সৈয়দপুরে কোভিড-১৯ এর গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু
তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
গতকাল শনিবার (৭ মার্চ) সারাদেশের মতো নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায়ও গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে টিকা নিতে আগ্রহীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যায় টিকা দেওয়ায় অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে টিকা কেন্দ্রে টিকা নিতে এসে টিকা গ্রহন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।
সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গতকাল উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫টি কেন্দ্রে এবং পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫টি টিকাদান কেন্দ্রে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান করা হয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একটি করে টিকা দান কেন্দ্র খোলা হয়। এর মধ্যে কামারপুকুর ইউনিয়নে কামারপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে হাজারীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঙ্গালাপুর ইউনিয়নে চৌহমুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে পোড়ারহাট সিদ্দিকীয়া আলিম মাদরাসা ও খাতামধূপুর ইউনিয়নে মধুপুর ইউনাইটেড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। আর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে টিকাদান কেন্দ্র ছিল। গণটিকা দান কার্যক্রমের শুরুতেই ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত টিকাদান কেন্দ্রে ৬ শ’ জন করে এবং পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে ২শ’ করে ২০টি কেন্দ্রে সর্বমোট ৬ হাজার মানুষকে টিকাদান করা হয়।
শনিবার সরেজমিনে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা নানা শ্রেণি ও পেশার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষজন টিকা নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে দুইটি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছিল। এ সময় সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে টিকাকার্ড লিখে টিকা প্রদান করা হচ্ছিল। আর এ টিকাদান কার্যক্রম সার্বিক তদারকি করছিলেন উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শ্রী প্রণোবেশ চন্দ্র বাগচীর নেতৃত্বে ওয়ার্ড সদস্যরা। এ সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণোবেশ চন্দ্র বাগচীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সকালে টিকাদান শুরুতেই কিছুটা বিশৃংখলা দেখা দিলে পরবর্তীতে মানুষজন লাইনের দাঁড়িয়ে সুষ্ঠুভাবে টিকা গ্রহন করছেন। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে টিকা কার্ড লিখে টিকা প্রদান করতে কিছুটা সময়ক্ষেপন হচ্ছে। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও একই চিত্র দেখা গেছে।
এর আগে বেলা ১১টায় সৈয়দপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের টিকা দান কেন্দ্র শহরের বিমানবন্দর সড়কের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে গিয়ে দেখা যায় মানুষজন সুষ্ঠুভাবে টিকা গ্রহন করছেন। কিন্তু ওই কেন্দ্রে মাত্র ২ শ’ জনকে টিকা দান করায় অনেকেই এসে টিকা নিতে না পেয়ে ফিরে যান। এ সময় কথা হলে হাতিখানা এলাকার বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম (৪৭) জানান, আজ থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুনে টিকা নিতে এসেছি। কিন্তু টিকা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা তাকে জানায় আজ আর টিকা প্রদান করা হবে না। বরাদ্দকৃত ২শ’ টিকা শেষ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। ফলে টিকা গ্রহণের ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান তিনি। এ কেন্দ্রে টিকা নিতে এসেছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দারুল উলুম মাদরাসা মোড়ের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু বক্কর। তিনি জানান, অনলাইনে আমি টিকার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করেছি। কিন্তু টিকা গ্রহণের ম্যাসেজ এখন পায়নি। তারপরও আজ গণটিকা দেয়া শুরু হয়েছে শুনে টিকা নিতে এসেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা জানান, বরাদ্দকৃত টিকা শেষ হয়ে গেছে। ফলে তিনি টিকা নিতে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। ওই কেন্দ্রে আসা রফিকুল ইসলাম, আবু বক্করের মতো অনেকেই টিকা কেন্দ্রে এসে টিকা গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। সৈয়দপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের ১৫টি টিকা দান কেন্দ্রেও টিকা নিতে আসা মানুষজন টিকা নিতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
এদিকে, গতকাল শনিবার সকাল থেকে সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রমিজ আলম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার, সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান টিকাদান কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন। আর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) ও পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত থেকে গণটিকা দান কার্যক্রম তদারকি করেন। এ গণটিকা দান কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্নের জন্য প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ, আনসার ভিডিপির ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার বলেন, গতকাল গণটিকা কার্যক্রম প্রথম দিনে উপজেলায় ৬ হাজার মানুষকে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান, উপজেলার সর্বত্র মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলার ২০ টি টিকাদান কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।