অন্ধ চোখে অনেক স্বপ্ন
https://www.obolokon24.com/2017/08/eye.html
আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
রোজিনা বেগম। একটি নাম। একটি আন্দোলন। তবে কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এটি একটি শিক্ষার আন্দোলন। যা দুনিয়াজুড়ে হচ্ছে। কিন্তু একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েই তিনি আলোচনায় এসেছেন। স্থান করে নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ে মানুষের মনে। তার চোখের আলো না থাকলেও মনেরশক্তি প্রবল। জন্মেই আগেই তিনি চোখের আলো হারিয়ে ফেলেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে বলেও কারোর ওপর নির্ভরশীল হতে চাননি তিনি। সাহসে ভর করেই পথ চলেছেন। তারপরও তিনি থেমে থাকেন নি। জীবনের চাকা থামতে দেননি। তিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছেন।
রোজিনা বেগম। একটি নাম। একটি আন্দোলন। তবে কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এটি একটি শিক্ষার আন্দোলন। যা দুনিয়াজুড়ে হচ্ছে। কিন্তু একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েই তিনি আলোচনায় এসেছেন। স্থান করে নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ে মানুষের মনে। তার চোখের আলো না থাকলেও মনেরশক্তি প্রবল। জন্মেই আগেই তিনি চোখের আলো হারিয়ে ফেলেন। দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে বলেও কারোর ওপর নির্ভরশীল হতে চাননি তিনি। সাহসে ভর করেই পথ চলেছেন। তারপরও তিনি থেমে থাকেন নি। জীবনের চাকা থামতে দেননি। তিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছেন।
বর্তমানে
ঠাকুরগাঁওয়ের ফ্রীড মাতৃছায়া অটিস্টিক স্কুলের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি শিক্ষিকা
হিসেবে প্রতিবন্ধীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন।
ওই
অটিস্টিক শিশু নিকেতন স্কুলে দীর্ঘ ৭মাস ধরে এভাবেই প্রতিবন্ধি শিশুদের
মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন রোজিনা বেগম । তিনি ঐ স্কুলের মিউজিশিয়ানের
শিক্ষিকা।
সারেজমিনে গিয়ে
দেখা যায়, খুব সহজেই গানের ক্লাসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে প্রতিবন্ধি শিশুদের
ক্লাস করাচ্ছেন রোজিনা। যখন গান করেন, কেউ বুঝতেই পারবেন না তিনি
জন্মান্ধ। সুন্দর তাঁর বাচনভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গিও আকর্ষণীয়।
তার
এসব কর্মকান্ড প্রমান করে দিয়েছে যে অন্ধরা কারো বোঝা নয়; বরং সম্পদ। নিকষ
অন্ধকারের মধ্যেই আলো খুঁজে পেয়েছন তিনি। জয় করছেন নিজের স্বপ্নকে।
রোজিনা
বেগম ঢাকা শাহ-জাহান পুরের মৃত শেখ আজিজ মিয়ার বাসায় জন্ম গ্রহণ করেন।
ঢাকা ব্যপ্টিষ্ট সংঘ স্কুল থেকে তার লেখাপড়ার যাত্রা শুরু করেন। এর পরে
১৯৯২ সালে তিনি মিরপুর গার্ল আইড়িয়াল ল্যাবরাটরি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ
করেন। ১৯৯৬ সালে বদরুলনেছা মহিলা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা আগারগাঁও সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয়ে
মিউজিশিয়ানের উপরে ভার্তি হন। সেখানেই তিনি একজন ভালো মিউজিশিয়ানের
প্রশিক্ষণ নেন। উচ্চ শিক্ষার ধাপে এসেই যেন রোজিনার কাছে একে একে সব আকাশ
ছোঁয়া স্বপ্ন হাতে এসে ধরা দিতে থাকে। পড়াশুনার বাইরে তার গান চর্চা,
লেখালেখি, কো-কারিকুলাম কার্যক্রম সবকিছুকেই সমানভাবে চালিয়ে গেছেন। চোখের
আলো না থাকলেও মনের আলো দিয়ে তিনি জয় করে নিয়েছেন অনেক বাধা-বিপত্তিকে।
রোজিনা
বেগম জানান, আমি ঢাকার একটি ইন্টান্যাশনাল প্রশিকা
এসজিওতে কর্মরত ছিলাম। পরে পারিবারিক সমস্যার কারনে সেই চাকারীটি চলে যায়।
এর পরেই ২০০৮ সালে আমি প্রথম ঠাকুরগাঁওয়ে আসি। শহরের কালিবাড়ি এলাকায় আমার
বাসা। এর পর থেকেইে আমার অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। পরে আমার এক
সুবাকঙ্খি আমাকে এখানে এনে চাকরীটির ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু বাঁচার মতো
নেই কোন ব্যবস্থা। আমার সাথে সাথে আমার স্বামী ফজলে রাব্বি ও একজন
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি। আমার দুই সন্তান। ছেলেটির নাম আর-রাফিউর রাফি(৮) আর
মেয়েটির নাম ফারিহা জাহান নোভা(১১)। তারা দুই জনেই লেখাপড়া করেন। কিন্তু
আমি যে কাজটি করি এটা দিয়ে আমার সংসার চলানো অনেক কষ্ট কর হয়ে উঠে। নেই কোন
ভাতা,নেই কোন সহযোগিতা। কিভাবে চলবো? যদি আমাকে মাননীয় জেলা প্রশাসক
আব্দুল আউয়াল স্যার একটি ভালো চাকরীর ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমার জন্য
অনেকটাই সুবিধা হবে। এমনি কথা বলে মনের কষ্টটি প্রকাশ করেন রোজিনা।
প্রতিবন্ধি
শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি নিজেই একজন
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি। তাই আমি বুঝি একজন প্রতিবন্ধির কষ্টটি। আমি যেমন একজন
প্রতিবন্ধির সমস্যাগুলো সহজেই বুঝতে পাড়বো সেটা অন্য কেউ সহজে বুঝতে
পাড়বেনা। তাই প্রতিদিন নিয়মিত সময়ে স্কুলে প্রবেশ করি এবং স্কুল ছুটির শেষে
বাসায় ফিরে যাই। আমি জন্মান্ধ হলেও আমার কাজের মূল্যায়ন করায় আমি গর্বিত।
সমাজ
কল্যান থেকে প্রতিবন্ধিদের দেওয়া লোনের ব্যাপারে অভিযোগ করে রোজিনা বেগম
বলেন, আমি ও আমার স্বামী দুই জনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি। আমি অনেকবার তাদের
কাছে গিয়েছিলাম। এর পরেও তারা আমাদের বলে এই লোন নেওয়ার কেটাগোরিতে আমরা
পরিনা। প্রতিবারেই একই কথা বলেন তারা। যদি সমাজ কল্যান আমাদের লোন দেয়
তাহলে সেই টাকা দিয়ে আরা হারমোনিয়াম কিনবা অন্য জিনিস কিনে একটি আয়
রোজগারের জন্য কিছু করতে পাড়তাম বলে জানান তিনি।
রোজিনা
ঢাকা শাহ-জাহান পুরের মৃত.শেখ আজিজ মিয়া ও সরিফুন নেছার সন্তান। বাড়ি ঢাকা
হলেও বসবাস করেন ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ী এলাকায়। তারা দুই ভাই ও দুই বোন
।
ওই স্কুলের প্রধান
শিক্ষিকা মাসহুরা বগেম হুরা বলেন, রোজিনা আমাদের স্কুলের গানের শিক্ষিকা।
এমন ভালো শিক্ষিকা প্রতিবন্ধীদের উৎসাহ দিলে সমাজকে তারা আরো এগিয়ে নিতে
পারবে বলে মনে করেন তিনি।
এ
ব্যাপারে ঠাকুরাগঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, রোজিনা অনেক মেধাবী
একজন মহিলা। তার এই কার্যকলাপকে আমি ধন্যবাদ জানাই। খুব শীঘ্রই তার একটা
চাকরীর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।