ডোমারে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন

আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),স্টাফ রিপোর্টার-
নীলফামারীর ডোমারে বিজয় দিবসের সরকারী অনুষ্ঠান বর্জণ করেছে মুক্তিযোদ্ধাসহ তাঁদের সন্তানরা। দিবসটি উপলক্ষে সোবার উপজেলা পরিষদ মাঠে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচির।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ অংশ নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে রাজাকার পুত্রের অভিযোগ তুলে ওই অনুষ্ঠান বর্জন করে ফিরে যান তারা।
এবিষয়ে ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. নুরননবী বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের বাবা শওকত আলী ছিলেন রাজাকার সদস্য। তিনি উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পিস কমিটির সভাপতি ছিলেন। এলাকার কুখ্যাত রাজাকার সামছুল হক টগরার ঘনিষ্ঠ সহচর থেকে তোফায়েলের বাবা যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে মুক্তিকামী মানুষের সম্পদ লুটপাটে সহযোগিতা করেন।
তিনি বলেন,‘তোফায়েল আহমেদ ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর হত্যার আত্মস্বীকৃত খুনি ফ্রিডম পার্টির উপজেলার সমম্বয়কারী ছিলেন। ১৯৯২ সালে ডোমার শহরে দিবালোকে চয়ন নামে এক যুবককে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকায় মামলার আসামী হয়েছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের অবজ্ঞা করেন। দিন বদলের পালায় এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেন। অনুপ্রবেশের পর প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি দখল করে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকার ইমেজের ওপর ভর করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা বিদ্বেষী চেহারা পরিস্কার হয়ে উঠে।
তিনি বলেন,‘তাঁর চেম্বারে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশ করতে দেয়না। তার ওই বিদ্বেষী দাম্ভিকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই রাজাকারের পুত্র ও ফ্রিডম পার্টির নেতা আজ বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের উপজেলা চেয়ারম্যান পদকে পুঁজি করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে এটি আমরা মেনে নিতে পারিনি।’ একারণে সরকারী ওই অনুষ্ঠান বর্জণ করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনাতনে বিজয় দিবস পালন করেছেন বলে জানান এসময়।
ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অপর সাবেক কমান্ডার আব্দুল জব্বার অভিযোগ করে বলেন,‘তোফায়েল একজন রাজাকার পুত্র। ফ্রিডমপাটির নেতা ওই তোফায়েলকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
ডোমার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহবায়ক আল-আমিন রহমান বলেন.‘ তোফায়েল আহমেদ সব সময় ডোমারের মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের অবজ্ঞা করেন। তিনি কোন মুক্তিযোদ্ধাকেই মুল্যায়ন করেননা।’
ডোমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিলুর ইসলাম মঞ্জু বলেন,‘১৯৭১ সালে আমার চাচা আব্দুর রউফ ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সদস্য। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য পাক সেনারা চাচাসহ আমাদের বাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। সেটিতে পাক সেনাদের সহযোগিতা করেিেছলেন তোফায়েলের বাবা, যা আমি প্রত্যক্ষ দেখেছি। আমাদের বাড়ি পোড়ানোর পর পাক সেনাদের ডোমারের সুস্বাদু সন্দেশ সরবরাহ করেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অংশটুকু বর্জন করেছেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। ডোমার উপজেলা আওয়া লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে তারা একটি পক্ষ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ তুলছেন। সকালে মুক্তিযোদ্ধাসহ আমরা স্থানীয় স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করি। এ ছাড়া কুচকাওয়াজ মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। সরকারী প্রজ্ঞাপনের আলোকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে ডোমার উপজেলার বিজয় দিবসের সরকারী অনুষ্ঠানে আমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। এ সময় বাহিরে কি হয়েছে আমার জানা নেই। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বর্জন করেছে কিনা আমি সেটিও জানিনা।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6320294492800537058

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item