রংপুরে নগরীতে ইটভাটার পেটে ক্ষেতের ফসল নিশ্চিহ্ন হচ্ছে রাস্তাঘাট: জনদুর্ভোগ চরমে

হাজী মারুফ,রংপুর ব্যুরোঃ
জনবসতি এলাকায় এসএমবি ইটের ভাটা স্থাপনের পর থেকে পরিবেশ দূষণ, চাষাবাদ করা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ইট পরিবহনের কারণে জনসাধারনের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম কাঁচা রাস্তাটুকুও এখন প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে। এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগে পাশে দাঁড়াচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে মরণ খড়গ। এছাড়াও হুমকি-ধমকি, মামলা-মোকাদ্দমা দায়ের করে হয়রানীসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।
এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে ভাটা বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে এলাকাবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর উত্তম বারোঘরিয়া হরিরাম পিরোজ এলাকায়।
জানা গেছে, নগরীর ধাপ এলাকার বাসিন্দা সজিব-মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বিগত ৫বছর আগে উত্তম বারো ঘরিয়া হরিরাম পিরোজ এলাকায় সজিব-মোস্তাফিজুর ব্রিকস (এসএমবি) গড়ে তোলেন। ইটের ভাটা স্থাপনের পর হতে ভাটার আগুনে ঝলসে যাচ্ছে আশপাশের চাষাবাদ করা জমির ফসল। ইতোমধ্যে ভাটার চারদিকে প্রায় ১কিলোমিটার জুড়ে আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে গেছে। এর ধারাবাহিকতায়  চাষাবাদও হ্রাস পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বসতবাড়ি। তবে এসব গড়ে ওঠা বসতবাড়ির মানুষের পুষ্টি চাহিদা পুরণে ফল-মুল, শাক-সবজি থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুই ভাটার অগ্নিতাপে ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। এলাকাবাসী জানায়, ভাটার আগুনের প্রভাবে দগ্ধ জমিজমা আবাদ করে ফলমুল তো দূরের কথা একসময় হয়তো ভাতই জুটবে না। আর যাতায়াতের জন্য একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপে পরিনত হয়েছে। পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। জনবসতি এলাকায় এসএমবি ইটের ভাটা স্থাপনের পর থেকে পরিবেশ দূষণ, চাষাবাদ করা ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ইট বহণে পরিবহন যাতায়াতের কারণে কাঁচা রাস্তাটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টির হলেই পানিতে ভরপুর হয়ে যায় পুরো সড়কটি। কর্দমাক্ত রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই। এদিকে, ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নেমে আসে প্রতিবাদকারী লোকজনের উপর মরণ ছোবল। এছাড়াও হুমকি-ধমকি, মামলা-মোকাদ্দমা দায়ের করে হয়রানীসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে চরম দুর্ভোগ থেকে পরিত্রান পেতে ইটভাটা বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে এলাকাবাসী। এসময় একার ভূক্তভোগী বিক্ষুব্ধ নারী পুরুষসহ সব বয়সের মানুষজন এসএমবি ইটের ভাটা বন্ধ করে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একইসাথে বিক্ষোভকারীরা কাঁচা রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণে সিটি মেয়রের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে আশরাফ হোসেন বাবুর ছেলে আব্দুল মোত্তালেব বলেন, ইট তৈরীর সময় এলেই ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিনষ্ট, আবাদী জমিতে ফসল উৎপাদনে আশানুরুপভাবে ফলন পাওয়া যায় না। সাড়ে ৫ দোন জমিতে ধান আবাদ করেছি, কিন্তু যে আশা নিয়ে ধান চাষাবাদে টাকা-পয়সা বিনিয়োগ করেছি, সে অনুযায়ী ফসল না পাওয়ার শংকায় ভুগছি। আর এমনটি হলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বো। এই ভাটা বন্ধ না করলে আমাদের একদিন নিঃস্ব হতে হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না। গ্রামে এখন আম, কাঠাল, জামসহ অন্যান্য ফলমূল আর গাছে ধরছে না। যদিও কিছু ধরে তাও বড় হওয়ার আগেই ঝড়ে পড়ে। একই এলাকার মৃত আজিজার রহমানের স্ত্রী রনজিনা বেগম বলেন, আধি নেয়া ৩ দোন জমিতে আলুর মৌসুমে আলু আবাদ করি ২০ হাজার টাকা লোকসান খাইছি। সেই লোকসানের দায় এলাও ঘারোত আচে বাহে। এলা (এখন) ধানের মৌসুমেও ধান চাষ করি ১৮/২০ হাজার টাকা খরচ হইচে। এইবারও ধানের ভালো ফলন হয় নাই। গ্রামবাসীর সবারই একই অবস্থা। এই ক্ষতির মূল কারণই হলো ইটের ভাটা। হামরা ভাটা বন্ধ হউক, এটাই চাই। রফিকুল ইসলামের স্ত্রী নাজিরা বেগম বলেন, ধান চাষ করার পেছনে ২০ হাজার টাকা খরচ হইচে, আর ধানের ফলন তো দুরের কথা; ধানের গাছোত খালি দেখো পাতান। এই অবস্থা যদি হয়, তাইলে হামারগুলার মরণদশা হইবে। একই উক্তি করলেন, হরিরাম পিরোজ এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম, সাদেকুল ইসলাম, মুকুল, মশিয়ার রহমান।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর অফিসের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান টুকু’র মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম কবির কাজল বলেন, আমার এলাকায় কোন ইটের ভাটা নেই, আর হরিরাম পিরোজ গ্রামটি ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা। যেহেতু আমার এলাকায় কোন ইটের ভাটা নেই, সেজন্যে বিষয়টি আমি জানি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অপরদিকে, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া ওই ইটের ভাটা আগেই স্থাপন করা হয়েছে। নতুন করে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আর কোন ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। পরিবেশ দূষণ আর জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে অবশ্যই ইটভাটা মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ ভাটা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পুরোনো সংবাদ

জনদূর্ভোগ 6231784826454162233

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item