রাষ্ট্র পরিচালনায় সব কিছুর ভিত তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু : প্রধানমন্ত্রী


 অনলাইন ডেস্ক



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি প্রথম ক্ষমতায় এসে দেখলাম, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সব কিছুর ভিত তৈরি করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে, দেশের আইন কী হবে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, গরিবের সহায়তা করাসহ সব বিষয়ে তিনি কাজ করে গেছেন।

আজ রবিবার সকালে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এ আলোচনার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন ‘গণভবন’ থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যাগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সীমানা নির্ধারণ ও সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বঙ্গবন্ধু কাজ করেছেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, কোনো রিজার্ভ নেই; সেখান থেকে দেশকে নিয়ে তিনি যেভাবে এগিয়ে গেছেন, তা আমাদের জন্য বিস্ময়। তিনি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশসহ সব কিছুর ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন। জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথসহ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সব গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সদস্য করে গেছেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এতকিছু করার পর কিছু কিছু লোক লেখে, কোনো উন্নয়নই নাকি হয়নি। কেন? কী উদ্দেশে তারা এগুলো বলে। অনেকে গণতন্ত্রের কথা বলে। মার্শাল ল দিয়ে কখনও গণতন্ত্র হয় না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে হত্যা করেছেন। অনেকের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছেন, আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। যারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, এমন সেনা অফিসারদের হত্যা করেছেন। চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। জিয়ার সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একেক রাতে ৮-১০ জন করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, মানুষকে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন-এটাই কি তার অপরাধ ছিল? পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল, সে রাষ্ট্রটি নির্মাণের প্রতিও তার অবদান ছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছিলেন। সে সময় তাদের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই দেখা গেছে, বাঙালি শোষিত-নির্যাতিত-বঞ্চিত। বাংলাদেশের উপার্জিত অর্থ দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের মরুভূমিতে ফুল ফোটানো হচ্ছে। আর আমাদের দেশের মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র-বঞ্চিত-শোষিত থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। যে সংগ্রাম ১৯৪৮ সালে শুরু হয়। সে সময় আমাদের মাতৃভাষায় কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে তখনকার তরুণ ছাত্র শেখ মুজিব মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন। সেই সংগ্রাম শুরু করতে গিয়ে ১১ মার্চ ধর্মঘটের ডাক দিলেন। সেখানেও তাকে কারাবরণ করতে হয়। এইভাবে আন্দোলন যখন শুরু...সেই ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে নিয়ে ধাপে ধাপে একটি জাতিকে তিনি প্রস্তুত করলেন স্বাধীনতার চেতনায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আঘাত এসেছে। সে সময় যারা পাকিস্তানি শাসকদের তোষামোদি করতে পেরেছেন, চাটুকারিতা করতে পেরেছেন তাদের তারা এ পূর্ববঙ্গে রেখেছেন। যখনই গণমানুষের নেতা নির্বাচিত হয়েছে, সেই নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় শাসন এখানে চালনা করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালে একই ঘটনা ঘটেছে। ’৫৪ সালে তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল কিন্তু মার্শাল ল দিয়ে সকল ক্ষমতা কেড়ে হয়েছিল। সেদিনও সেনাপ্রধান আইয়ুব খান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় গদি দখল করেছিল এবং এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

একটানা বাবাকে দুই বছর কাছে না পেয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জীবনে আমরা একটানা দুই বছর বাবাকে কাছে পাইনি। যদি হিসাব করে দেখি একটা বছর বাদ গেলে তার পরের বছরই তিনি কারাগারে। ঘরে না যত দেখা হয়েছে তার চেয়ে বেশি জেলগেটে দেখা করতে হয়েছে। তিনি তার জীবনে এত ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন কেন? বাংলাদেশের জনগণের জন্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট আরেকটি কারবালার ঘটনা ঘটেছিল। কারবালায় যেভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, তেমনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। কারবালার হত্যাকাণ্ডেও নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট নারী-শিশুরাও রক্ষা পায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আছে বলেই দেশ পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, এই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন এলো করোনাভাইরাস। বাংলাদেশ শুধু নয়, সারাবিশ্বের অর্থনীতি আজ স্থবির। তার পরও আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। আমাদের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে পিছিয়ে না পড়ে, এ জন্য আমরা প্যাকেজ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, সারের দাম কমানো হয়েছে। আমাদের সব সহযোগী সংগঠন ধান কেটে কৃষকদের ঘরে তুলে দিয়েছে। করোনাভাইরাসে অন্যদেশে হাহাকার হলেও আমাদের দেশে তা নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরে চলতে হবে। আমাদের লক্ষ্য মৃত্যু হার কমিয়ে আনা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, আনসার সবাই করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 2484094723822138606

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item