বিদ্যালয় সংস্কার কাজ না করেই ভুয়া ভাইচারে বিল উত্তোলন


মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার কাজে নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও বরাদ্দের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে কিছু বিদ্যালয়ে নাম মাত্র কাজ করে আবার কিছু বিদ্যালয়ের কাজ না করেই ৩০ শে জুনের আগে ভুয়া বিল ভাউচারে  সমুদ্বয় অর্থ উত্তোলন করে নিয়েছে কর্তপক্ষ। 

বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত কুমার চক্রবর্তি ২০ দিনের মধ্যে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা আক্তারকে সকল বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।  

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ক্ষুদ্র মেরামতসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১৫ টি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ৩০ লাখ, ১৭৫ টি বিদ্যালয়ে স্লিপ বাবদ ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার, ১২১ টি বিদ্যালয়ের রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৪৮ লাখ ৪০ হাজার এবং প্রাকৃতিক দুযোর্গ বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫ হাজার করে মোট ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। 


একটি সুত্র জানায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা স্টিমেট প্রস্তুত করে কাজ শেষে এলজিইডির প্রত্যায়ন নিয়ে বিল ভাইচার তৈরী করে শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিস থেকে বিল পাশ করাতে হয়। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কোন কাজ না করে নিয়ম ঠিক রেখে ৩০ শে জুনের আগেই বিধিবহিভুতভাবে সমুদ্বয় অর্থ উত্তোলন করে নেয়। নীতিমালা অনুযায়ী অব্যশই কাজ শেষে বিল উত্তোলন করতে হবে। 

গত বৃহস্পতিবার পুটিমারী ইউনিয়নের দক্ষিন ভেড়ভেড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ২ লাখ, রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার, স্লিপ বাবদ ৫০ হাজার এবং প্রাকৃতিক দুযোর্গ বাবদ ৫ হাজার সহ মোট ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বিল উত্তোলনের দীর্ঘদিন পেড়িয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোন কাজ করা হয়নি। ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মেত্তাউল ইসলাম মিলন বলেন, বিদ্যালয়ের কোন কাজতো দুরের কথা কত টাকা বরাদ্দ তাও আমি জানিনা। প্রধান শিক্ষক মোজাহারুল ইসলাম বলেন, করোনার কারনে কাজ করতে একটু দেড়ি হচ্ছে। তবে কাজ শুরু করার জন্য রং মিস্ত্রি লাগানো হয়েছে । কাজ শেষ না করে কিভাবে বিল উত্তোলন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখোনো বিল নেইনি। বরাদ্দের টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে রয়েছে। 


বড়ভিটা ঘোনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয় ভবনের ওয়াল ব্যবহার করে গরু রাখার জায়গা নির্মান করেছেন এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি।  এমনকি স্কুলের মুল ফটকের সামনে গরুর গোবর রাখায় নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীরা জানান, স্কুলের নামে এক একর জমি থাকলে বর্তমানে স্কুল ভবনের জায়গাটুকু ছাড়া বাকি জমি প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যালয়টির ক্ষুদ্র মেরামত সহ বিভিন্নখাতে প্রায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

 এসময় বিদ্যালয়টিতে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ চোখে পড়েনি। তবে প্রধান শিক্ষক ছয়ফল ইসলাম ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের বরাদ্দে টাকায় বিদ্যালয়ের বারান্দার ওয়াল নির্মান,গ্রিল স্থাপন,পানির লাইন স্থাপনসহ বাইরের ওয়ালগুলো রং করা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাজেদুর রহমান বলেন, পুরো বরাদ্দের বিষয়ে আমি অবগত ছিলামনা। পরে জানতে পেড়েছি। বিদ্যালয় ভবনের ওয়ালের সাথে গরু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে গরু রাখা হয়েছে সেটা ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন জায়গা। এটা স্কুলের জায়গা নয়। তাঁরপরও আমি গরুরাখার জায়গা সরানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

 এদিকে বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ডুমরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদখানা ইউনিয়নের এক নম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিতাই ইউনিয়নের বাড়ি মধুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাগুড়া ইউনিয়নের খিলালগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ চোখে পড়েনি। 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি বিদ্যালয় মেরামত কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনার কারনে সবগুলো বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ করার আগেই বিল উত্তোলন করলেন কিভাবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ৩০ জুনের আগে বিল উত্তোলন না করলে বরাদ্দ লেপস হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে তাই বিল উত্তোলন করে রেখেছি।  

 এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত চক্রবর্তির সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিদ্যালয় সংস্কার কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি জানতে পেরে আমি তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা আক্তারকে আমার অফিসে ডেকে এনে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। সেই সাথে ২০ দিনের মধ্যে তাকে সমস্ত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া হবে। 


পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 6508688887469020935

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item