'প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় আজ মুই ঘরের মালিক হইছু'॥নতুন ঘর পেলো নীলফামারীর ১০১০ পরিবার


ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী থেকে॥
রাবেয়া খাতুন (৪৫)। ১০ বছর আগে স্বামীর বাড়ী থেকে বিতারিত হয়ে ৫ সন্তানসহ আশ্রয়হীন ভাবে অন্যের বাড়িতে কাটিয়েছেন মানবেতর জীবন। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে সন্তানদের বড় করেছেন। রাবেয়ার হতাশার জীবনে কখনও চিন্তা করতে পারেনি একদিন ঘর ও জমির মালিক হবে। সেই রাবেয়া মুজিববর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঝকঝকে রঙিন সেমিপাকা ঘরের মালিক হলেন। 

রবিবার দুপুরে জমির দলিল ও ঘরের চাবি পেয়ে রাবেয়া খাতুন বলেন, মোড় স্বামীর সাথোত(সাথে) ছারাাছারির পর ৫ সন্তান নিয়া(নিয়ে) কষ্টের জীবন পার করছু(করছি)। কখনও ভাবই না ঘর সহ জমির মালিক হোইম(হবো)। শেখের বেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজই মোক(আমাকে) ঝকঝকে রঙ্গিন পাকা ঘর সহ জমির মালিক বানাইছে। মুই(আমি) আল্লাহ কাছত(কাছে) প্রধানমন্ত্রীর জন্য মেল্লা(অনেক) দোয়া করিম(করবো)।   

তিনি আরো জানান, পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার গ্রামের সায়ের উদ্দিনের সঙ্গে ২৪ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের ১০ বছর পর স্বামী অন্য একজনকে বিয়ে করে ৫ সন্তানসহ তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত করে দেয়। সেখান থেকে নীলফামারী সদর উপজেলার খোকসাবাড়ী ইউনিয়নের রামকলা শাইলবাড়ী গ্রামে এসে বিভিন্নস্থানে গিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের ভরণপোষণ যুগিয়েছিল। 

একই ইউনিয়নের মুশরত গোড়গ্রাম এলাকার প্রয়াত সুধির রায়ের স্ত্রী শুকবালা(৪৮) জানান, দশ বছর আগোত(আগে) স্বামী মারা গেইছে(গেছে)। জমি জমা কিছুই নাই। দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যের জাগাত(জায়গা) আছো(আছি)। কাম(কাজ) করি সংসার চালেবার(চালাতে) নাগে(লাগে)। জমি ঘর পায়া(পেয়ে) মোর(আমার) খিব(খুব) উপকার হইল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামত(নামে) মুই(আমি) পূজা দিম(দিবো)। 

প্রকল্পে ঠাঁই পাওয়া দুকুরী এলাকার যোগেন্দ্র নাথ রায়ের স্ত্রী চম্পা রানী বর্মণী জানান, দুই মেয়ে এক ছেলে আমার। মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে। ছেলে রাজমিস্ত্রি কাজ করে। অন্যের জায়গাত থাকি মেয়ের বিয়া দিয়েছি। ছেলে ঢাকাত কাজ করে, টাকা পাঠায়। এই টাকা দিয়া সংসার চলে। বাড়ি ভিটা কিছুই নাই। শেখ হাসিনা হামাক থাকির জায়গা করি দেইল, এ্যালা একটা ব্যবস্থা হইল হামার। 


মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ শতক জমি ও ঘর হস্তান্তর হলো নীলফামারীতে। আজ রবিবার(২০ জুন/২০২১) দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১ হাজার ১০টি পরিবারের কাছে ঘরের চাবি ও সনদপত্র হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সকালে সারাদেশে একযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর জেলার ৬ উপজেলায় পর্যায়ক্রমে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ঘর ও জমি হস্তান্তর করা হয়। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালী যোগ দেন নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর। 

দুপুরে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে জেলা পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে নীলফামারী সদর উপজেলা প্রশাসন। এতে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী ২০জনের কাছে ঘরের চাবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হস্তান্তর করেন। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলিনা আকতারের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান(বিপিএম,পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) লিজা বেগম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হাফিজুর রশিদ মঞ্জু, নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সুলতান নাজিমুল হক, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দীপক চক্রবর্তী, নারী ভাইস চেয়ারম্যান শান্তনা চক্রবর্তী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান প্রধান প্রমুখ। 


জানা যায়, উদ্বোধনী প্রাঙ্গণে ৩৭টি পরিবারের ঠাঁই হলেও ২০জনের কাছে ঘরের চাবি ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র হস্তান্তর করা হয়। বাকিদের ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই ইউনিয়নে ঘর ও জমি পাচ্ছেন গৃহহীণ ও ভুমিহীন ৭৯পরিবার। অনুষ্ঠানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উদ্যোগে বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করা হয়। 


জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী(মুজিববর্ষ) উপলক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০১০টি গৃহহীন ও ভুমিহীন পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে ১লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে খাস জমিতে ঘর করে দিচ্ছেন দুই শতাংশ জমির উপর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫০টি, ডোমারে ২০০টি, ডিমলায় ১৫০টি, জলঢাকায় ৩০০টি, কিশোরগঞ্জে ১৫০টি ও সৈয়দপুরে ৬০টি রয়েছে। এসব ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। জমির দলিল ও নামজারীসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম স¤পন্ন করে বুঝে দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে। দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমি পাকা ঘরে রয়েছে টয়লেট, রান্না ঘর ও ইউটিলিটি ¯েপস। 

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, ১২৫০টি পরিবারের মধ্যে ১০১০টি পরিবারের কাছে ঘরের চাবি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ২৪০টি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। শেষ হলে সেগুলো তালিকাভুক্তদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছেন তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভুমিহীন ও গৃহহীন মানুষরা কোথায় থাকতো, কিভাবে দিন কাটাতো তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটির আজ সুফল ভোগ করছেন এসব মানুষরা।  

উল্লেখ, প্রথম পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারী জেলায় ৬৩৭টি পরিবারকে পাকা ঘর প্রদান করা হয়। #


পুরোনো সংবাদ

হাইলাইটস 29082723821021115

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item