আতঙ্কের মাঝেও ছাউনির নিচে শান্তির ঘুম
https://www.obolokon24.com/2017/08/thakurgaon_14.html
আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।। রাতে চারপাশে শুনসান
নীরবতা। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের প্রহরা নেই। নেই যানবাহনের কোনো যানজট।
রবিবার দিবাগত রাাত ২ টা ২০ মিনিট। ঠাকুরগাঁও শহরের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত
মানুষেরা তখন গভীর শান্তির নিন্দ্রায় রাত পার করছেন।
তখন
আকাশ থেকে মেঘের গর্জনের শব্দ শুনা যাচ্ছে। আর ঠাকুরগাঁও শহরের টাঙ্গন
নদীতে বন্যার পানির তীব্র স্রোতের শব্দে আতঙ্কিত বন্যা প্লাবিত এলাকার
অসহায় মানুষ।
ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের প্লাবিত এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার
মানুষ তাদের স্ত্রী-সন্তান, বৃদ্ধ মা-বাবা ও গবাদিপশু নিয়ে একটু নিরাপদে
থাকার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন গাছ তলা, রাস্তার পাশে ও বিভিন্ন স্থানীয়
প্রশাসনের খুলে দেওয়া আশ্রয় কেন্দ্রে গুলোতে।
আর বন্যা কবলিত শহরের খালপাড়া এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক মানুষ টাঙ্গন নদীর রাস্তার পাশেই পলিথিনের ছাউনি তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন।
রাতে
বন্যায় কবলিত আশ্রয় কেন্দ্রে সরেজমিনে দেখা যায়, হঠাৎ টাঙ্গন নদীর রাস্তার
পাশেই চোখে পড়ে অনেক অসহায় মানুষ বৃষ্টি মোকাবেলা করার জন্য ছাউনি ঠিক
করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। আবার কেউ ছাউনির ভেতরে শিশু, নারী, বৃদ্ধাসহ
ঘুমিয়ে পড়েছেন। অনেক মা তার প্রিয় সন্তানটি জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছেন। আর বয়স্ক
পুরুষ অভিভাবক ও যুবকরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছাউনির ভেতরে ঘুমন্ত মানুষদের
পাহাড়া দিচ্ছেন।
ছাউনির ভেতরে একজন মা তার শিশুটি ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া জন্য বসে আছেন। আর ওই ছাউনির ভেতরেই গবাদিপশু গুলোকে নিরাপদে রেখেছেন তিনি।
ওই গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, বন্যা আমাদের
জন্য অভিশাপ। বন্যায় ঘর-বাড়ি ডুবে গেলে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে গাছের তলায়
ছাউনী তৈরি করে রাত কাটাতে হচ্ছে দু’দিন ধরে। অন্য আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে
মানুষ খাবার দেওয়ার জন্য ব্যস্ত, “কিন্তু আমাদের ছাউনীর ভেতরে আশ্রয় নেওয়া
মানুষের কেউ খোঁজ রাখছে না।
বয়স্ক
বৃদ্ধা আমেনা বেগম বলেন, বন্যায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে দু’তলায়, আর শেষ বয়সে
আমাদের নিতে হয়েছে গাছ তলায়। গাছ তলার মানুষের কেউ খবর নিতে আসে না।
সন্ধ্যায় ছোট একটা প্যাকেটে এলাকার জনপ্রতিনিধি খিচুরী দিয়ে গেছেন। যা
মুখেই দেওয়া যায় না। এখন পর্যন্ত সরকার দলের নেতাদের কাওকে সহযোগিতার জন্য
এগিয়ে আসতে দেখলাম না।
খালপাড়া
বন্যা কবলিত এলাকার সাইফুল আলম জানান, হঠাৎ একদিনে যে বন্যার পরিস্থিতি
হয়েছে, এমনটা হবে আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি। ঘর-বাড়ির সকল জিনিসপত্র রেখে
স্ত্রী, সন্তান ও গবাদিপশু গুলোকে নিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছি। নারীদের
জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা তেমন নেই। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট
দেখা দিয়েছে।
পলিথিনের ছাউনির
ভেতরে স্ত্রী, সন্তান ও গবাদিপশু নিয়ে একই সঙ্গে থাকাতে বিপাকে পড়েছেন
বেশির ভাগ মানুষ। বৃষ্টিতে ছাউনির ভেতরেই পানি পড়তে দেখা গেছে।
জেলা
ত্রাণ ও পূর্নবাসন অফিসের তথ্য মতে, জেলার ৫টি উপজেলায় ৪০টি ইউনিয়নের কয়েক
লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ৪০ মে. টন চাল ও নগদ দেড় লাখ
টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালের কাছে আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের সহযোগিতার কথা
জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলায় ৬৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়াও শুকনো
খাবার, পানি সরবরাহ ও মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের
জন্য আরো চাহিদা দিয়ে ত্রাণ ও নগদ টাকা চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য,
উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে শহরের টাঙ্গন নদীর তীরবর্তী জনবসতি গুলোসহ
জেলার অন্যান্য ১০টি নদীতে রেকর্ড পরিমাণ পানি প্রবেশ করেছে এবারের বন্যায়।
আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
ঠাকুরগাঁও
জেলার প্লাবিত অঞ্চলগুলো হচ্ছে, শহরের হঠাৎপাড়া, ডিসি বস্তি, সরকার পাড়া ও
খালপাড়া, সদর উপজেলার আকঁচা, রায়পুর, মোহাম্মদপুর, সালন্দর, শুকানপুকুরী ও
রুহিয়া, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রাণীংশকৈল উপজেলার আশেপাশের অনেক এলাকার
বাড়ি-ঘর এখন পানির নিচে।