লন্ডভন্ড তিস্তা

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৩ আগষ্ট॥ উজানের ঢল ও ভারী বর্ষনে আবারো গর্জে উঠেছে তিস্তা। রুদ্রমুর্তি ধারন করে সব কিছু কাঁপিয়ে দিয়ে চলেছে। সামনে যা কিছু পেয়েছে সব উড়িয়ে দিয়েছে। ফলে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে তিস্তা অববাহিকা। উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ৫৪টি র মধ্যে ৩৫টি লকগেট খুলে দেয়ায় এ পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছে। তিস্তা নদীর উজানের ঢলের খবরে শনিবার (১২ আগষ্ট) রাতে রেড এ্যালার্ট জারী করে তিস্তা অববাহিকায়। তিস্তা নদী বন্যা সহ নীলফামারীর ছয় উপজেলার অবিরাম বর্ষনে ৫০ হাজার পবিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চরম দুর্ভোগে রয়েছে জেলার ২০ লাখ মানুষ।
আজ রবিবার সকাল ৬টা হতে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারী ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ৬৫ সেন্টিমিটার (৫৩.০৫) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। তবে বিকাল থেকে উজানের ঢল কমে আসায় সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এলাকাবাসীর মতে ১৯৮৮-১৯৯৮-২০০৭ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে গেছে ২০১৭ সালের ১৩ আগস্টের  এই উজানের ঢলের বন্যার ভয়াবহতা।
উজানের ঢলে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ থর থর করে কাঁপতে থাকে। ফলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ফ্লাড বাইপাস ওপেন করতে গেলে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলা এলাকার মানুষজনের বাধার সম্মুখিন হয়ে তা ওপেন করতে পারেনি। ফ্লাড বাইপাস ওপেন করতে না পারার কারনে তিস্তা ব্যারাজ রয়েছে ঝুকির মধ্যে। এ ছাড়া ব্যারাজের উজানের নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এখন লন্ডভন্ড হচ্ছে। এতে পাঁচশতাধিক পরিবারের বসতঘর ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নদীর ঢল। এরমধ্যে বসতঘর উড়িয়ে নিয়ে যায় পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ১৪টি, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৬টি, টেপাখড়িবাড়ী ৩১টি, খালিশা চাপানিতে ২৫টি ও ঝুনাগাছ চাপানি ২০টি। এ ছাড়া কয়েক হাজার মানুষজনকে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগন নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
এদিকে রবিবার ভোরে তিস্তার উজানে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে ২টি গাইড বাঁধ, টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের স্বপন বাঁধ, পশ্চিম বাইশপুকুরের একটি বাঁধ, বুড়ি তিস্তা নদীর পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের বার্নির ঘাট বাঁধ, সুন্দরখাতার মৌজার মাইজালীর ডাঙ্গা, নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান, কুমলাই নদীর ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের পশ্চিম ঝুনাগাছ চাপানিতে মাটির রাস্তা বিধস্ত হয়েছে। এসব এলাকার লোকজনকে বাঁধের উচু স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে মর্মে খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নিশ্চিত করেন।
পানির প্রবাহ বেশী হওয়ায় ডালিয়া ব্যারেজ হুমকির মুখে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ। তবে সকাল সাড়ে ৯টায় পাউবো কতৃপক্ষ ব্যারেজ সংলগ্ন ফ্লাড বাইপাসটি কেটে দিতে গেলে স্থানীয় লোকজনের বাঁধার মুখে কাটতে পারেনি। ঘটনাস্থলে রংপুর সার্কেল-২ তত্বাবধায় প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ নিশ্চিত করে বলেন, সেখানে আনছার ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লালমনিরহাট থেকে অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে পুলিশ আসলে ফ্লাড বাইপাসটি ওপেন করা হবে।
এছাড়াও বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার করতে রংপুর সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম।
তিস্তা নদী বিধৌত ডিমলা উপজেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা দুর্গত ক্যাম্প চালু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহম্মদ খালেদ রহীম জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে জেলা জুড়ে চরম দুর্ভোগের সৃস্টি হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষজনের জন্য রবিবার ১৮০ মেট্রিক চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় আরো ১০ লাখ টাকা দুইশত মেট্রিক টন চাল ও ৫ হাজা  শুকনা খাবারারের চাহিদাপত্র প্রেরন করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান ভয়াবহ উজানের ঢলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
একদিকে তিস্তা নদী ছাড়াও বুড়িতিস্তা, নাউতরা, কুমলাই নদীর কারনে শত শত হেক্টর আবাদী জমির ফসল গত ৫দিন থেকে হাটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

সৈয়দপুরে শহর রক্ষা বাঁধ বিধ্বস্থ্যঃ টানা বর্ষণে পানির চাপে নীলফামারীর সৈয়দপুরের খড়খড়িয়া নদীর বাম তীরে পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া, বসুনিয়া দুই স্থানে প্রায় ১০০ মিটার শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে শহরে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ওই এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে বিধ্বস্থ্য বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা যায়, সৈয়দপুর সেনানিবাসের ২৭ বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ্ নেওয়াজের নেতৃত্বে ৪০ জন সেনা সদস্য কাজ করছে। 
আজ রবিবার সকালে সৈয়দপুর সেনানিবাস, শহরের কুন্দল, পাটোয়ারীপাড়া, নয়াবাজার, কাজীপাড়া, হাতিখানা, নতুন বাবুপাড়া, মিস্ত্রীপাড়া, বাঁশবাড়ি মহল্লা হু হু করে পানি ঢুকেছে। ওইসব এলাকার কোথাও কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে শহরের উত্তর দিকে বসুনিয়াপাড়া এলাকাতেও শহর রক্ষা বাঁধটি ভেঙে গেছে। ফলে ওই এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাঁধ ভাঙ্গার কথা স্বীকার করে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, এমনিতেই কয়েকদিনের বর্ষণে শহরের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। তার উপর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেনানিবাস এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও যে কোনো সময় বন্যার পানি ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সৈয়দপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) শহীদুল ইসলাম বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের দুইটি স্থানে প্রায় ১০০ মিটার  ভেঙে গেছে। ভাঙনরোধে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পৌরসভা, সেনাবাহিনীসহ সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছি।

নীলফামারীতে টানা বর্ষনঃ অপরদিকে টানা বর্ষনে ছোটবড় নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানির তোরে গ্রামীণ কাচা, পাকা, আধা-পাকা সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটেছে। অনেকস্থানে জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে বিস্তির্ণ এলাকার আমন ক্ষেত। জেলা শহরে অপ্রতুল পানি নিঃস্কাশন ব্যবস্থায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বাবুপাড়া, প্রগতিপাড়া, কলেজপাড়া, সওদাগড়পাড়া, মাছুয়াপাড়া, পঞ্চপুকুর ইউনিয়ন, গোড়গ্রাম, হাড়োয়া গ্রাম ও সৈয়দপুরে বিভিন্ন গ্রাম। #


পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 6756263561899586778

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item