ডিমলায় গৃহকর্তার নির্যাতনে গৃহকর্মী আরজিনা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!

জাহাঙ্গীর আলম রেজা,ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
দীর্ঘ ৭ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে শিশু গৃহকর্মী আরজিনা আক্তার (১৪) এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার শিশু আরজিনা বর্তমানে ডিমলা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।  জানা যায়, আজ থেকে ৭ বছর পূর্বে ৭ বছর বয়সী ছোট্ট শিশুটি যখন বাবা মায়ের অভাব অনটনের সংসারে হাটি-হাটি,পা-পা করে বড় হতে থাকে ঠিক সে সময়ে চোখ পড়ে শিশু গৃহকমীর খোঁজে থাকা মৃত বাহেজ আলীর পুত্র শাহীনুর রহমান শাহীনের।
ডিমলা উপজেলার গয়াবড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ী বাজার সংলগ্ন বসবাসকারী বাসিন্দা এই শাহীন। তৎকালীণ সময়ে শাহীন লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার আরাজি শেখ সুন্দর গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের পুত্র আনছার আলীর বাড়ীতে গিয়ে শিশু আরজিনকে গৃহকর্মীর কাজের জন্য নিয়ে আসে। উপজেলার গয়বাড়ী ইউনিয়নের শিশু আরজিনার খালু আব্দুল খালেকের বাড়ীতে একদিন রাখে। সেখান থেকে শাহীন শিশু আরজিনাকে নিয়ে টাংগাইলের এক ধর্নাঢ্য ব্যক্তি বেশ কয়েকটি ট্রাকের মালিক জনৈক্য তাইজুল ইসলামের বাসায় রেখে আসে। শিশু আরজিনার শ্রমের মূল্যে হিসেবে প্রতি মাসে শাহীন তিন হাজার করে টাকা নিতো জনৈক্য গৃহকর্তা তাইজুলের কাছে। কিন্তু দীর্ঘ এ ৭ বছরে দালাল শাহীন কোন টাকা দিতো না শিশু আরজিনার বাবা-মাকে। দীর্ঘদিন ধরে আরজিনার মা-বাবা মেয়ের খোঁজ খবর নিতে চাইলেও কোন ভাবেই মেয়ের সাথে দেখা করতে দিতো না তাইজুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা বেগম,ঘর জামাই ও মেয়ে লাভলী বেগম। তাইজুল ইসলামের ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে।

দিনের পর দিন মাসের পর মাস নির্যাতনের শিকার হয়ে বন্দী দশা কাটিয়েছে গৃহকর্মী শিশু আরজিনা। তাকে ঘর থেকে বের হতে দিতো না তারা। বাড়ীর মধ্যেই রেখে সীমাহীন নির্যাতন চালাতো। হাসপাতালে পড়ে থাকা শিশু আরজিনা সংবাদকর্মীদের দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাদঁতে থাকে। অশ্রু ভেজা নয়নে নিদারুন কষ্টের কথা জানায় এভাবেই-আমি একটু কাজের ভূল করলেই আমাকে বিভিন্ন জায়গায় ছেকা দিতো, প্লাস দিয়ে চামড়া যেখানেই পেত চিপে ধরে টানতো। আমি চিৎকার করতাম কিন্তু আমাকে এ নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আসতো না কেহই। বাঁশের কঞ্চি, লাঠি, কাঠ যখন যা পেত তাই দিয়ে আমাকে মারতো। আমার হাত ও পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন আর আমি আগের মতো হাত দিয়ে ধরতে পারি না এবং পা দিয়ে ঠিক মতো হাটতেও পারি না।

ঘর মুছতে, কাপড় কাঁচতে,রান্ন্া করতে এমনকি বাড়ীর নানা কাজে একটু দেরী হলেই আমেনা বেগম ও তার মেয়ে লাভলী আমাকে এভাবেই মারতো। কিন্তু কোন ঔষধ এনে দিতো না। আমি অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতাম। সারারাত ধরে মা-বাবাকে ডাকতাম। এক সময় আমি ভূলেই গেছি আমার মা-বাবা আছে । দিনের পর দিন তাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের দাগ লেগে আছে সাড়া গায়ে। অসুস্থ্য আরজিনা কষ্ট করে হাসপাতালের বিছানা থেকে  উঠে শরীরের কাপর তুলে দেখায় সংবাদকর্মীদের। এসময় বেশ কিছু সংবাদকর্মীকে তাদের চোখের জল ফেলতে দেখা গেছে। মেয়ের পাশে বসে কাঁদতে থাকা মা আঞ্জু বেগম জানায়, আমার মেয়েকে শাহীনুর এভাবে বিক্রি করে দিবে তা আমরা বুঝতে পারিনি। অভাবের সংসার হলেও মেয়েকে তো ফেলে দিতাম না। শাহীনুর আরজিনার বাবাকে বলেছিল তার বাড়ীতে রেখে পড়া লেখা করাবে,ভবিষতে বিয়েও দিবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসে। পরে এভাবে অন্যর কাছে টাকার বিনিময়ে টাংগাইলের তাইজুল ইসলামের বাড়ীতে রেখে আসে। সে থেকে মেয়েকে আর আমরা দেখতে পাইনি। অনেকদিন নাতনীকে দেখতে না পেয়ে সন্দেহ হলে আরজিনার দাদা নুর মোহাম্মদ গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে খুঁজতে খুঁজতে তাইজুল ইসলামের বাড়ী বের করে নাতনীকে দেখতে চায়। কিন্তু নাতনী অসুস্থ্য মেহমান খেতে গেছে এই কথা বলে গৃহকর্ত্রী আমেনা বেগম কিছুতেই আরজিনার সাথে নুর মোহাম্মদের দেখা করতে দিবে না। এতে করে দাদা নুর মোহাম্মদের সন্দেহ হলে কিছুতেই নাতনীকেত না দেখে বাড়ী ফিরবে না মর্মে তাদেরকে জানিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তারা এক পর্যায়ে নাতনী আরজিনার সাথে দাদার দেখা করিয়ে দেয়। অসুস্থ্য আরজিনা দাদাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

গত শুক্রবার রাতে নাতনী শিশু আরজিনাকে নিয়ে পালিয়ে আসে নুর মোহাম্মদ। উপজেলার গয়বাড়ী ইউনিয়নের খালু আব্দুল খালেকের বাড়ীতে। এ ঘটনায় গৃহকর্মী শিশু আরজিনাকে দেখে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েরেছ। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন জানান, আমি আরজিনার অবস্থা দেখে শাহীনুরের মাধ্যমে তাইজুল ইসলামের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে মুঠোফোনে তাইজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি আমাকে এ নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, মেয়েটি একটু অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে তার বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, এরপর থেক তাইজুল  ইসলাম তার ফোন বন্ধ রেখেছেন। হাসপাতালে শিশু আরজিনার খোজ খবর নিতে আসা মানবাধিকার আইন সহায়তা কারী সংস্থা ,ব্র্যাক, ডিমলা উপজেলা শাখা, (লিগ্যাল এইড) ফিল্ড অর্গানাইজার নাসিমা খাতুন  বলেন, আমি মেয়েটিকে হাসাপাতালে দেখেছি। এটা সত্যিই নিষ্ঠুরতা। মানবাধিকার লংঘন। তবে মেয়েটির আত্বীয় স্বজনরা চাইলে আমরা আইনি সহায়তা দিবো।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3029599421582832956

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item