কিশোরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে ঘর পেয়েছে ৬ শ’৯০ পুনর্বাসিত ভিক্ষুক

মোঃ শামীম হোসেন (বাবু)কিশোরগঞ্জ,নীলফামারীঃ
  নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিন পুষনা গ্রামে বাড়ি মোজোতোনের । সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ছেলে মেয়েকে নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করতে থাকেন। সংসারে অন্ধকার নেমে আসে তার । জীবন বাঁচাতে তিনি কোন উপায়ন্তর না পেয়ে বেঁচে নেন ভিক্ষার পেশা।
 উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৫ জুলাই কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে  এক মানবেতর সমাবেশের মাধ্যমে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষনা করা হয়।  ঘোষনা করে  ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্চ যখন হাতে নেয়া হয় তখন মোজোতোনকে  ভিক্ষকের তালিকায় এনে দেয়া হয় ক্ষুদ্র ব্যবসার উপকরণ। স্বল্প পুজি নিয়ে মোজোতোন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। ক্ষুদ্র মুদির ব্যবসার লাভ ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হতে ঋণ নিয়ে ছেলেকে ধরে দিয়েছে মুরগীর ব্যবসা। নিজের ও ছেলের ব্যবসার লাভ দিয়ে আজ তারা স্বাবলম্বী মানুষ  । তাছাড়াও  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়ে মোজোতোনের চোখে মুখে এখন এগিয়ে যাবার স্বপ্ন। মোজোতোনের মত কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৬শ’ ৯০ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে ঘর পেয়েছেন। এদের সকলের মুখে এখন অনাবিল হাসি।
একসময় যাদের পেশা ছিল মানুষের দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করা, তারা পুনর্বাসিত হয়ে এক একজন উন্নয়ন কর্মী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এরকম উন্নয়নকর্মীর সংখ্যা এখন ৯ শ’ ৭৯ জন । এরা সবাই এখন স্বাবলম্বী।  একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ৯ শ’ ৫১ জনকে সদস্য করে ঋণের মাধ্যমে করা হয়েছে কর্মমুখী। তাদের বর্তমান সঞ্চয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। তালিকাভূক্ত ৯ শ’ ৭৯ জন ভিক্ষুককে  পুনর্বাসনের আওতায় এনে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়। এছাড়া তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টুনীর আওতায়ও আনা হয়। দেয়া হয় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হয়েছে। মানুষের দ্বারে হাত পেতে খাওয়া মানুষগুলো কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি এক একজন উন্নয়ন কর্মীতে রুপান্তর হয়েছে। পুনর্বাসিতদের মধ্যে ৯৫১ জনকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্য করে দেয়া হয়েছে ঋণ। ঋণের টাকা দিয়ে গরু, ছাগল ও ব্যবসা করে আজ তারা স্বাবলম্বী। তাদের একাউন্টে বর্তমানে নিজস্ব সঞ্চয় ৪৬ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮শ’ টাকা , কল্যাণ অনুদান ৪৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮শ’ , আবর্তক তহবিল ৪৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৬ শ’ ২৩ টাকাসহ মোট তহবিল ১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬১ হাজার ২ শ’ ২৩ টাকা । এছাড়া ২৯ জন পুনর্বাসিতকে দেয়া হয়েছে ৫ শতাংশ করে খাস জমি। সৃজিত চা বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৩০ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুকের। কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুনর্বাসিতদের সাফল্য কথা শুনে সরেজমিনে সাফল্য চিত্র দেখার জন্য আসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি তাদের পুনর্বাসনের কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি পুনর্বাসিতদের নিজস্ব জমিতে ঘর নিমার্ণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করার আশ্বাস দেন। এর প্রেক্ষিতে  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম পর্যায় ১০ জন পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পুনর্বাসিত ১০ জনের ঘর নির্মাণ কাজ প্লান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের একটি দল তা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩ দফায় আরো ২শ’ ৩২ জনের ঘর নিমার্ণের জন্য ঘর প্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করেন। ঘর নির্মাণের আগে নীলফামারী জেলা প্রশাসক পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণ দ্রুত ও সফলভাবে কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব, উদ্যোক্তা, একটি বাড়ি একটি খামারের মাঠ সহকারী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন । বরাদ্দ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ঘর নিমার্ণ কাজ শুরু করেন। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে  উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ঘর নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৪শ’ ৪৮ জন পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণের বরাদ্দ সাপেক্ষে নির্মাণ শেষ হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়- প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে  আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর পেয়ে পুনর্বাসিতরা খুবই খুশী ও মাথা গোজার ঠাঁই পেয়েছেন বলে পুনর্বাসিতরা জানান। বাহাগিলী ইউনিয়নের রাহেলা জানান- কি যে কষ্ট করি আছনু। ঘর প্যায়া আর কষ্ট করির নাগে না। চাঁদখানা ইউনিয়নের কাল্টি জানান-সরকার থাকি ঘর পাওয়ায় মোক আর কষ্ট করির নাগবে না। গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের মন্নু বেগম জানান- আল্লাহ এবার হামার প্যাকে ঘুরে দেখছে। থাকার একটা ঘর হইছে। রাহেলা, কাল্টি, মন্নু বেগমের মত ৬ শ’ ৯০ জন পুনর্বাসিত ঘর পাওয়ায় তাদের দুঃখ-দুর্দশার দিন শেষ হয়েছে।  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ এর “যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ” প্রকল্প হতে এসকল পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
 এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান-  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ এর “যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ” প্রকল্প হতে ৬ শ’ ৯০ জন পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মেহেদী হাসান জানান- উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে । পুনর্বাসিতরা ঘর পাওয়ায় তাদের সামাজিকভাবে মর্যাদা বেড়েছে। পুনর্বাসিতরা হয়েছে স্বাবলম্বী।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 8007932695430438774

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item