেসার্স সার ঘর’র পাশে উপজেলা সদরে; শানেরহাট ইউনিয়নের ডিলার ‘মেসার্স রাঁধারমন সাহা’ ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের ডিলার ‘মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স’ মিঠিপুর ইউনিয়নের ডিলার ‘মেসার্স সাহা ভান্ডার’র পাশে মাদারগঞ্জহাটে সারের ব্যবসা করছে। খালাশপীর হাটে ২জন, পীরগঞ্জ ইউনিয়নে ৩ জন এবং মাদারগঞ্জহাটে ৩ জন ডিলার থাকায় ডিলারদের মাঝে ব্যবসায়িক স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। কারণ একই স্থানে ২/৩ জন করে সার ডিলার থাকায় সারের বিক্রিও কম বলে জানা গেছে। এতে স্থানীয় খুচরা সার বিক্রেতাদের উপর নির্ভর করছে উলে¬খিত ইউনিয়নের কৃষকরা। অপরদিকে ডিলারবিহীন ইউনিয়নগুলোর ৭/৮ কি.মি দুর থেকে কৃষকরা সার নিতে আসায় বেশী টাকা খরচ হচ্ছে। আবার কোন সময় স্থানীয় খুচরা সার বিক্রেতার কাছ থেকে কৃষকরা অতিরিক্ত মুল্যে ভেজাল ও নি¤œমানের সারও ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তারা আর্থিক ও ফসলের উৎপাদনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ব্যাপারে টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল জয়নন্দনপুরের শফিকুল ইসলাম, মোনাইলের ইসলাম মিয়া, শানেরহাট ইউনিয়নের এনায়েতপুরের গোলাম মওলা, পাঁচগাছীর মাহমুদ হাসান সেতু, আমোদপুরের আঃ হালিম মিয়া, রামনাথপুর ইউনিয়নের রামনাথপুরের আঃ হাকিম ও রশিদ মিয়া, রায়পুর ইউনিয়নের মহদিপুরের আজাহার আলী, রায়পুরের গোলাপ মিয়া  অভিযোগ করে জানান, আমরা হাতের কাছে ডিলার না পেয়ে খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে সার ক্রয় করি। অনেক সময় ভেজাল ও নিম্নমানের সার জমিতে প্রয়োগ করায় ফসলের উৎপাদন কমে যায়। অপরদিকে মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্সের প্রোঃ শেখ সাদী ও মেসার্স রাঁধা রমন সাহা’র প্রোঃ মানিক কুমার সাহা বলেন, সারের চাহিদা মেটাতে আমরা আমাদের ইউনিয়নে দোকান করে রেখেছি। আর সারের তেমন চাহিদাও নেই। অপরদিকে টুকুরিয়া ইউনিয়নের ডিলার মিঠু মিয়া বলেন, আমার দোকানে সার না থাকলেও আমি মদনখালী ইউনিয়নের ডিলারের কাছে সারগুলো দিয়েছি। ওখান থেকেই সার বিক্রি হয়। বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির পীরগঞ্জ শাখার সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান পেয়ারা বলেন, যেসব ইউনিয়নের ডিলার অন্য স্থানে থেকে ব্যবসা করছে। তাদের দোকান সংশি¬ষ্ট ইউনিয়নেও রয়েছে। এতে কোন সমস্যা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার বলেন, একই স্থানে একাধিক ডিলার থাকায় ব্যবসায় মন্দা যায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র ঘোষ বলেন, ৫টি ইউনিয়নে ডিলার না থাকার বিষয়টি অনেক পুরাতন। তবে সংশি¬ষ্ট ইউনিয়নে ডিলার থাকাটা আবশ্যক। ওইসব ডিলারদেরকে আমরা বলেও এ ব্যাপারে বলেও আসছি। কিন্তু তারা শুনছে না। 

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3659824901822162920

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item