নীলফামারীর ফজলুল করিম সরকার আর নেই

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ৫ আগষ্ট॥
জেলা চেম্বারের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা প্রবীন হিতৈষী সংঘের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী নীলফামারী শহরের ডালপট্টি মহল্লার বাসিন্দা  আলহাজ্ব ফজলুল করিম সরকার (৮০) নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)।মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী দুই ছেলে এক মেয়ে ও নাতি নাতনি রেখে গেছেন।
আজ শুক্রবার(৫ আগষ্ট) বাদ জুম্মা জেলা শহরের কেন্দ্রিয় ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পৌর কেন্দ্রিয় কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হয়।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহম্দে, জেলা পরিষদের প্রশাসক এ্যাডঃ মমতাজুল হক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, জেলা চেম্বারের সভাপতি প্রকৌঃ এসএম শফিকুল আলম ডাবলু , নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌঃ আহসান হাবিব লেলিন, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সামচ্ছুজ্জামান জামান, জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, সা্েবক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদন, সিপিবি সভাপতি শ্রীদাম দাস, সাবেক সংসদ সদস্য আহসান আহমেদ, এনকে আলম চৌধুরী, স্বাচিবের জেলা সভাপতি ডাঃ মমতাজুল ইসলাম মিন্টু, ডায়াবেটিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ডাঃ মজিবুল হাসান চৌধুরী শাহিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুর ইসলাম রিন্টু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ আবু সোয়েম,জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যাপক  আজিজুল ইসলাম, ওয়ার্কাসপাটির সভাপতি তপন কুমার রায়, জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সামছুল হক, নীলফামারীর সিনিয়র সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন, তাহমিন হক ববী, মীর মাহমুদুল হাসান আস্তাক, ভুবন রায় নিখিল, হাসান রাব্বী প্রধান, দৈনিক নীফফামারী বার্তার সম্পাদক শীষ রহমান প্রমুখ।

আলহাজ্ব ফজলুল করিম সরকারের জীবনীঃ- ১৯৪০ সালে ১০ই জুন কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম খয়ের জাহান সরকার নীলফামারীর খ্যাতনামা ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা মরহুম মোছাঃ ফাতেমা খাতুন ছিলেন গৃহিনী।
১৯৫০ সালে হলদিবাড়ীতে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধলে তার পিতা তৎকালীন পূর্ব পাকিন্তানে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ১৯৫১ সালে তাদের স্থাবর স¤পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে বর্তমান বসবাসকৃত নীলফামারী শহরের ডাইলপট্টি স্থানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
উল্লেখ্য যে, তাদের পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে আসার পূর্বেই ১৯৫০ সালে তার পিতা ফজলুল করিম সরকারকে নীলফামারী হাইস্কুলে ভর্তি করান। ফজলুল করিম সরকার ১৯৫০ সালে তৎকালীন হাইস্কুলের মুসলিম হোস্টেলে থেকে লেখা-পড়া চালিয়ে যান। ১৯৫৫ সালে উক্ত বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করে রাজশাহী সরকারী কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৫৯ সালে উক্ত কলেজে ¯œাতক উর্ত্তীণ হন। কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৫৭ সালে ২৬শে ফেব্রুয়ারী পিতা খয়ের জাহানের মৃত্যু হলে তিনি বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। সেই সাথে বাবার স্মৃতির রক্ষার্থে  ফজলুল করিম সরকার ১৯৫৭ সালে খয়ের জাহান মেমোরিয়াল চ্যালেঞ্জশীন্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট  প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে নীলফামারী ফুটবল অঙ্গনে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেন। দেশের উল্লেখযোগ্য ফুটবল দলসমূহ উক্ত শীল্ড বিজয়ের প্রত্যাশায় নীলফামারীতে অনুষ্ঠিত খয়ের জাহান মেমোরিয়ালশীন্ড খেলায় অংশ নেয়। এ পর্যন্ত সাত বার উক্ত শীন্ডের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শীল্ডটি বর্তমান  জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
 ফজলুল করিম সরকার ১৯৫৮ সালে নীলফামারী বণিক সমিতির সভাপতি মনোনিত হন। যোগ্যতার বলে তিনি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর এক নাগার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। তিনি ১৯৬১ সালে নীলফামারী টাউন কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬১ সাল থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত নীলফামালী মিল মালিক সমিতির সভাপতি এবং ১৯৮৪ সালে এক বছর নীলফামারী পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে নীলফামারী মহকুমার ১৮দফা দাবী বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হলে উক্ত কমিটির আহবায়ক ও নীলফামারী জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনোনিত হয়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নীলফামারী জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ডায়াবেটিকস হাসপাতালের আজীবন সদস্য। তিনি বাড়াইপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও নীলফামারী বড় বাজার জামে মসজিদ কমিটির  সভাপতির দায়িত্ব ছিলেণ। তিনি ২০০২ সালে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের নীলফামারী জেলার সভাপতি মনোনীত হন।
আলহাজ্ব ফজলুল করিম সরকার ১৯৬২ সালে তৎকালিন রংপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ আবুল ফাত্তাহ্’র কন্যা সাহানারা ফৌজিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যার জনক। জ্যেষ্ঠ পুত্র সানাউল ইমরান বাবু প্রকৌশলী। বর্তমান ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অপর পুত্র মোনাদিল আদনান শুভ ফিনল্যান্ডে এমবিএ করে সেখানে রয়েছে। জ্যোষ্ঠ কন্যা সাবিনা কামরুন নাহার ফোয়ারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমএ করেন। তার বিয়ে হবার পর মরনব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রয়াত হন।, কনিষ্ঠা কন্যা শায়লা নাজমুন নাহার বর্তমানে স্বামী সহ  আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।
ফজলুল করিম সরকার সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, লসএঞ্জেলস্, সানফ্রানসিসকো, নিউইয়র্ক, কানাডাসহ বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন।  ফজলুল করিম সরকার ১৯৯৮ সালে হজ্জ্বব্রত পালন করেন। তিনি এই বৃদ্ধ বয়সেও ছিলেন প্রাণবন্ত। জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন জরুরী মিটিং গুলোতে তার অংশগ্রহন ছিল। ভোরে ফজরের নামাজের পর এই বয়সেও তিনি বাই সাইকেল চালিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতেন। মিস্টিভাষী ও সব সময় সকলের ভালমন্দ জানার চেস্টা করতেন।
নীলফামারীর সকলের পরিচিত মুখ সেই ফজলুল করিম সরকার আজ চলে গেলেন চিরদিনের জন্য পৃথিবী ছেড়ে। সৃস্টিকর্তা তাকে বেহস্ত নসিব করুন।- আমিন  

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7023635155138431886

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item