চাঁদের আলোয় আলোকিত চাঁদমনির কন্যারা

মর্তুজা ইসলাম, জলঢাকা, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
মেয়েটি একটি লালনগীতি গাইছিলো-জাত গেলো জাত গেলো বলে---। শুনতে ভালো লাগলো। ওর নাম রিতিনা আক্তার রিতা। গতবছর অর্থনীতিতে এম.এস.এস করেছে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে। পাশে বসেছিল মিম। সেও দরাজ  গলায়  গাইলো আগে যদি জানতাম রে---বন্ধু। সুন্দর গাইলো। এরকম কয়েক জন শিল্পী নিয়ে গড়া চাঁদমনি সাংস্কৃতিক দল। তারা নাটকও করে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিসরে। ৩য় শ্রেণী থেকে এমএসএস পর্যন্ত চাঁদমনিতে ছিল রিতা। মিম ৩য় শ্রেণী থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছে চাঁদমনিতে।সম্প্রতি গিয়েছিলাম অনাথ আশ্রম চাঁদমনিতে। চাঁদমনি একটি অনাথ বালিকা আশ্রম ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি নীলফামারীর জলঢাকা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দুরে চাওড়াডাঙ্গী গ্রামে। এখানকারই একজন জনদরদী ব্যক্তি পিজিরুল আলম দুলাল ১৯৯৯ সনে নিজ খরচে তাঁর নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠানটি। তখন থেকে আজ অবধি কৃতিত্বের সঙ্গেঁ সুন্দরভাবে তিনি প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের শিক্ষাবঞ্চিত ঝড়েপড়া অনাথ কন্যা শিশুদের মঙ্গলের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটিকে বেগবান করতে শুরু থেকে অনেকে সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে এসেছিল তার নিজ আত্মীয়রা। তাদের মধ্যে তার বোন মাসুমা বেগম ডেইজী, ভগ্নিপতি আব্দুল কাদের ও চাচাতো ভাই ডা. শামিম হাসান। পিজিরুল আলম উত্তরা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। স্বেচ্ছায় অবসর নেবার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। এজন্য তিনি তার সঞ্চয়, অবসরের টাকা ও জমিজমা সর্বস্ব বিক্রি করে দেন। চাঁদমনি একটি আদর্শ অনাথ কন্যাশিশু আশ্রম ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। এর কার্যক্রম মধ্যে আছে অনাথ ও দুস্থ মেয়ে শিশুদের বিনা পয়সায় লালন-পালন করা ও লেখাপড়া শেখানো। বর্তমানে আশ্রমটিতে ৫২ জন কন্যা শিশু আবাসিক ভাবে লেখাপড়া করছে। প্রতিষ্ঠানটির জন্ম লগ্ন থেকে  প্রায় ৫০০ জন মেয়ে শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময় লেখাপড়া করে বেড়িয়ে গেছে। ধর্মীয় শিক্ষায় জ্ঞান অর্জনের জন্য এখানে একটি পবিত্র কোরআন শিক্ষার জন্য মক্তব আছে। স্ববলম্বী হিসাবে গড়ে তুলতে ফ্রি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শিক্ষার আলো পৌছে দিতে ভ্রাম্যমান পাঠাগার আছে আশ্রমটিতে। পিজিরুল আলম আবাসিক ছাত্রী ছাড়াও বাইরের অনেক দরিদ্র ছাত্রীকে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি নাচ গান কবিতা আবৃতিসহ বিভিন্ন প্রকার সম্মক জ্ঞান দিয়ে থাকে এই চাঁদমনি থেকে। মাঝেমধ্যেই চাঁদমিন কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠান পরিচালক। তিনি বলেন বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে চাঁদমনি সোচ্চার থাকলেও কিছু ছাত্রীর অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের এখান থেকে নিয়ে গিয়ে চুপিসারে বাল্যবিবাহ দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক চর্চার কারণে সমাজের কিছু অশিক্ষিত ও ধর্মান্ধব্যক্তির নিন্দাবাজ, কিছু বখাটে ছেলেদের কটুক্তি শুনতে হয়। সকল বাধা ডিঙ্গিয়ে অবিরত এগিয়ে চলেছে চাঁদমনি। দেশের অনেক সনামধন্য ব্যক্তি চাঁদমনি আশ্রম পরিদর্শনে এসেছিলেন। সাংস্কৃতিকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর করে থাকেন চাঁদমনি হস্তশিল্প মেলা। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, চাঁদমনি অনাথ আশ্রমটি মাদার তেরেশার আদর্শে অনুপ্রাণিত। পিজিরুল আলম দুলাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরকম সাদা মনের মানুষ দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকলে দেশে চাঁদমনির মত প্রতিষ্ঠান আরও অনেক গড়ে উঠবে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4418671349974435482

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item