অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন : ৫ জঙ্গি নিহত

ডেস্কঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে নারীসহ পাঁচ জঙ্গির নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টা অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে। গত বুধবার বিকাল ৩টা থেকে রাতভর গোলাগুলির পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াটের ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ সদস্যরা।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুল ইসলাম বলেন, সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার ৫ নম্বর প্রেমতলা ওয়ার্ডে ‘ছায়ানীড়’ নামে একটি দ্বিতল ভবনে এ ঘটনা ঘটে। পাশের একটি বাড়ির ছাদ হয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে জঙ্গিরা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে বড় ধরনের আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জঙ্গির লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, এদের মধ্যে দুজনের শরীরে ছিল সুইসাইড ভেস্ট। বিস্ফোরণে তাদের দেহগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। অন্যরা পুলিশের গুলিতে মারা যান। অভিযানে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে তিন পুলিশ সদস্য ও গ্রিল কাটতে গিয়ে ফায়ার ব্রিগেডের এক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। অভিযান প্রাথমিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে কাজ করছিলেন।

ডিআইজি বলেন, জঙ্গিরা ওই ভবনের আটটি ইউনিটের একটিতে আস্তানা গড়ে ছিল। সেখানে প্রচুর বিস্ফোরক রয়েছে। এছাড়া ছাদেও প্রচুর বোমার মজুদ দেখা গেছে। বাকি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সারা রাত আতঙ্কের মধ্যে ভেতরে আটকে থাকতে হয়। সকালে জানালার গ্রিল কেটে নারী-শিশুসহ ২০ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে, নিহত জঙ্গিরা নব্য জেএমবির সদস্য ছিলেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশপাশে বড় বড় উন্নয়ন কাজ চলছে। সেখানে অনেক বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। হয়তো তাদের টার্গেট করেই এখানে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক মজুদ করা হয়েছিল।

কয়েকশ মিটার ব্যবধানে জোড়া আস্তানা : পৌর এলাকার নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় এক বাড়িওয়ালার কাছ থেকে খবর পেয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়। প্রথমেই সাধন কুটির থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ জসিম ও আর্জিনা নামে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকশ মিটার দূরে প্রেমতলায় আরেক জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পান পুলিশ কর্মকর্তারা। বিকাল ৪টার পর পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযানে গিয়ে শুরুতেই হামলার মুখে পড়েন।

ছায়নীড়ের দোতলা থেকে ছোড়া একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে পায়ে জখম হন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক। পরে ওসি ইফতেখার হাসানের নেতৃত্বে আরেকটি দল গিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরই মধ্যে ওই বাড়ি থেকে জঙ্গিরা দফায় দফায় গ্রেনেড ছুড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম পুলিশের সোয়াট সদস্যরা ওই বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেন। রাত ৯টার দিকে সেখানে হাজির হয় সাঁজোয়া যান।

অভিযানের প্রস্তুতি চলার মধ্যেই ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াট ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এবং সদর দফতরের ‘এলআইসি’ সদস্যরা পৌঁছান। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেনও ওই দলের সঙ্গে সীতাকুণ্ডে যান, যিনি এর আগে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (উত্তর) মসিউদ্দোল্লাহ রেজা জানান, ঢাকা থেকে পুলিশের দলটি পৌঁছার পর চূড়ান্ত অভিযানের সিদ্বান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ওই ভবনে আটকাপড়া পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তারা বাইরে আসতে চাইলেও নিরাপত্তার স্বার্থে দরজা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করতে বলা হয়।

‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন : আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’। পুলিশ বাইরে থেকে গুলি চালালে জঙ্গিরা একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় সাত থেকে আট মিনিট ধরে টানা গুলির পাশাপাশি সাত-আটটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান দায়িত্বে নিয়োজিত সংবাদকর্মীরা। এক পর্যায়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কিছুক্ষণ পর পুলিশের ঘেরাওয়ের ভেতর থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই সোয়াট সদস্যকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

অভিযান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি সফিকুল বলেন, চূড়ান্ত অভিযান শুরুর পর পাশের একটি ভবনের দোতলা থেকে সোয়াট সদস্যারা ছায়ানীড়ের ছাদে যান। এ সময় ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনিতে বিস্ফোরকের ভেস্ট পরা দুজন জঙ্গি ছাদে এসে বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছে দেখে সোয়াট সদস্যরা গুলি করে। এতে এক জঙ্গি মাটিতে পড়ে গেলেও অন্যজন বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়।

সফিকুল জানান, নিহত ৫ জঙ্গির মধ্যে দুজনের শরীরে সুইসাইড ভেস্ট ছিল। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ছানোয়ার হোসেন বলেন, আত্মঘাতী বিস্ফোরণে যারা নিহত হয়েছেন তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, চেনার উপায় নেই।

সফিকুল বলেন, আরেক আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি দম্পতিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে বেশ কিছুদিন পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা না গেলেও সম্প্রতি কুমিল্লায় বাসে তল্লাশিকালে বোমা ছোড়ার পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ৭ মার্চ কুমিল্লায় দুই জঙ্গিকে আটকের পর তাদের একজনকে নিয়ে মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ২৯টি হাতবোমা, নয়টি চাপাতি, ২৮০ প্যাকেট বিয়ারিংয়ের বল ও ৪০টি বিস্ফোরক জেল উদ্ধার করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ দেওয়ার নির্দেশনার কথা জানান পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 2078144976784164348

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item