ডোমারে মরমী কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী পালিত


আনিছুর রহমান মানিক, ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধি>>

নীলফামারীর ডোমারে সুর সম্রাট মরমী কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমেদ এর ১০২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আব্বাস উদ্দীন সংগীত একাডেমীর আয়োজনে, মোতাহারুল হোসেন রফু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শাহিনা শবনম।

বিশেষ অতিথি ডোমার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নুরননবী। 

প্রধান আলোচক হিসেবে মরমী কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের উপর বিষদ বর্ণনা তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মখদুম ই আজম মাশরাফী (তুতুল), নূরুল ইসলাম বিএসসি,প্রকৌশলী মঞ্জুর উল আলম প্রমুখ।  সহকারী অধ্যপক ডেইজি নাজনীন মাশরাফীর সঞ্চালনায় আলোচনা শেষে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে মরমী কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের গাওয়া গানের প্রতিযোগিতার উপর বিজয়ী শিল্পীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।  

উল্লেখ্য- ১৯০১ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত  মরমী কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহম্মেদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। ১৯০১ সালের ২৭শে অক্টোবর ভারতের কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর প্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জাফর আলী আহমদ তুফানগঞ্জ মহকুমা কোর্টের একজন আইনজীবী ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে আব্বাস উদ্দীন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি কলকাতার ওস্তাদ জমির উদ্দীন খানের কাছে গান শেখার আগে তার লেখা নিজস্ব গান দিয়েই শিল্পী জীবন শুরু করেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে লোকগীতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার গাওয়া শহর ও প্রামের ভাওয়াইয়া, জারি, সারি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালী, বিচ্ছেদী, মর্শিয়া, দেহতত্ত্ব এবং পালা গান গেয়ে জনপ্রিয়তার র্শীর্ষে সুনাম অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্বকবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসিম উদ্দিন, কবি গোলাম মোস্তফার লেখা ইসলামী গায় গেয়ে সংরক্ষণবাদী বাঙালী মুসলিম সমাজে গান-কে জনপ্রিয় করে তুলেন। কথিত আছে "ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ" এই গানটি কাজী নজরুল ইসলাম তার অনুরোধেই লিখেন এবং তার লেখা ঐ গানটি আব্বাস উদ্দীন গেয়ে মুসলিম বাঙালী সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেন। তৎকালীন ভারতে মুসলিম নামে গান গাওয়ায় তিনি প্রথম মুসলিম সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কলকাতারপ্রধান গ্রামোফোন কোম্পানিতে গানের রেকর্ড ব্যাপক ভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। তিনি ১৯৩১ সাল থেকে কলকাতায় এবং দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন।  ১৯৫৫ সালে তিনি সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ম্যানিলার দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন, ১৯৫৬ সালে জার্মানীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, ১৯৫৭ সালে রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল কালচারাল কনফারেন্সে যোগদান করেন। ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। এবং ১৯৬০ সালে প্রাইড অফ পার্ফরমেন্স (মরণোত্তর) ১৯৭৯ সালে শিল্পকলা একাডেমী(মরণোত্তর) এবং ১৯৮১ সালে স্বাধীনতা দিবস (মরনোত্তর) পুরস্কার লাভ করেন। শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে মোস্তফা কামাল আব্বাসী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২য় ছেলে মোস্তফা জামান আব্বাসী, মেয়ে ফেরদৌসী রহমান, নাতনী নাশিদ কামাল বাংলাদেশের সংগীত জগতেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিকনমাটি গ্রামের লুৎফুন্নেসা বেগমকে বিয়ে করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি নীলফামারীর ডোমারে আড়ম্বরের সাথে পালিত হয়েছে মরমী কন্ঠ শিল্পী আব্বাস উদ্দীনের ১০২ তম জন্মবার্ষিকীভ।


পুরোনো সংবাদ

সমাজ-সংগঠন 2688982072558277601

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item