রংপুরে মহানগর দোকান মালিক সমিতির নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার ব্যবসায়ি মহল

হাজী মারুফ,রংপুর ব্যুরো অফিস:
রংপুরে ব্যবসায়িদের নাম ভাঙিয়ে পকেট কমিটি গঠন পূর্বক সাধারণ কথিত নেতার ছত্রছায়ায় নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র পকেট কমিটি গঠন করা নিয়ে ত্যাগী ব্যবসায়ি নেতাসহ সাধারণ ব্যবসায়িদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় রুপ নিতে পারে বলে সচেতন ব্যবসায়িরা মনে করছেন। 

জানা গেছে, ব্যবসায়িদের ভালমন্দ দেখভাল করার জন্য রংপুর শহরসহ ৮উপজেলা সদর ২টি পৌর এলাকার ১৪৮টি ব্যবসায়ি সংগঠনের ৯৩৬জন সদস্য নিয়ে বিগত ২০১০সালের ১০মার্চ ত্রি-বাষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে রেজওয়ান আলী লিটন সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মিলন সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর তৎকালিন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম নির্বাচনের প্রায় ৩মাস পর নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে ব্যবসায়িদের কল্যাণে র‌্যাফেল ড্র’র নামে ক’য়েক লাখ আয় হলেও তার হিসেব-নিকেশ দেয়া হয়নি। আয়-ব্যয়ের কোন হিসেব না দেয়াকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। নানান টালবাহানা আর বৈতরণীর মধ্যে তাদের ত্রি-বার্ষিক মেয়াদকাল শেষ হয়। মেয়াদ শেষে সমিতির সভাপতি রেজওয়ান আলী লিটন বিগত ২০১৩সালের ২ফেব্রুয়ারি রংপুর পুলিশ কমিউনিটি হলরুমে সাধারণ সভা আহবান করে। ওই পূর্ব ঘোষিত সাধারণ সভা বানচাল করতে নানা ধরণের ফন্দি-ফিকির আঁটেন তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন। প্রশাসন থেকে চাপের মুখে শেষমেস ওই সভা স্থগিত করতে বাধ্য হন রেজওয়ান আলী লিটন। পরে ৬সেপ্টেম্বর রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র মিলনায়তনে দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সভা আহবান করে। ওই সভার এজেন্ডা ছিল ২০১৩-২০১৬ ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সংক্রান্ত। কিন্তু বাঁধ সাধে বিরোধী পক্ষের। ওই সাধারণ সভাটি পন্ড করতে নেয়া হয় নানা ষড়যন্ত্র। চেম্বার কর্তৃপক্ষকে উচ্চ পর্যায় থেকে চাপ প্রয়োগ করে পূর্বের আহবান করা সাধারণ সভা ভুন্ডুল করতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। এতে বিভক্ত হয়ে পড়ে লিটন ও মিলন গ্রুপে। বিশৃংঙ্খলা ও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সভাস্থলে ১৪৪ধারা জারি করে প্রশাসন। অপরদিকে, অবৈধভাবে সমিতির দায়িত্ব পালনের অভিযোগে তৎকালিন কমিটির সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বাদি হয়ে সভাপতি রেজওয়ান আলী লিটনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২১৭/১৩। একক আধিপাত্য বিস্তার ও নিজের এজেন্ডা পূরণ করতে সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ান আলী লিটনকে ডিঙ্গিয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আলতাফ হোসেনকে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে কিছুদিন সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জেলা কমিটির হাল ছেড়ে মহানগর কমিটি গঠন করেন ব্যবসায়ি এ নেতা। এনিয়ে শুরু হয় উভয়ের মধ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব। সে থেকেই রেজওয়ান আলী লিটন সমিতির কার্যক্রম হতে পিছু থাকেন।
রেজাউল ইসলাম মিলন আলহাজ্ব আলতাফ হোসেনকে দিয়ে সমিতির কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন। রংপুরের অভিজাত বিপনী বিতান জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতি, জাহাজ কোম্পানী শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি, জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার দোকান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ জুয়েলার্স মালিক সমিতি রংপুর জেলা শাখা, মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ি সমিতি, কিনিক ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার মালিক সমিতি, ক্রোকারিজ ব্যবসায়ি সমিতি, দেওয়ান বাড়ি ব্যবসায়ি সমিতি, সিটি বাজার দোকান মালিক সমিতি, রেস্তরা দোকান মালিক সমিতি, পাদুকা দোকান মালিক সমিতি, ছালেক মার্কেট দোকান মালিক সমিতি, বই পুস্তক দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, প্রেসকাব দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, গ্রান্ড হোটেল ব্যবসায়ি সমিতি, জামাল মার্কেট দোকান মালিক সমিতি, ছ’মিল মালিক সমিতি, মার্চেন্ট এগ্রিকালচার দোকান মালিক সমিতি, সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ি সমিতি, শাপলা চত্তর দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, স্টেশন বাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, লালবাগ বাজার ব্যবসায়ি সমিতি, টার্মিনাল দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, ধাপ বাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, সিও বাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, মাহিগঞ্জ বাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, সাতমাথা দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, মর্ডাণ মোড় দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি, এছাড়াও এরশাদ মোড় দোকান মালিক সমিতি, মুলাটোল বাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ি সমিতি ছাড়াও বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ব্যবসায়িদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব সংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃত্বে যাওয়ার আগ্রহী হলেও তথাকথিত নেতাদের রোষানলে সে আশা-আকাঙ্খা তাদের ভেস্তে যেতে বসেছে। এরই মধ্যে রংপুর পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ায় পর জেলা কমিটি ছেড়ে মহানগর কমিটির হাল ধরেন। রেজাউল ইসলাম মিলন তরিঘরি করে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রাত্তন পৌর চেয়ারম্যান কাজী মোঃ জুন্নুনকে চেয়ারম্যান এবং নিজে মহাসচিব হয়ে মহানগর দোকান মালিক সমিতির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করার ঘটনায় বেশ আলোচিত-সমালোচিত হন তিনি। ব্যবসায়িরা বলেন, নিজের পদ পাকাপোক্ত করতে জেলা কমিটির গঠনতন্ত্রের কোন তোয়াক্কা না করে রাতারাতি মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। মিলন ও তার অনুসারি ছাড়া কেহই জানেন না জেলা দোকান মালিক সমিতির ব্যানারে থেকে হটাৎ মহানগর সমিতির নামে আরেকটি সংগঠনের আত্ম প্রকাশ হওয়ার বিষয়টি। তার অনুসারি ছাড়াও এবং কমিটিতে রাখা হয়েছে, যারা বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ভুমিকা রাখে এমন ২/৩জন সংগঠকের স্থান হয়েছে ওই কমিটিতে। যাতে ওই সংগঠকেরা মিলনের গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে মুখ না খোলে। বিভিন্ন পদ বন্টন করে দেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক কিংবা মহাসচিবের পদটি কুক্ষিগত করে নিজেই ওই কমিটির নেতা বনে যান। তখন থেকেই রাজ্য দখল করে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণে রেজাউল ইসলাম মিলন ব্যবসায়ি সংগঠনের মহাসচিব ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হওয়ার সুবাদে মার্কেন্টাইল ব্যাংক রংপুর শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারী ধরণের ব্যবসায়িদের ব্যাংক ঋণ গ্রহণে তেমন কোন সহযোগিতা করেননি বলে ভুক্তভোগী ব্যবসায়িরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 
ব্যবসায়ি সংগঠনকে ব্যবহার করে নিজে রাজত্ব কায়েম করলেও নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে নির্বাচন দেন না তিনি। মহানগর কমিটি গঠনের পরই রংপুর জেলা কমিটির হাল ছেড়ে তার অনুসারি আলহাজ্ব আলতাফ হোসেনকে সভাপতি, সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি করেন তিনি। তিন বছর পার হলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত না রাখার ফলে ক্রমান্বয়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটছে না ব্যবসায়ি সংগঠনে। অথচ ছোট-বড় ব্যবসায়ি সংগঠনগুলোতে যথারীতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও শীর্ষ এ সংগঠনে একক রাজতন্ত্র কায়েম করতে কমিটি আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়িরা বলছেন, রেজাউল ইসলাম মিলন তার কয়েকজন অনুসারিকে দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে ১৪৮টি ব্যবসায়ি সংগঠনের আদলে নাম ভাঙিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে আসছেন। নামমাত্র কমিটি গঠন করা নিয়ে ত্যাগী ব্যবসায়ি, নেতাসহ সাধারণ ব্যবসায়িদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় রুপ নিতে পারে এমন আশঙ্কা করছে সচেতন ব্যবসায়িরা। এব্যাপারে নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড় দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মমিন উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, গনতান্তিক পন্থায় নির্বাচন হোক, এতে যেই নির্বাচিত হবে তাদেরকে অবশ্যই ব্যবসায়িরা সাধুবাদ জানাবে। কিন্তু অবৈধভাবে কমিটি গঠন করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। বিষয়টি দুঃখজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে ব্যবসায়ি নেতা ও সেভেন ইলেভেনের প্রোঃ আলতাফ মাহমুদ মোবাইল ফোনে বলেন, রংপুর জেলা কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম আমি, মহানগর কমিটি কোন পদে আছেন কি-না এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে তা জানা নেই আমার মন্তব্য করে ব্যবসায়িদের বৃহৎ সংগঠনে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
রংপুর জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রেজওয়ান আলী লিটন বলেন, গায়ের জোর আর ক্ষমতাসীন দলের পদ ব্যবহার করে ব্যবসায়ি সমিতির ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা যায়, কিন্তু জনসমর্থন সহজেই অর্জন করা যায় না। সিরাজুলের ব্যবসায়িরা বিভিন্নভাবে হয়রানী আর ভোগান্তির কবলে পড়লেও কথিত নেতারা সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না। এখনও যে যেভাবে আমার কাছে আসে, আমি সামর্থনুযায়ী পরামর্শ দিয়ে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছি। অবৈধভাবে জেলা কমিটি আঁকড়ে রেখেছেন দাবি করে লিটন বলেন, সিটি কর্পোরেশন হওয়ার সাথে সাথেই রাতের আঁধারে মিলন মহানগর দোকান মালিক সমিতির নামে কমিটি করে আরেকটি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, এর ভালমন্দ দিক বিচার-বিশ্লেষন করবে ব্যবসায়ি সংগঠকসহ সাধারণ ব্যবসায়িরা। তবে গনতান্ত্রিক পন্থা আজ জিম্মি পড়ে পড়েছে। ব্যবসায়িরা স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। সেজন্যে গনতন্ত্র অটুট রাখতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই। এব্যাপারে বর্তমান সঙ্কট থেকে সমিতিকে রক্ষা করতে সচেতন ব্যবসায়িদের এগিয়ে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
অপরদিকে, মহানগর দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর জেলা দোকান মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, রংপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মোঃ জুন্নুন বলেন, মহানগর কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বছরখানেক কার্যক্রম চালানো অবস্থায় বেশ কয়েকবার মহানগর কমিটির প্রাণ অঙ্গ-সংগঠন। তাদের নিয়ে সাধারণ সভা আহবানের তাগিদ দেয়া হলেও মহাসচিব রেজাউল ইসলাম মিলন কোন কর্ণপাত করেননি। মিলন তার নিজের ইচ্ছেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনিয়ম হওয়ায় নিজের সম্মাান ধরে রাখতে এসবের মধ্যে আর যাই না। তবে মহানগর দোকান মালিক সমিতির সকল অঙ্গ-সংগঠনের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, এটা আমারও চাওয়া। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব বের হয়ে আসুক বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 8292304982008366161

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item