ভারত সরকার ছিটমহলবাসীদের সকল সুবিধা প্রদান করবেন- ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার

জাহাঙ্গীর আলম রেজা,
ডিমলা(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ভারতের মন্ত্রী সভায় পাশ হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারও চুক্তিটি মন্ত্রীসমভায় অনুমোদন দিয়েছে। উভয় দেশের সরকারের মধ্যে এখন বিনিময় চুক্তি হস্তান্তরের অপেক্ষা। আপনার দীর্ঘ ৬৮ বছর চুক্তিটির জন্য অপেক্ষা করেছেন আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করেন উভয় দেশের সরকার চুক্তি বিষয়টি হস্তান্তর করবে। মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারীর ডিমলায় ৪টি ছিটমহল পরিদর্শনে এসে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সোমনাথ হালদার ছিটমহলবাসীদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনারা নতুন করে কোন স্থাপনা তৈরি না করে যে যেঅবস্থানে আছেন সেভাবেই থাকবেন আপনাদের জায়গা জমি, ঘরবাড়ী, আপনাদের থাকবে।। চুক্তি হস্তান্তর হলেই ভারত সরকার ছিটমহলবাসীদেও সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। এবং প্রশাসন সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে। তিনি বলেন ছিটমহল ৪টি ভারতের জাগয়া সেখানে পুলিশ পোশাক পড়ে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে সরকারী পোশাক ছারা ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন আপনাদের পাশে থেকে সার্বক্ষনিক খোজখবর রাখবেন। বিনিময় চুক্তি হস্তান্তর হওয়ার পর যারযার দখলীয় সম্পত্তি নীজ নামে সরকারী বিধি মোতাবেক  বৈধ কাগজ করে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার দুপুরে নীলফামারীর ডিমলায় ভারতীয় ছিটমহল তালুক বড়খানকি খারিজায় আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বড়খানকিবাড়ি খারিজায় বাসিন্দা যদুনাথ চন্দ্র রায়ের সভাতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তবিবুল ইসলাম, ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ রহুল আমিন খান, খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন, গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন, টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন, পঞ্চগড়- নীলফামারী ইউনিটের সভাপতি মফিজার রহমান, কার্যকরী সদস্য মোখলেছার রহমান, তালুক বড়খানকি খারিজার মিজানুর রহমান, মতিয়ার রহমান, বড়খানকী খারিজা গীতদলদহের মশিয়ার রহমান, নগর জিকাবাড়ির আকতারুজ্জামান, কাজলদীঘি ছিটমহলের সভাপতি সেরাজুল হক প্রমুখ।
দীর্ঘ ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিন মুক্তি পেতে যাচ্ছেন এই আশায় বুক বেধে ছিলেন ছিটমহলের ৫৬ হাজার নাগরিক। কুচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের পঞ্চগড়ের বোদা, দেবীগঞ্জ, নীলফামারীর ডিমলা, লালমনিরহাটে পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারিতে অবস্থিত ছিল। ভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্থানে অন্তর্ভুক্ত হয়। আর কুচবিহার একীভূত হয় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। ফলে ভারতের কিছু ভূখন্ড আসে বাংলাদেশের কাছে। আর বাংলাদেশের কিছু ভূখন্ড যায় ভারতে। এই ভূমিগুলোই হচ্ছে বর্তমানের ছিটমহল। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হলেও কোচবিহার ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কোচবিহার ছিল রাজাশাসিত পৃথক রাজ্য। ১৯৪৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কোচবিহারের রাজা জগদ্বীপেন্দ্র নারায়ণ কোচবিহারকে ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এরপর ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি কোচবিহারকে পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভারত স্বাধীন হলেও ছিটমহলের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে থাকে। ২০১১ সালের ১৫ জুলাই ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একযোগে ১৬২টি ছিটমহলের হেডকাউন্টিং (আদমশুমারি) এর কাজ শুরু হয়ে ১৮ জুলাই শেষ হয়। বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার অভ্যন্তরে ৪টি ছিটমহলের হেডকাউন্টিং জরিপে ১১৯টি পরিবার পেয়েছেন গণনাকারীরা। এর চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী এসব পরিবারের জনসংখ্যা ৫০৬ জন। এখানে পুরুষ ২৫৮ ও মহিলা ২৪৮ জন। ২৮ নম্বর ছিটমহল বড়খানকিবাড়ি খারিজায় পরিবারের সংখ্যা ২১ ও জনসংখ্যায় পুরুষ ৪৩, মহিলা ৪৩ সহ ৮৬ জন। ২৯ নম্বর ছিটমহল তালুক বড়খানকি খারিজায় পরিবারের সংখ্যা ৪৫। জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষ ৯২ জন, মহিলা ৯৪ জনসহ ১৮৬ জন। ৩০ নম্বর ছিটমহল বড়খানকী খারিজা গীদালদহে পরিবারের সংখ্যা ৮। জনসংখ্যায় পুরুষ ১৯ ও মহিলা ১৮সহ ৩৭ জন। ৩১ নম্বর ছিটমহল নগর জিকাবাড়িতে পরিবারের সংখ্যা ৪৫ জন। জনসংখ্যায় পুরুষ ১০৪ জন ও মহিলা ৯৩ জনসহ ১৯৭ জন। ভারতের ছিটমহলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে নীলফামারীতে ৪টি, পঞ্চগড়ে ১২টি, কুড়িগ্রামে ৩৬টি ও লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টিসহ মোট ১১১টি। এ ছাড়া  বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের অভ্যন্তরে ভারতের কোচবিহার জেলাধীন ১৭ হাজার ২৫৮ দশমিক ২৪ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় ১টি, সদরে ১টি ও ভূরুঙ্গামারীতে ১০টি মোট ১২টি ছিটমহল আছে। আয়তন ১ হাজার ৮৮০ দশমিক ৪৪ একর। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে ৫৫টি, হাতিবান্ধায় ২টি ও সদরে ২টি মোট ৫৯ টি ছিটমহল আছে। আয়তন ৩ হাজার ২৭৮ দশমিক শূন্য ৪ একর। নীলফামারী জেলার ডিমলায় ৪টি ছিটমহল আছে। আয়তন ১৬৮ দশমিক ৪৮ একর। লোক সংখ্যা ৫০৬ জন, এছাড়াও পঞ্চগড় জেলার সদরে ৭টি, বোদায় ২৬টি ও দেবীগঞ্জে ৩টি মোট ৩৬ টি ছিটমহল রয়েছে। আয়তন ১১ হাজার ৯৩২ দশমিক ৭৮ একর। এই ছিটমহলগুলোর লোক সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন। অনুরূপভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মেকলিগঞ্জ, মাথাভাঙ্গা, শীতলকুচি, দিনহাটা ও তুফানগঞ্জ থানার ভূ-খন্ডের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল আছে। আয়তন ৭ হাজার ৪৩ দশমিক ৫২ একর। লোক সংখ্যা ১৪ হাজার ২২১ জন।                                                                                                                                             

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item