ডোমার আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয় দূর্নীতি ও গ্রাহক ভোগান্তির আখরা।

সেচ পাম্পের আরসিডিসি’ফির সিংহ ভাগ টাকা দূর্নীর্তিবাজদের পকেটে-


সরকারের প্রায় ৩কোটি টাকা লুটপাট

আনিছুর রহমান মানিক
ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ

ডোমার আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয় দূর্নীতি ও গ্রাহক ভোগান্তির আখরায় পরিনত হয়েছে। সেখানে গ্রাহকের সমস্যা সমাধান তো দুরের কথা সাধারণ গ্রাহককে সমস্যায় ফেলে কিভাবে তাদের পকেট কাটা যায় সেই উপায় খুঁজতেই কর্তাব্যাক্তিরা ব্যাস্ত। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিদিন
শতাধিক সেচ পাম্প গ্রাহক  তাদের মিটারে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ সহ নানা অভিযোগ নিয়ে কার্যালয়ে হাজির হচ্ছে। অফিসের ছোট কর্তা থেকে বড় কর্তা সকলের ঢালাও ব্যবস্থাপত্র ,আপনার মিটারটি পরিবর্তন করতে হবে। একটি ভালো মিটার কেন পরিবর্তন করতে  হবে সে উত্তর খুজতে গিয়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।
অনুসন্ধানে  দেখাগেছে, সেচ পাম্পের মিটার রিডার  মিটার নিয়মিত পরিদর্শন না করে গ্রাহক প্রতি ৫থেকে ৭শ ইউনিট বিল  বেশি করছে। সেচ  সংযোগ জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাবহার করা হলেও অধিকাংশ গ্রাহকের নামে পুরো বছর জুড়ে ভৌতিক বিল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।এসকল ভৌতিক বিলে আপত্তি বা সংশোধনের জন্য আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয় গেলে মিটারটি নষ্ট অযুহাতে তা পরিবর্তন করে তাদের মনোনিত ডিজিটাল মিটার লাগাতে বাধ্যকরা হচ্ছে । অপরদিকে মিটার পরিবর্তনেও আছে সুভংকরের ফাঁকি,সেখানে গ্রাহকের পুরাতন মিটার খুলে আনার সময় মানা হচ্ছেনা কোন নিয়ম নীতি। ভৌতিক বিলে চাপিয়ে দেয়া অব্যাবহৃত বিপুল পরিমান ইউনিট পাওনা থাকলেও তা পরিশোধে ব্যবস্থা না নিয়ে অফিসের কর্তা ব্যাক্তিরা  মিটারটি গায়েব করে  গ্রিনকার্ড নামক একটি ভেলকিবাজির স্লিপ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে । গ্রীন কার্ডে নেই কোন কর্তৃপক্ষের সিলমোহর নেই কোন স্বাক্ষর। গ্রাহকের কাছে ভৌতিক বিলের অতিরিক্ত ইউনিট বাবদ পাওনা থাকলে তাৎক্ষনিক পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়ে অফিসের কর্তাব্যাক্তির সাথে গোপন লেনদেনের মাধ্যমে তা চুকিয়ে ফেলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। একাধিক  সেচ পাম্পের গ্রাহক জানান, এবিষয়ে  আবাসিক প্রকৌশলীর দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা  নানা কৌশলে সাধারণ গ্রাহকের পকেট কাটছে । তাদের কৌশলের অনেক কিছুই সাধারণ গ্রাহকরা বোঝেনা। সেচ পাম্প গ্রাহক দুলাল হোসেন  বলেন,প্রতিবছর সেচ মৌসূমে ৫থেকে ৭শইউনিট ব্যাবহার করি। অথচ মিটার রিডার আমার মিটারটি পরিদর্শন না করে ১৩শ ইউনিট বিল করে। আমি  মিটার পরিবর্তন না করলেও আমার হিসাব নম্বরের মিটারটি পরিবর্তন দেখিয়ে নতুন ভৌতিক মিটার নম্বরের বিল প্রদান করে। এবিষয়ে অভিযোগ করলে চলতি মৌসূমে বাধ্যতামূলক নতুন মিটার লাগাতে বলে। আমি নতুন মিটার লাগালেও তারা পুরাতন মিটারে আমার অব্যবহৃত পাওনা ইউনিট  বাদ না দিয়ে অতিরিক্ত ইউনিটের বিল পরিশোধ  করার জন্য আমার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে। আমার এলাকায় এধরনের শতাধিক গ্রাহক আছে। একাধিক গ্রাহক জানায়, ডোমার আবাসিক প্রকৌশলী কার্যালয় অনিয়ম আর দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। সেখানকার কর্তাব্যক্তিরা টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানান, আবাসিক প্রকৌশলী সেচ পাম্পে আরসিডিসি(পুনঃসংযোগ গ্রহন ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণ)’র জন্য সরকারের নির্দ্ধারিত ফি বাবদ প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা আতœসাৎ করেছে। প্রতিটি সেচ পাম্পে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া ও বিচ্ছন্ন করণ বাবদ ১ফেজ ১২০টাকা ও ৩ফেজ সংযোগ ২৫০টাকা হিসাবে গ্রাহকদের নিকট থেকে নেয়া হলেও তা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল মতিন ও সহকারী আবাসিক প্রকৌশলী নয়ন তা পকেটস্থ করেছে বলে তারা জানিয়েছেন। তার অভিযোগের  একটি সূত্র ধরে ডোমার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের হরিপ্রসাদ রায় সেচ পাম্প গ্রাহকের কাছে গেলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তিনি জানান, আমার সেচ পাম্প চালুর সময় সংযোগ গ্রহন ও বিচ্ছিন্ন করণ ফি (আরসি ডিসি) বাবদ নির্দ্ধারিত ফি’র সাথে উৎকোচ সহ মোট ৭শত টাকা নেয়া হলে ও আমি অফিসে অনেক ঘুরেও তার রশিদ পাইনি। পরে ব্যাংকে যোগাযোগ করে দেখি সেখানে আমার নামে কোন টাকাই জমা হয়নি। তারা শুধু আমাকে স্বাক্ষর বিহীন একটি সাদা গ্রিন কার্ড  দিয়েছে।   সংশ্লিষ্ট অফিসের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান, ডোমারে ২৩শত সেচ পাম্প গ্রাহকের ঘাড়ে গড়ে ৫শত ভৌতিক ইউনিট চাপিয়ে এসকল অব্যবহৃত ইউনিটের সুবিধা অবৈধ সংযোগধারীদের দিয়ে অসাধূ কর্তাব্যাক্তিরা বছরে সরকারের প্রায় ৩কোটি টাকা লুটপাট করছে। আর এর ঘানি টানতে হচ্ছে  বৈধ গ্রাহকদের।নওদাবস এলাকার কৃষক জুলফিকার আলী জানান,তার সেচ পাম্পের মিটারের হিসাব অনুযায়ী ১৪/১৫ শত টাকা বিল হওয়ার কথা থাকলেও গত বছর ডোমার বিদ্যুৎ অফিস হতে তার নামে ২২হাজার টাকার ভৌতিক বিল দেয়াহয়।বিলটি পেয়ে তিনি বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন। জাল্লির মোড়ের মোঃ মোগল আলী  হিসাব নং ৮১৫৬/বি,মোঃ আমজাদ চিলাহাটী,হিসাব নং ৮১৮৪/বি , শরিফুল ইসলাম চিকনমাটি হিসাব নং ৮১৮০/বি, শ্রী অজয় চন্দ্র জোড়াবাড়ী,হিসাব নং ৮১৪১/বি,মোঃ নুর মোহাম্মদ মেলা পাঙ্গা সহ আরো অনেকে একই অভিযোগ করেন।
নিমোজখানা বাগডোকড়ার বাবু পাড়া লিপুরায় বলেন, আমাদের এলাকায় নতুন ট্রান্স মিটার সহ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার সময় উক্ত অফিসের লাইনম্যান –সি সামছুল হক ও আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল মতিন , আমাদের কাছে ২০হাজার টাকা নিয়েছে। অপরদিকে ভৌতিক বিলে ভুক্তভোগী এলাকার একাধিক আবাসিক গ্রাহক জানিয়েছেন ডোমার বিদ্যুৎ অফিসের অনিয়ম এখন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এখানে বিদ্যুতের সংযোগ না নিয়েও ভৌতিক বিলের ঘানি ,মামলা খেয়ে জেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ।এ যেন দেখার কেউ নেই। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি প্রতিবেদককে জানান,আমি নিজেই ভৌতিক বিলের বিরম্বনার স্বীকার। আগামীতে তার দফতরে গণশুনানীতে ওই দপ্তরের কর্তাদের ডাকবেন বলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান। এবিষয়ে  আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুল মতিন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন সব কিছু নিয়ম মাফিক চলছে।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item