অদম্য দুই প্রতিবন্ধীর জেএসসি পরীক্ষা

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ঃ
অদম্য মেধা আর পড়ালেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছা দমাতে পারেনি প্রতিবন্ধী দুই অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রকে। তারা দুইজনে রবিবার থেকে শুরু হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এরা হলো শারীরিক প্রতিবন্ধী নাঈম ইসলাম ও বাক প্রতিবন্ধী সেলিম আহমেদ। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রালপলসি আক্রান্ত) শিার্থীদের পরীা  নির্ধারিত সময়ের ১০% বেশি। অর্থাৎ তিন ঘণ্টার পরীক্ষার ক্ষেত্রে তাদের সময় হবে সাড়ে তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা। কিন্তু তারা সকল কে আশ্চর্য্য করেছে ওই বাড়তি ৩০ মিনিট সময় এই দুইজনের প্রয়োজন হয়নি। স্বাভাবিক পরীক্ষার্থীদের মতো তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
রবিবার নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়  উপজেলার মাগুড়া দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী নাঈম ইসলাম কে পরীক্ষা দিতে। তার দুটি পা যেমন নেই তেমনি শারীরিক উচ্চতায় ঘাটতি রয়েছে। স্কুলে তার রোল নম্বর ১১ । জেএসসি পরীক্ষায় তার দিনাজপুর বোডের রোল ৫৭৬৬৫৭। তাকে একটি পৃথক চেয়ার ও টেবিলের ব্যবস্থা করে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সারিতেই বসে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। অত্যান্ত মনোযোগ সহকারে সে পরীক্ষার খাতায় প্রশ্ন উত্তর লিখছে। আবার লিখা উত্তর গুলো ঠিক হয়েছে কিনা তা রিভাইজ করছে। পরীক্ষা শেষে সে জানায় পরীক্ষা তার সুন্দর হয়েছে । প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পেরেছে। নাঈম জানায় তার পিতা কিশোরীগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রবিউল ইসলাম। মা নার্গিস বেগম গৃহিনী। তারা দুই ভাই। বড় ভাই আসাদুল ইসলাম রংপুর পলিটেকনিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে পঞ্চম শ্রেনীতে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। বড় হয়ে সে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। এ সময় তার পিতা রবিউল ইসলাম বলেন জন্ম থেকে তার ছোট ছেলে নাঈম ইসলামের দুটি পা নেই। তার উপর শারীরিক গঠনও কম। এরপরেও তার সন্তান লিখাপড়ায় থেমে থাকেনি।
অপর দিকে এই উপজেলার শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বাকপ্রতিবন্ধী সেলিম আহমেদ কে। সেও এই জেএসসি পরীক্ষার খাতায় মনোযোগ সহকারে লিখছে। সে উপজেলার কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্কুলের অষ্টম শ্রেনীতে ৫৬০ জন ছাত্রের মধ্যে -গ -শাখায় তার রোল নম্বর ২০৮। আর জেএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর বোডের রোল নম্বর ৫৮৮৪৩৩। পরীক্ষা শেষে বাকপ্রতিবন্ধী সেলিমের সাথে কথা বললে কাগজে লিখে  সে জানায় উপজেলার দক্ষিন রাজিব গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমানের পুত্র। মা আসমা বেগম গৃহিনী। পঞ্চম শ্রেনীতে সাধারন গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। তারা দুই ভাই এক বোন। বড়ভাই মাহবুব আলী  পিতার সাথে কৃষি কাজ করে। ছোট বোন রোজিনা আক্তার ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী। ভবিষ্যতে সে কি হতে চায়, জানতে চাইলে সে কাগজে লিখে এর জবাব দেয় আমি বোবা। কথা বলতে পারিনা। ভবিষ্যতে এমন কি হতে চাইলে একজন বাক প্রতিবন্ধীর কর্মজীবন সাফল্য পাবে তা জানিনা। আমাকে কেউ ভাল দিক নির্দেশনা দিলে সেটি ধরেই হয়তো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করবো।
শারীরিক প্রতিবন্ধী নাঈম সর্ম্পকে মাগুড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন সে আমার স্কুলের ছাত্র। দুটি পা নেই তার। সেই সাথে শারীরিক গঠন কম। তারপরেও সে নিয়মিত স্কুলে এসেছে হুইল চেয়ার নিজে হাত দিয়ে চালিয়ে।তার মেধাশক্তি প্রখর। বাকপ্রতিবন্ধী সেলিম আহমেদ সর্ম্পকে কিশোরীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আযম বলেন সেলিম আমার স্কুলের বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে একজন নিয়মিত ছাত্র। কাশ কোন দিন ফাকি দেয়নি। কথা বলতে না পারলেও সেলিম সব কথাই শুনতে পায় ও বোঝে। ফলে কাশের পড়া গুলো সে খাতায় লিখেই সুন্দর ভাবে দিতে পারে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 6467145797792029092

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item