পাহাড়ে লাশের পাহাড়!

ডেস্কঃ
দুইদিনের টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।  চার সেনা সদস্যসহ এখন পর্যন্ত ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন পার্বত্য জনপদের মানুষেরা। নিহতের সংখ্যা যেন আর থামছেই না। সোমবার রাত থেকে পার্বত্য জেলাগুলোয় যে পরিমাণ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে, তার ফলে নিহতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা আন্দাজ করতে পারছেন না স্বয়ং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। এখনও অনেক লোক নিখোঁজ থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সর্বশষ তথ্য অনুযায়ী রাঙামাটিতে ৯৮ জন, চট্টগ্রামে ২৭ এবং বান্দরবানে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান ৯৮ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাহাড়ধসের এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ১৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাঙামাটিতে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৫০ জনকে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ধসে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এদিকে, আরও পাহাড় ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ পার্বত্য এলাকায় মাইকিং চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানিয়েছেন, গত দুদিন ধরেই লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে চার হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। সতর্কতামূলক তৎপরতা জারি আছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া মঙ্গলবার বলেন, ‘পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১২ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আহতরা পাবেন ১০ হাজার টাকা করে। প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।’

পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর পাহাড়ধসে হতাহত ব্যক্তিদের সমবেদনা জানাতে ও ক্ষয়ক্ষতি দেখতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার রাঙামাটি যাচ্ছে। দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যাবেন।

প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত রবিবার থেকে দেশের দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে চলছে বৃষ্টিপাত। পাহাড়ি ঢলে সোমবার রাতে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটি ও বান্দরবানসহ কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে মাটি সরে গিয়ে তিন জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ে ধস নামে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বৃষ্টির মধ্যেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে গেলেও অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক যান চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে ক্যাম্পের পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপোরাল আজিজ, সৈনিক শাহীন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক মুখপাত্র। এছাড়া আহত ৫ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এরা হচ্ছেন সৈনিক আজমল, মামুন, ফিরোজ, মোজাম্মেল ও সেলিম।

সেনা সদস্য হতাহত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলার সময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট চট্টগ্রামের লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়, ২০১১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়, ২০১২ সালে ২৬-২৭ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে, ২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 7730155416815250787

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item