সৈয়দপুরে সজীব সীডসের সফলতা, স্বল্প বীজ ব্যবহারে কম খরচে বিশেষ পদ্ধতিতে গম চাষে ফলনে রেকর্ড

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

সৈয়দপুরে স্বল্প পরিমাণ বীজে, কম খরচে ও ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক বিশেষ পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক বারি - ২৯, ৩০ ও স্থানীয় জাতের গম চাষে রেকর্ড পরিমাণ ফলন পাওয়া গেছে। “রেইজ্ড বেড ফারো এন্ড টুইন প্লাটেশন” পদ্ধতিতে ওই সব জাতের গম চাষ করে ফলন মিলেছে বিঘা প্রতি প্রায় ১৪ মন। আর স্থানীয় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান “সজীব সীড্স” এর স্বত্ত্বাধিকারী আহসান-উল হক বাবু তাঁর নিজের ২৫ শতক জমিতে সম্পূর্ণ জৈব কৃষি প্রযুক্তিতে ওই গম চাষ করেন। ওই চাষ করা গমের কর্তন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ)  এক মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে আয়োজিত মাঠ দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীজ প্রত্যায়ন এজেন্সী, পরিচালক ( অর্থ ও প্রশাসন), ঢাকা কৃষিবিদ মো. খায়রুল বাশার।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহ্ আলম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন দিনাজপুরের নশিপুরস্থ গম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক কৃষিবিদ ড. নরেশ চন্দ্র দেব বর্মন।
এতে অন্যান্যদের বক্তব্য রাখেন সজীব সীডস্ এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. আহসান - উল হক বাবু, বগুড়ার শিবগঞ্জের সফল কৃষক মো. আনছার আলী, পাবনার ঈশ্বরদীর সফল কৃষক মো. শাহাজাহান আলী বাদশা ও স্থানীয় কৃষক মোজাহিদুল ইসলাম জাহিদ প্রমূখ।
মাঠ দিবসে আরো উপস্থিত ছিলেন রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. আফসার আলী, দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রে মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পরিতোষ কুমার মালাকার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল কবির, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন,  নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো কেরামত আলী, নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) গোলাম মো. ইদ্রিস, নীলফামারী জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা আবু আলা আল মওদুদী, রংপুর জেলা বীজ প্রত্যায়ন কর্মকর্তা মো. মাহ্বুবার রহমান, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা মন্ডল ও অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগমসহ অন্যান্যরা। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সিলেটের এ বি কৃষি প্রকল্পের স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল বাসিত সেলিম।
মাঠ দিবসে কৃষক আহসান-উল-হক বাবুর জমিতে চাষ করা বারি- ২৯, ৩০  ও স্থানীয় জাতের গম কর্তন করে বিঘা প্রতি ১৩ দশমিক ৯৪ মন ফলন পাওয়া গেছে। এ মাঠ দিবসে দেশের বিভিন্ন জেলা  ও উপজেলার সফল কৃষকরা ছাড়াও এলাকার বিপুল সংখ্যক উপস্থিত ছিলেন।   
সজীব সীড্স’র স্বত্ত্বাধিকারী আহসান-উল-হক বাবু জানান, ইন্টারনেটে কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে “রেইজ্ড বেড ফারো এন্ড টুইন প্লাটেশন” পদ্ধতিটি খুঁজে পান তিনি। সেটি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অধ্যয়ন করেন। আর ওই পদ্ধতিতে বিলুপ্ত প্রাপ্ত কাটারি, কালিজিরা ও বালাম জাতের ধান চাষাবাদ করে আশানুরূপ ফলন পান তনি। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী গম চাষাবাদের মনস্থির করেন তিনি। এরপর যশোরের জনৈক আইয়ুব আলীর কাছ থেকে গম বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। প্রথমে তিনি একশ’ ৪ পট সম্পন্ন একটি ট্রেরের মধ্যে প্রতিটি পটে একটি করে গম বীজ বপন করেন। এরপর চারা অঙ্কুরিত হওয়ার পর সারিবদ্ধভাবে জমিতে লাগান। ১২ দিন বয়সী গমের  চারা  ২৫ শতক  নিজের জমিতে লাগান তিনি। গত বছরের ১৭/১৮ নভেম্বর ট্রেযুক্ত বীজতলা থেকে তুলে রেইজ্ড বেডের ওপর সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয় একটি করে চারা। রেইজ্ড বেড এর ফাঁকা জায়গায় সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। বেডের সাইজ প্রস্থে আড়াই ফুট। একটি সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব ১৬ ইঞ্চি। চারা থেকে চারার দূরত্ব ১২ ইঞ্চি। রোপনের সময় রেইজ্ড বেড ওপর একটি করে চারা লাগানো হলেও একটি চারা থেকে সর্বোচ্চ ৯৩ টি কুশি বের হয়। আর সর্বোচ্চ গম শীষ বের হয়েছে ৭২টি। এ প্রদর্শনী প্লটে বায়োগ্যাস স্লারী, নিমের খৈল, কেঁচো কম্পোষ্ট, হাড়ের গুড়া প্রয়োগ করা হয়। এছাড়াও স্বল্প পরিমাণে প্রয়োগ করা হয় জিংক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, ডিএপি, এমওপি এবং ইউরিয়া সার। তবে  কোন রকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি।
সজীব সীড্স’র স্বত্তাধিকারী মো. আহসান-উল-হক বাবু জানান, স্বল্প বীজে কম খরচে গম চাষাবাদ ফিরিয়ে আনতে এবং ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে  “রেইজ্ড বেড ফারো এন্ড টুইন প্লাটেশন”  নতুন এ পদ্ধতিতে গম চাষ করা হয়। এ পদ্ধতির উদ্ভাবক হচ্ছে টি কাটাইমা। ওই জাপানীজ শস্য বিজ্ঞানী ১৯৫১ সালের এই পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন। চাষাবাদের এ পদ্ধতি উদ্ভাবনকালে তিনি ধানের একটি চারা জমিতে লাগানোর পর ৮৪টি কুশি পান। ফলনও মিলে অধিক। ধান ও গম একই অর্থাৎ গ্রাস ফ্যামিলিভূক্ত। তাই গম চাষেও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।  মূলতঃ নতুন এই পদ্ধতিটি তিনি  সাধারণ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। যাতে করে এ অঞ্চলের চাষীরা এ নতুন পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং  গম চাষ করে অধিক ফলনের মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন। তবে তিনি মনে করেন এ পদ্ধতিটি আরো বেশি কার্যকরী করার জন্য কৃষি  গবেষণা ও কৃষি সম্প্রসারণ তথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক  সহযোগিতা প্রয়োজন।   

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 738237729057914470

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item