ডোমারে বাল্য বিয়েতে তিন জনের ১৫ দিনের সাজা। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ

আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),স্টাফ রিপোর্টার এবং আনিছুর রহমান মানিক,ডোমার(নীলফামারী)প্রতিনিধি>>নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় বাল্য বিয়ের আয়োজনের অভিযোগে কণের বাবা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ তিন জনের ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- হয়েছে।
শনিবার সকালে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউর রহমান ওই সাজা প্রদান করেন।
এদিকে সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ ওই ব্যক্তিদের আটকের পর থানায় নিয়ে বেধরক মারপিট করেছে। পুলিশের নির্যাতনে একজন অসুস্থ্য হলে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ঘটনার দিন বিয়ের কোনো আয়োজন ছিল না সেখানে। পুলিশ কারো প্ররোচনায় নাটক সাজিয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার রাতে ডোমার পৌরসভার চিকনমাটি সবুজপাড়া গ্রামে ছামিউল আলমের অষ্টম শ্রেণী পড়–য়া মেয়ের (সানু আক্তারের) সঙ্গে একই পৌরসভার চান্দিনাপাড়ার রশিদুল ইসলামের ছেলে সনি হাসানের (১৮) বিয়ের আয়োজন চলছিল। রাতে ওই বাড়িতে  গিয়ে  ছাত্রীর বাবা ছামিউল ইসলাম (৪০), প্রতিবেশি একরামুল হক (৪৫) ও পশ্চিম চিকনমাটি ডাক্তারপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমনের ছেলে রেজাউল করিমকে (৩২) আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করা হয়।
শনিবার সকালে আদালতের বিচারক ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউর রহমান বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে প্রত্যেককে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন।
প্রতিশেীরা জানায়, ঘটনার দিন ওই বাড়িতে বিয়ের কোনো আয়োজন ছিল না। ছেলে পক্ষের লোকজন মেয়ে দেখতে এসে দাওয়াত খেয়ে চলে যাওয়ার পর পুলিশ বাড়িতে হামলা চালিয়ে মেয়ের বাবাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এসময় মেয়ের বাবা ও প্রতিবেশি একরামূল হককে পুলিশ বেধরক মারপিট করে।
শনিবার  বিকেলে ওই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় মেয়ের দাদা ময়েজ উদ্দিনের (৯০) সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, গত শুক্রবার আমি ছেলের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার পর তাদের দাওয়াত দিয়ে এসেছি। এই শুক্রবার তারা ১১ জন দাওয়াত খেতে আসে। রাত আটটার দিকে দাওয়াত খেয়ে তারা চলে যায়। এরপর রাত নয়টার দিকে পুলিশ  এসে আমার ছেলে ও প্রতিবেশী রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় প্রতিবেশি ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক সেখানে উপস্থিত হয়ে কারণ জানতে চাইলে তাকেও বেদম মারধর করে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়িতে বিয়ের কোনো আয়োজনই ছিল না। বিয়ে  হলে সেখানে বর থাকবে ,কাজী থাকবে, মৌলভী থাকবে। কিন্তু  এদের একজনও ছিল না। ছেলে পক্ষ মেয়ে পছন্দ করেছে, আমরা বলেছি মেয়ের এখন বয়স কম, মেয়ে যখন বিয়ের উপযুক্ত হবে তখন  বিয়ে হবে। এ কথার পর বর পক্ষের লোকজন চলে যায়।
মেয়ের চাচাতো ভাই আশিকুর রহমান বলেন, ছেলে পক্ষের লোকজন রাত আটটার দিকে চলে যাওয়ার পর প্রশাসনের লোকজন রাত নয়টার দিকে আসে। তারা এখানে এসে এলাকাবাসীর উপর চড়াও হন। ওই বাড়িতে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল না। ঘটনার খবর শুনে  প্রতিবেশি আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক বিষয়টি জানার জন্য পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ তার ওপর চড়াও হয়ে ঘটনাস্থলে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে তাকে থানায় নিয়ে বেধরক মারপিট করে। অসুস্থ্য হলে রাতে হাসাপালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও একই গ্রামের কাওছার আলম বলেন, ওই বাড়িতে বিয়ের খবর আমি জানি না। ইউএনও সাহেব আমাকে প্রথমে ফোন  করেছিলো। আমি বলেছিলাম না, এরকম খবর আমার জানা নেই। পরে সেখানে পুলিশ ও ইউএনও সাহেব আসলে আমি সেখানে গিয়ে জানতে পারি মেয়ে দেখার জন্য ছেলে পক্ষ এসে চলে যাওয়ার পর পুলিশ সেখানে আসে। এর পর পুলিশের সঙ্গে বাধবিত-ার পর পুলিশ তিন জনকে ধরে নিয়ে যায়। একরামুল হককে পুলিশ মারধর করেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, একরামুলকে রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ।
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাল্য বিয়ের আয়োজনের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক তাদের ওই সাজা প্রদান করেন।
ওই তিন ব্যক্তিকে আটকদের পর পুলিশের নির্যাতনের কথা অস্বীকার করলেও একরামুলকে রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  চিকিৎসা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। তাকে কেন চিকিৎসা দিতে হলো জানতে চাইলে বলেন, সেখানে (ঘটনাস্থলে) লাঠি চার্জের সময় তিনি আহত হন।
এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউর রহমান বলেন, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে তিনজনকে ১৫ দিনের জেল দেওয়া হয়েছে। বিয়েতে পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশকে আটকিয়ে রেখেছিল। আমি খবর পেয়ে রাত সারে ১০টার দিকে সেখানে গিয়েছি। তিনজনের মধ্যে একজন একরামুল হক পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার কারনে পুলিশ তাকেও আটক করেছিল। বিয়েটি হয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে বিয়ে দিলেও এই আইনে সাজা দেওয়া যায়, বিয়ের আয়োজন করলেও সাজা দেওয়া যায়।
পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক খায়রুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে এবং পুলিশ হেফাজতে থানায় এনে পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নং ওয়ার্ড সভাপতি একরামুল হককে নির্যাতন করা হয়েছে, কোনো অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে বাধা নেই। তবে নির্যাতন করার অধিকার পুলিশের নেই। এ বিষয়ে আমরা শনিবার বিকেলে জরুরী সভা ডেকেছি। সেখানে করনীয় সম্পর্কে  সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ডোমার  উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, খবরটি  শুনে রাতেই থানায় গিয়ে দেখতে পাই, একরামুল হক শরীরের ব্যথায় কাতরাচ্ছে, শনিবার সকালে জানতে পারি অবস্থার অবনতি হলে ওই রাত সোয় তিনটার দিকে  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। পুলিশ জনগনের সেবক, কিন্তু  পুলিশের হাতে জনগন নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি দুৎখজনক।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item