কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চা চাষে সফলতা এসেছে

মোঃ শামীম হোসেন (বাবু)কিশোরগঞ্জ,নীলফামারী

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রসাশনের পতিত জমিগুলোতে প্রাথমিকভাবে চা চাষে সফলতা এসেছে । চা পাহাড়ী এলাকার ফসল হলেও সমতল ভূমিতে দেখা দিয়েছে চা চাষের ব্যাপক সফলতা । ফলে চা চাষে এলাকার অনেক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  সবুজের সমারোহ কাইজেন টি গার্ডেন দেখার ও নিয়মকানুন জানার জন্য বাগানের কেয়ারটেকারদের সাথে অনেকে কথা বলছেন।  কিশোরগঞ্জ উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষজন প্রতিদিন বাগানের দিকে ছুটছে। চা পাতার সবুজ চাদরে ঢেকে গেছে গোটা উপজেলা পরিষদ চত্বর।কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বর প্রায় ২২ একর জমি নিয়ে অবস্থিত। পতিত জমিগুলো ব্যবহারের লক্ষ্যে পঞ্চগড়ে চা বোর্ডের কর্মরত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে প্রথমে মাটি পরীক্ষা করে দেখা যায় এ এলাকার মাটি চা চাষের উপযোগি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুনর্বাসিত ভিক্ষুক-দরিদ্র মানুষদের জন্য কর্মসংস্থান সৃস্টি ও উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক ভাবে ১ বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার চা চারা রোপন করে চা চাষ করে আশাতিত ফল পায়। চা চারা রোপনের অল্প দিনে চা গাছে নতুন কুড়ি আসতে  শুরু করে। পরবর্তীতে আরো চারা এনে উপজেলা পরিষদের পতিত প্রায় সাড়ে ৪ একর জমিতে চা চাষ  করা হয়। চা চাষ বৃদ্ধির লক্ষে সিনহা কোম্পানীর পতিত জমিতে চা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধকরণের ফলে তারাও তাদের পতিত প্রায় ৯ একর জমিতে চা চাষ শুরু করে। উপজেলার কেশবা গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন পতিত প্রায় ৩ একর জমিতে করা হয়েছে চা চাষ। এছাড়া চাষ করা হয়েছে মাগুড়া ইউনিয়নে তহশিল অফিসের ১ বিঘা ও উপজেলা ভূমি অফিসের ১৫ শতাংশ পতিত জমিতে। চা চাষের সাফল্য দেখে এ এলাকার কৃষকদের বিষ ফসল তামাক চাষের পরিবর্তে চা চাষের দিকে আগ্রহ বেড়েছে।

পঞ্চগড় টি বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, চা একটি অভিজাত ও দীর্ঘজীবি ফসল। চা চারা একবার রোপন করলে আনুমানিক ৭০ বছর  উৎপাদন ক্ষমতা থাকে। বানিজ্যিকভাবে ৫০ বছর পাতা উত্তোলন করা যায়। চা চারা রোপনের ৩ বছর পর থেকে প্রতি বছরে একরে আনুমানিক ২ লক্ষ ৭০ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার পাতা উত্তোলন হয়। খরচ যেয়ে বছর ১ লক্ষ ৮০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা মুনাফা হয়। যা অন্যান্য ফসল থেকে এতো মুনাফা আসে না। চা চারা রোপনের ১ বছর ৬ মাস থেকে চা পাতা উত্তোলন যোগ্য হওয়ায় তা তুলে সনাতন পদ্ধতিতে চা তৈরি করা যায়। কাচাঁ পাতা উত্তোলন করে প্রথমে বাছাই করা হয়। এর কাঁচা পাতা ঢেঁকি দিয়ে পিসিয়ে তা ভাজা হয়। ভাজা চা পাতার গুরাগুলো পরিস্কার করে চা তৈরি করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্র জানায়, স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত চায়ের নাম দেয়া হয়েছে কাইজেন টি। কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অফিসসহ বাজারের দোকানগুলোতে কাইজেন টি বাজারজাত শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষজন তা কিনে খাচ্ছে। এর কদরও দিন দিন বাড়ছে। তাজা পাতার তাজা চায়ের স্বাদে এলাকার মানুষ এ চা দিব্বি কিনছে।
বাংলাদেশ চা গবেষনা ইন্সটিটিউট পঞ্চগড়ে কর্মরত্ব সিনিয়র ফার্ম এসিস্টেন্ট মোঃ জায়েদ ঈমাম সিদ্দিকীর কাছে মুঠোফোনে এ এলাকার চা চাষ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান- এ এলাকার মাটি চা চাষের জন্য খুবেই উপযোগী।
 নর্দান বাংলাদেশ প্রজেক্টের কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত প্রকল্প প্রকৌশলী আবু হেনা মোঃ ময়নুল ইসলাম জানান, পাহড়ী অঞ্চলে যেখানে ৩ বছরে পাতা উত্তোলন শুরু হয়, সেখানে এ এলাকায় ১বছর ৬ মাসে পাতা উত্তোলন হচ্ছে। চলতি বছরে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে ১ লক্ষ্য চা চারা রোপনের জন্য বিতরণ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে।  তিনি আরো জানান- তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে চা চাষে বাংলাদেশ চা বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখ পর্যন্ত ৬ জন তামাক চাষী চা চাষের জন্য নিবন্ধন করেছে বলেও তিনি জানান।
চা চাষের ফলে কি পরির্বতন হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মেহেদী হাসান জানান- চা চাষের ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৫০ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুকের কর্মসংস্থান সৃস্টি হয়েছে। তাছাড়া তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে চা চাষে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন তামাক চাষী চা চাষের অভিমত ব্যক্ত করেছে ও নিবন্ধনও করেছেন।  

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রশিদুল ইসলাম জানান- চা চাষ একদিকে যেমন উপজেলা পরিষদের রাজস্ব বৃদ্ধি করবে অন্যদিকে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে। আমাদের চা চাষে সাফল্য দেখে অনেক কৃষক তামাক চাষের পরিবর্তে চা চাষের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এছাড়া চা চাষে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। চা চাষের ফলে এ উপজেলার আমুল উন্নতি হবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4134975009506012888

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item