বাবা দিবসে ১১৯ বছর বয়সি রংপুরের নবেল আলীর প্রত্যাশা,আমাদের দেশ একদিন সত্যি সত্যিই সোনার বাংলায় পরিনত হবে

হাজী মারুফ ব্যুরো প্রধান রংপুর ব্যুরো :
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের পূর্ব প্রান্তে তিস্তা নদীর উপত্যাকায় অবস্থিত একটি নিভৃত পল্লী রমাকান্ত। ওই অজোপাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহনকারী মৃত আজিমুদ্দিনের পুত্র মোঃ নবেল আলী বর্তমানে এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রবীন ব্যক্তি। একশ’ উনিশ বছর বয়সে পদার্পণ করেও দিব্বি হাট-বাজার, ক্ষেতখামার চষিয়ে বেড়ান তিনি। গতকাল রোববার বাবা দিবসে প্রবল মানসিক শক্তির অধিকারী নবেল আলী তাঁর নিজ বাড়ির উঠোনো দাঁড়িয়ে দৃঢ়কন্ঠে প্রত্যাশার বাণী উচ্চারণ করলেনÑ “সেদিন আর বেশি দূরে নয়, আমাদের এই দেশ একদিন সত্যি সত্যিই সোনার বাংলায় পরিনত হবে”।
১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে মাতা মৃত নবীয়ন নেছার গর্ভে জন্ম নেন এই প্রবীন কৃতি ব্যক্তিত্ব নবেল আলী। জীবনে রাজনৈতিক, সামাজিক নানান কর্মকান্ডে বিস্তর অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার না পেলেও কখনো থেমে থাকেনি  মানবহিতৈষী এই ব্যক্তির প্রগতির পথে পথচলা। পাশাপাশি জীবনে অনেক উত্থান-পতনও দেখেছেন তিনি। রাজ্যশাসন, ইংরেজ শাসন, বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নবেল আলী মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থেকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতার অবদান রাখতে পেরে গৌরববোধ করেন। তবে এর বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধা পেতে ধর্ণা দেননি কারো কাছে। জীবনে যেসব আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছেন তার সবগুলোই সফল হয়েছে বলে বর্ণনা করেন তিনি। বর্তমান যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তাতে করে দেশ ও জাতির সব অর্জিত সফলতা ব্যর্থতায় পরিনত হবার আশঙ্কা করেন এই গুণী মানুষটি। 
নবেল আলী স্মৃতি রোমন্থন করে দৈনিক প্রথম খবরকে বলেন, ভারতবর্ষে যখন বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন সোচ্চার হচ্ছে, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় সচেতন মানুষজন সংগঠিত হচ্ছেÑ তখন তিনিও সেই আন্দোলনে যোগ দেন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে নির্ভিকভাবে অংশগ্রহন করেন। তিনি কর্মজীবনে আনসার বাহিনীতে চাকরি করেন। কালজয়ী মানব এই নবেল আলী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নেতৃত্ব দেখে মুগ্ধ হয়ে তৎকালিন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তার জীবনে সবচেয়ে আপন ভাবাপন্ন এবং পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচারের সময় তিনি ধাপ আনসার ক্যাম্পে দায়িত্বরত ছিলেন। ৭১’র উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তানী শাসকদের চাপে তাকে ফায়ারিং ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরলে তাঁকে ২৮ মার্চের দিন রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখলে তিনি ব্যারাক থেকে পালিয়ে আসেন। এরপর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় নিবেদিত হন। এ সময় চারদিকে যখন মুক্তিযুদ্ধের দামামা বাজছিল তখন নবেল আলী তার বড় ছেলে লাল মিয়াকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য ভারতে ট্রেনিংয়ে পাঠান। দেশ স্বাধীনতা লাভ করলে নবেল আলী পরে ওই ছেলেকে পুলিশ বাহিনীতে ভর্তি করান। 
সাদা মনের মানুষ নবেল আলী সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা-পড়ার সুযোগ পান। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১১ সন্তানের মধ্যে বর্তমানে ৯ সন্তান জীবিত। স্ত্রী বিয়োগের পর হতে তিনি অবসার সময় কোরআন তেলাওয়াত, বইপড়া ও রাজনৈতিক সংবাদ দেখেন। তাঁর পিতা বেঁচে ছিলেন ১২৫ বছর, মাতা ১১০ বছর। নবেল আলীর দু’ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাইয়ের বয়সও বর্তমানে ১০৮ বছর।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 7504465487702609261

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item