ছাগল চুরির অপবাদে প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে পৈশাচিক নির্যাতন
মেহেদী হাসান উজ্জ্বল ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছাগল চুরির অপবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আরো দুই কিশোর গত শনিবার (১ মার্চ) থেকে নিখোঁজ রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে, গত শনিবার (১ মে) দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭নং শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড় নামক স্থানে।
এ ঘটনায় রামভদ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন (১৮) ত্রিমোহনী স্লুইচ গেট, রাকিবুল ইসলাম (১৯) ও নিশাতকে (১৪) পূর্ব জাফরপুর গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে গত ১ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় কৌশলে ডেকে রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড় নামক স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের রুপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার (৫০), মো. শাকিব (২৫), মো. শিপন (২৬), রেজাউল (৫৫), আফজার হোসেন (৬০), মো. শুভ (২৪), হৃদয় (২৫) ও নূরনবীসহ (২৬) ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন তিন কিশোরকে গাছের সাথে বেঁধে রড, পাইপ ও লাঠিসোটা দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়গায় পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। চুরির স্বীকারোক্তি নিতে কিশোর তিনজনের পায়ে ইঞ্জেশনের সিঞ্জের সুস পায়ের তালু ফুটিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে প্রকাশ্যে। এই বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণও করেছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক। মারপিট শেষে বাবু মাস্টারসহ তার সহযোগীরা আহত কিশোর তিনজনকে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই তিন কিশোরের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলে পরিবারের লোকজন প্রতিবন্ধী কিশোর রাকিবুল (১৯) ও শামীম হোসেনকে (১৮) চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। একই সাথে নির্যাতনের শিকার নিশাত (১৪) তার নিজ বাড়ীতে অসুস্থ অবস্থায় কাতরাচ্ছে। তবে গ্রামের মাতবরদের নির্যাতনের ভয়ে নিখোঁজ হয়েছে নাঈম (১৪) ও নূর আলম (১৫) নামে দুই কিশোর।
নির্যাতনের শিকার শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদেরকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাগল চুরির অপবাদে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে জীবন বাঁচাতে। কিন্তু আমরা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানি না। পরে তারা পাশের কলাবাগানে নিয়ে গলায় চাকু ধরে পায়ে সুই দিয়ে খোদাতে থাকে।এবিষয়ে রাকিবুলের বাবা মোমিনুল ইসলাম বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক প্রতিবন্ধী ও আমার ছেলেসহ তিনজনকে ছাগল চোর সাজিয়ে বর্বর নির্যাতন চালায় বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন। ছেলেকে ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে জেনে ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মারপিট করা হয়েছে।
নিখোঁজ নাইমের মা শাহানুর বানু বলেন, বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন গত শনিবার (১ মে) মিথ্যা ছাগল চুরির অপবাদে এক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে মারপিট করেছে। এ ঘটনার পর থেকে আমার ছেলে নাইম নিখোঁজ রয়েছে। আমার ছেলের কিছু হলে এর জন্য বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন দায়ী থাকবে।
অপরদিকে মারপিটের ঘটনার পর ওই রাতেই গ্রাম্য শালিস বসে গ্রামের আমিন ড্রাইভারের খোলানে। সেখানে নিখোঁজ দুই কিশোরকে তিনদিনের মধ্যে হাজির হওয়ার করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেন শালিসের মাতবররা। হাজির করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। শালিস শেষে ওই রাতেই মাতবরদের নির্দেশে আহত নিশাদের নানীর একটি গাভী এবং নিখোঁজ নূর আলমের বাড়ীর থেকে একটি চার্জার রিকশাভ্যান নিয়ে যায় মাতবরের লোকজন।
ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, তার নির্দেশে বাদল মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা দুই কিশোরকে নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার বলেন, মারপিট করা ভুল হয়ে গেছে। আমি সার্ভিস করি আমার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফখরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।