ঠাকুরগাঁওয়ে অসাধু ব্যবসায়িদের কাছে টিকতে পারছে না "মুড়ি গ্রামের" কারিগররা

আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : 
"মুড়ির চাল কিনে বাড়িতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করেন। এরপর লবণ মেখে রেখে দেন। তার পর রোদে শুকিয়ে হাতে ভাজেন। এসময় এক সাথে দুই চুলায় এক হাড়িতে চাল এবং অন্য হাড়িতে বালি গরম করতে হয়। তারপর তপ্ত বালিতে চাল ভালোভাবে গরম হলে ঢেলে দ্রæত কাঠি দিয়ে নাড়লেই তৈরি হয় হাতে ভাজা মুড়ি"। এ কথা গুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা হরিনারায়নপুর এলাকার মুড়ি তৈরির কারিগর চন্দ্রিমা রায়। কিন্তু তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, মুড়িকে আকর্ষণীয় ও আকারে বড় করতে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে তিকারক হাইড্রোস। আর এই অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পালøা দিয়ে টিকতে পারছে না ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম হরিনারায়ণপুরের চন্দ্রিমার মত পাঁচ শতাধিক নারী ব্যবসায়ী। তাই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন তারা।
অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসেই মুড়ির চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ির এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী এখন ব্য¯Í সময় কাটাচ্ছেন।
ভোরে মুড়ি ভাজার কাজ শেষ করেই পায়ে হেঁটে মাথায় মুড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন এ গ্রাম-ও গ্রাম আর কেউবা শহরে।
একই গ্রামের মুড়ি ব্যবসায়ী কাকুলি রানী বলেন, “রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক। কিন্তু পুঁজির অভাবে ঠিকমতো মুড়ি সরবরাহ করতে পারছি না।”
মিনতি রায় জানান, ভোর থেকে মুড়ি ভাজেন, সকাল সাড়ে ৬টায় বাড়ি থেকে বের হন। শহরের বিভিন্ন পাড়া, মহলøায় মুড়ি বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন।
কিন্তু পুঁজির অভাব ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পালাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না এ গ্রামের নারীরা। তাদের তৈরি ভেজালমুক্ত মুড়ির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছে না তারা। আর কেউবা ব্যবসায় টিকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
আর মেশিনে যারা মুড়ি ভাজেন তারা হাইড্রোস মিশিয়ে মুড়ি বড় ও সাদা করে কম দামে বিক্রি করে। এতে খরচ এবং পরিশ্রম উভয়ই কম লাগে। তাই এদের সঙ্গে পালাল্লা দিয়ে টেকা কষ্টকর।
গোপাল ঘোষ বলেন, “ঠাকুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ি এলঅকা থেকে মেটানো হয়। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করি। ৩ থেকে ৪ দিন মুড়ি বিক্রি করে লাভ হয় ৫৫০ টাকা। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।”
এ দিকে রজমানকে সামনে রেখে মুড়ির কারখানা গুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুড়িতে মেশাচ্ছে হাইড্রোজ নামে এক ধরনের রাসায়নিক। এতে মুড়ি যেমন আকারে বেশি বড় হয় পাশাপাশি সাদাও হয়। মানবদেহে এটি ক্ষতিকারক জেনেও ব্যবসা করার জন্যই তা মেশাচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর দুটি মুড়ির কারখানাতেই দেদারছে মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া এবং হাইড্রোস।
ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর এক মুড়ির কারখানা মালিক রবিউল জানান, মুড়িতে হাইড্রোজ মেশানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। কিন্তু জনসাধারণ পরিষ্কার মুড়ি ও আকারে বড় না হলে কিনছে না। তাই হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন অফিসের স্যানিটারি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, মুড়িতে হাইড্রোস মেশানোর কথা শুনেছি। তবে মুড়িতে হাইড্রোস মেশালে মুড়ি সাদা ও আকারে বড় হয়। তাই স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পক্ষে। এই হাইড্রোস মেশানো কারখানা গুলোতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।
মুড়িতে হাইড্রোস মেশানোর  বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো: খায়রুল কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে কোনো রাসায়নিক পদার্থ কোনভাবেই হজম হয় না। সেগুলো পরবর্তীতে মানুষের দেহে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়াসহ কিডনি রোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।” তাই মুড়ি কেনার সময় জন সাধারণকে সর্তক হওয়ার আহবান জানান এই চিকিৎসক।

পুরোনো সংবাদ

ঠাকুরগাঁও 1821917974797993664

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item