জলঢাকায় পাটের গুদামে অগ্নিকান্ড নিয়ে যত ঘটনা


বিশেষ প্রতিনিধি ১০ মার্চ॥   পাওনাদার ও ব্যাংক ঋণের  চাপ সামলাতে
এবং বীমার টাকার ফায়দা হাসিলে নীলফামারীর জলঢাকা শহরের একটি পাটের গুদামে অগ্নিকান্ড নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।  অগ্নিকান্ডে পাটের গুদাম ছাড়াও  একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনটি ঘর, ঘরেরসঙ্গে লাগোয়া একটি মুদি দোকান পুড়ে ছাই হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) গভীর রাতে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
পাটের গুদাম মালিক ঘটনাটিকে বিদ্যুতের সর্ট সার্কিটে অগ্নিকান্ড হিসেবে দাবি করলেও এলাকাবাসী  দমকলবাহিনী ও থানা পুলিশ তা মনে করছে না।
অপরদিকে মালিকপক্ষ নিজেই আগুন দিয়েছে এমন কথায় সেখানে আজ শুক্রবার (১০ মার্চ) পাট গুদামের মালিকের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ্য  উক্ত পরিবারের উপর হামলা চালানো হয়।
সুত্র মতে, ঘটনার দিন গভীর রাত পর্যন্ত পাটগুদামের ভেতর বেশ কিছু লোক অবস্থান করছিল। তারা গুদাম হতে বের হয়ে যায় তালা লাগিয়ে। এরপর অগ্নিকান্ডের সৃস্টি হয়।
এলাকাবাসী জানায়, ওই রাতের পৌনে দুইটার দিকে কদমতলী গ্রামের মৃত. কফিল উদ্দিনের ছেলে রওশন আলীর পাট গুদামে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই পাট গুদামের পাশে থাকা ইন্তাজুল ইসলামের বাড়ির দুটি শয়ন কক্ষ একটি রান্নাঘর ও বাড়ি লাগোয়া একটি মুদি দোকান পুড়ে ছাই হয়। খবর পেয়ে জলঢাকা ও নীলফামারী দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় চার ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে ওই আগুন নেভানোর সময় উত্তেজিত কিছু লোকজনের হাতে জলঢাকা দমকল বাহিনীর সদস্যরা লাঞ্চিত হন।
আজ শুক্রবার পাট গুদামের মালিক রওশন আলীকে সাংবাদিকরা খুঁজে পায়নি। তবে তার ছেলে আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, গুদাম থেকে প্রায় একশ গজ দূরে আমাদের বাড়ি। রাত পৌনে দুইটার দিকে এলাকাবাসীর চিৎকারে এসে দেখি আমাদের পাটের গুদামে আগুন জ্বলছে। এসময় দমকল বাহিনীকে একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে লোক পাঠিয়ে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা সময়মত ঘটনাস্থলে না আসায় উত্তেজিত এলাকাবাসী তাদের ওপর চড়াও হয়। পরে নীলফামারী দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই গুদামের পাটের বিপরীতে তাদের ৩৭ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ এবং প্রায় ২৫ লাখ টাকার বীমা করা আছে বলে জানান তিনি।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ্য বাড়ির মালিক ইন্তাজুল ইসলামের ছেলে শফিউল আলম বলেন, আমি রাত একটার দিকে দোকান বন্ধ করে জলঢাকা বাজারে যাই। আগুনের খবর শুনে ছুটে এসে দেখি পাটের গুদামে ও আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলছে।
ইন্তাজুল ইসলামের অপর ছেলে আবু তালেব অভিযোগ করে বলেন,‘পাটের গুদামের মালিক তারা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বাকিতে পাট কিনে টাকা পরিশোধ করেন নি। পাওনাদারেরা তাকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তার উপর রয়েছে ব্যাংক ঋণ। আজ শুক্রবার কয়েকজনের পাওয়া টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। পাওনাদারের হাত থেকে রক্ষার জন্য তারা নিজেরা ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আবু তালেব অভিযোগ করেন।  এমন অভিযোগ করলে পাট গুদামের মালিকের লোকজন তারা গুদাম আমাদের ওপরও চড়াও হয়ে হামলা চালায়। আবু তালেব বলেন,‘এখন দেখা যাচ্ছে যারা ঋণ করেন যাদের কাছে মানুষজন টাকা পায় তাদের আশে পাশে বাড়ি করে থাকাও বিপদজনক।’ তাদের কারনে আমাদের বাড়ি জ্বলে গেলো। ক্ষতি হলো ৫ লাখ টাকা। ক্ষুদ্র ব্যবসা করে এখন পুনরায় দাঁড় হওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন। কে দেবে এই ক্ষতিপুরন আমাদের।
এদিকে গুদাম মালিক রওশন আলীর ছেলে আব্দুর রহিম আজ শুক্রবার সকালে দুই পক্ষের বাক বিতন্ডার কথা স্বীকার করলেও সেটি পারিবারিক বিষয় বলে দাবি করেন।
জলঢাকা দমকল বাহিনীর ইনচার্জ মমতাজুল ইসলাম বলেন, রাত একটা ৫৯ মিনিটে আমি খবর পেয়ে নীলফামারী ও ডোমার দমকল বাহিনীকে খবর দিয়ে দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে আগুন নেভানোর সময় কিছু লোক আমাদের পাম্পগাড়ীর মেশিনের তার ছিড়ে দিয়ে দুটি প্লাক ভেঙে দেয়। এমনকি দমকল বাহিনীর সদস্যদের আগুন নেভানোর কাজে বাধা সৃস্টিতে ব্যাঘাত ঘটনায়। পরে নীলফামারী দমকল বাহিনী এসে পৌঁছলে পুলিশের সহযোগীতায় প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্ঠায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। ওই অগ্নিকা-টি রহস্যজনক বলে দাবি করেন তিনি।
জলঢাকা থানার ওসি (তদন্ত) মো. মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন, রাতে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে আমি প্রথমে বিদ্যুৎ বিভাগে ফোন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করি। পরে সেখানে গিয়ে দেখি উত্তেজিত কিছু লোকজন দমকল বাহিনীর গাড়ির ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। 
তিনি বলেন, রাতে মনে হয়েছিল বিদ্যুতের সর্টসার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন জনের কথা শুরে মনে হচ্ছে অগ্নিকান্ডটি রহস্যজনক। এবিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে  তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই অগ্নিকান্ডে পাটগুদাম মালিকের ছেলে ১৭ থেকে ১৮শ মন পাট রক্ষিত থাকার দাবি করছেন। পাট ও গুদামসহ ক্ষতির পরিমান ৩৫ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অপরদিকে জলঢাকা দমকল বাহিনীর কর্মকর্তা মমতাজুল ইসলাম বলছেন, সেটি সঠিক না। সেখানে পাঁচ থেকে ছয়শ মনের বেশী পাট হবে না। যার মূল্য সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা হতে পারে। অপরদিকে গুদাম মালিকের ওই দাবি সঠিক নয় বলে এলাকার অনেকে দাবি করেন। এলাকাবাসী ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিযা কিছু রটে- তার কিছুতো বটে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6903110920759213526

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item