ধর্ষক পশুর চেয়েও অধম : প্রধানমন্ত্রী


অনলাইন ডেস্ক


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন এখন বিশ্বব্যাপী সমস্যা। যারা নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন করে, তারা পশুর চেয়েও অধম। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণ রোধে পুরুষদেরও সোচ্চার হতে হবে, পাশাপাশি সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

 নারীরা সচেতন হয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে নারীরা নির্যাতনের শিকার হলে তা লোকলজ্জার ভয়ে বলার সাহস পেত না। মামলা করতে চাইত না। আমরা এ পরিস্থিতি থেকে নারীদের বের করে আনার পদক্ষেপ নিয়েছি। দোষীদের যথাযথ শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যার কারণে নারীরা এখন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সাহস করছে, মামলা করছে।
তিনি বলেন, নারীরা যত শিক্ষিত হবে সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে। একজন নারী যদি কাজ করে কামাই-রোজগার করেন, তা হলে সংসারে তার সম্মান বাড়ে। পাশাপাশি সংসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব বীর নারীসহ দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনদের এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নারী জাগরণের অগ্রদূতদের, যাদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠার বিনিময়ে নারীর সমঅধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল হয়েছে, আমি তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে নারীদের সম্পৃক্ত করেছিলেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সব কর্মকাণ্ডে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগই এক মাত্র সংগঠন যেখান বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা। নারী যত স্বাবলম্বী হবে একটা সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে নারীদের ওপর বর্বর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নারীদের ওপর নির্মম নির্যাতন করেছিল। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছিল স্বাধীনতার দোসররা। তারা হানাদারদের হাতে মেয়েদের তুলে দিতেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে নির্যাতিত মেয়েদের উদ্ধার করা হয়। তখন জাতির পিতা নারীদের পুনর্বাসনের জন্য বোর্ড গঠন করেছিলেন। নির্যাতিত নারীদের সম্মাননা দিয়েছিলেন, বীরঙ্গনা উপাধীর মাধ্যমে। তখন অনেক বাবাই নির্যাতিত মেয়েকে ফেরত নেয়নি। সে সময় জাতির পিতা তাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার মা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। অনেক বাবাই মেয়েকে পরিচয় না দিলে বিয়ের সময় কাবিননামায় জাতির পিতা নিজের নাম লিখে তাদের বিয়ে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতির পিতা সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটার ব্যবস্থা করেছিলেন। সব ক্ষেত্রে যেন মেয়েরা অধিকার পায় তার ব্যবস্থা করেছিলেন। সে সময় বিচার বিভাগে নারীকে নিয়োগ দেওয়া হতো না। জাতির পিতা আইন করে নারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন। সংবিধানে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করে ছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে নারীদের জন্য বিভিন্ন কাজ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকারে এসে দেখলাম অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের অবস্থান নেই। আমি তখন বিভিন্ন বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করি। আমরা বাবার নামের পাশে মায়ের নামকেও পরিচয়ে যুক্ত করি। এখন প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মেয়েদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। খেলাধুলায় নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছিল। নারীরা আজ খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বয়ে আনছে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে নারী বিচারক ছিলেন না। ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করে নারী বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিগত ১১ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীকে সহযাত্রী করা হয়েছে। নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’, ‘নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫’, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’, ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩’ সহ ‘ডিএনএ আইন’, ‘যৌতুক নিরোধ আইন’, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ ও ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা’।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি সমস্যা এখন সারা বিশ্বব্যাপী, করোনাভাইরাস। আমরা কিন্তু সারাক্ষণ মনিটর করছি। কোথাও যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রত্যেকে যদি এ ব্যাপারে একটু সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন এবং সেভাবে মেনে চলতে পারেন ইনশাল্লাহ এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে যথেষ্ট আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা তা পারব। কাজেই এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আমি বলব সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে। এ ছাড়া প্রতিদিনই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।
করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, এই করোনাভাইরাসের কারণে অনেক দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 783530463076227080

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item