গরু বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে ডোমারে খালুকে হত্যা করলো নেশাগ্রস্থ যুবক

আবু ফাত্তাহ্ কামাল পাখি,স্টাফ রিপোর্টারঃ
আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী)প্রতিনিধি>>

গরু বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে খালু রশিদ আলীকে(৬৫) শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে নেশাগ্রস্থ যুবক আব্দুস সালাম বাবু(২৮)। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ি গ্রামে। সোমবার রাত আটটায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ  বাবুকে আটক করেছে। হত্যার শিকার রশিদ আলী উক্ত গ্রামের মৃত নছিমুদ্দিনের ছেলে। আর আটককৃত বাবু ডোমার উপজেলা শহরের ছোট রাউতা গ্রামের রশিদুল ইসলাম  সানু মিয়া ও হত্যার শিকার রশিদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা বেগমের ছোট বোন  বুলু বেগমের ছেলে। অভিযোগ মতে বাবু ও তার পিতা সানু ডোমার বাসট্যান্ডের সড়কের ধারে বিস্কুট ও চা দোকানের আড়ালে  অবৈধ ভাবে ফেন্সিডিল বিক্রি করে আসছে। পাশাপাশি  পিতা পুত্র দুইজনেই নেশাগ্রস্থ। ইতো মধ্যে এই পিতা পুত্র মাদক বিক্রির দায়ে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে এবং জেলে ছিল। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা পুনরায় মাদক বিক্রি শুরু করে।
অভিযোগে জানা যায়, হত্যার শিকার রশিদ আলী কোরবানীর ঈদের সময় ডোমারের বোড়াগাড়ী হাটে ৬০ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করে। যা দুই সন্তানের জনক বাবু জানতো। ঈদের পর গত শনিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাবু তার খালু রশিদ আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসে এবং রাত্রী যাপন করে। ছোটবোনের ছেলের স্বভাব চরিত্র ভাল নয় জেনেই পরের দিন রবিবার দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বাবুকে নিয়ে তার  খালা অর্থাৎ রশিদ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা বেগম ডোমারে বাবুদের বাড়িতে যায়। সেখানে বাবু তার খালাকে তাদের বাড়িতে রাত্রী যাপনের জন্য আটকিয়ে রেখে সন্ধ্যার পর বাবু পুনরায় ডোমার থেকে তার খালুর বাড়িতে হরিণচড়া ইউনিয়নের আটিয়াবাড়িতে আসে। এখানে পুনরায় বাবু এসে খালু রশিদ মিয়াকে জানায় তাকে তার পিতা মাতা গালমন্দ করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সরল বিশ্বাসে খালু তাকে নিয়ে এক ঘরে রাত্রী যাপন করে। সোমবার ফজরের নামাজের সময় রশিদ মিয়ার চার ছেলে তার পিতা ও খালাতো ভাই বাবুকে ঘরে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে। এ সময় বাড়ির অদুরে রাস্তারধারে বাবুকে তারা বসে থাকতে দেখে। এসময় বাবু তাদের জানায় খালু মসজিদে ফজলের নামাজ পড়তে গিয়ে এখনো ফিরেনি।  এরপর  সকাল ৭টার দিকে  বাড়ির পেছনে পুকুরে একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। বাড়ির লোকজন ছুটে গিয়ে দেখে তাদের পিতা রশিদের লাশ পুকুরে ভাসছে। সেখান থেকে তারা লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নেয়। বাড়ির সকলে মনে করেছিল পুকুর পাড়ে গিয়ে হয়তো তাদের পিতা  ডুবে মারা গেছে। কিন্তু বাবু ঘটনা স্থল থেকে না পালিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। এদিকে পরিবারের লোকজন ঘটনার দিন বাদ আছর লাশের দাফনের আয়োজন করে। খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আতœীয় স্বজনরা ছুটে আসে। বিকালে জানাজার সময় লাশের নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকলে এলাকাবাসী  লাশের গলায় দাগ ও মুখ নাক ফুলে উঠা দেখে সন্দেহ করলে তারা সেখানে উপস্থিত বাবুকে আটক করে ফেলে। ছেলেকে আটক করা দেখে  বাবুর পিতা রশিদুল ইসলাম সানু জনরোষের হাত থেকে বাঁচতে  দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী জিজ্ঞাসাবাদে  বাবু ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় তার খালুর গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে সে রাতে তার খালুকে নেশা ঢুকিয়ে কে-টু সিগারেট খাইতে দিয়েছিল। খালু সিগারেট খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর ঘরে গরু বিক্রির টাকা খুঁজতে থাকে।  কিন্তু টাকা না পেয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে  ঘুমন্ত খালু কে গামছা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে টেনে হিজড়ে প্রথমে খালুর বাড়ির অদুরে একটি ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। পরে সেখান থেকে খালুর লাশ পুনরায় টেনে এনে খালুর বাড়ির পেছনে পুকুরে  ডুবিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু  সকালে পুকুরে লাশ ভেসে উঠে। বাবু গরু বিক্রির টাকা না পেয়ে খালুকে হত্যার  ঘটনার কথা স্বীকার করলে এলাকাবাসী  পুলিশ কে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ সহ বাবুকে আটক করে থানায় নেয়।
এদিকে হত্যার শিকার রশিদ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ বাবুর খালা শাহিদা বেগমের তিন ছেলে যথাক্রমে সহিদ আলী,তমিজার উদ্দিন ও রশিদুল ইসলাম অভিযোগ করে জানায় এ ঘটনায় তাদের খালু সানু মিয়া তাদের হুমকী দিয়ে বলেছে তার ছেলে বাবুকে  পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার খেসারত একদিন পেতে হবে। তারা এ ঘটনাটি পুলিশ কে জানিয়ে দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের বলেন। 
ডোমার থানার ওসি মোয়াজ্জম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায় এ ঘটনায় হত্যার শিকার রশিদ আলীর বড় স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমের বড় ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার রাতেই ডোমার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে(মামলা নম্বর ৪)। মঙ্গলবার সকালে জেলা মর্গে লাশের ময়না তদন্ত করা হয়।