নীলফামারীতে দেড় বছর পরে স্কুল স্কুলে ঘন্টা বেজে উঠলো


নির্ণয়,নীলফামারী॥
শহর থেকে গ্রাম। করোনাভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকা শিক্ষার্থীদের মুক্তি মিলেছে। স্কুলে স্কুলে ক্লাশের ঘন্টা বেজে উঠেছে। নীলফামারীর চারিদিকে ঈদের মতো উৎসব। করোনা ভাইরাসের কারনে বন্ধ হয়ে যাওয়া সারা দেশের ন্যায় নীলফামারী জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো দীর্ঘ ৫৪৪ দিন পর খুলে দেয়ার এই উৎসবে শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকরাও যেন মেতে উঠেছিল। 

আজ রবিবার(১২ সেপ্টেম্বর/২০২১) জীবনে প্রথম স্কুলে আসার মতো অনুভূতি মনে করেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে প্রবেশ করাতে দেখা যায়। মুখে মাস্ক -কাঁধে স্কুল ব্যাগ। পড়নে নতুন জামার ড্রেস। দীর্ঘদিন পর  স্কুলের ঘন্টাবাজার শব্দ বেজে উঠে। 

স্কুলের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিল স্বেচ্ছাসেবকেরা। স্কুলে প্রবেশের সময় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে স্কুলে ঢুকেই বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া। তারপর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষাথীদের বরণ করে নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন। নতুন আমেজ নতুন গন্ধ, নেই গাদাগাদি হুরোহুরি। সব কিছুই নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে। এ যেন দীর্ঘ দিন পর স্কুল এসে নতুন অভিজ্ঞতার গন্ধ পেল শিক্ষার্থীরা। শ্রেনী কক্ষের বেঞ্চে সেই আগের মতো ৪জন কিংবা ৫ জন নেই। এক একটি বেঞ্চে মাত্র একজন করে। সকাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর চিত্র ছিল ঠিক এমনটাই। জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী সহ প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা, জেলার ৬ উপলোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, শিক্ষা কর্মকর্তাগণ, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সকলেই মাঠে নেমে পড়ে স্কুলে স্কুলে স্বাস্থ্য বিধি ঠিক মতো মেনে শিক্ষার্থীদের  পাঠদান করানো হচ্ছে কিনা তা তদারকিরও কোন কমতি ছিলনা। 

এদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা শহরের সবুজপাড়াস্থ কালিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেয়া যায় স্বাস্থ্যবিধি কার্যক্রম শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে বরণ করে নেয়ার জন্য একটি করে চকলেট ও মাস্ক দেয়া হয়। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস আর্জমান আরা ইয়াসমিন সহ অন্যান্য শিক্ষকরাও ছিল তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের যত্ন সহকারে ক্লাশ রুমে প্রবেশে। এরপর শুরু হয় ক্লাশ। মনযোগটা শুরুতেই দেখা গেছে পাঠদানে।  

সেই স্কুলের তৃতীয় শ্রেনীর ১ নম্বর রোলের ছাত্রী নার্গিস আক্তার। তার কাছে আজকের স্কুল শুরুটা জীবনের প্রথম স্কুলে আসার চেয়ে অনেক অনেক বেশী নতুন আমেজের আনন্দ অনুভুতির অভিজ্ঞতা দিয়েছে। প্রথম যে দিন স্কুলে জীবনে পা দিয়েছিল সে সময় ভয় ছিল। আজ সেই ভয় তার মনে হয়নি। মনে হয়েছে এ যেন শিক্ষা জীবনের নতুনত্ব পাওয়া। কারণ দীর্ঘদিন করোনার ভয়ে গৃহবন্দীর মুক্তি মিলেছে। 

একই ভাবে নীলফামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও হরিবল্লব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্যানিটাইজ করে আজকে ক্লাসে পাঠদান করাতে দেখা দিয়েছে। 

হলিবল্লভ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ১ নম্বর রোলের ছাত্রী রজি আক্তার রিতু স্কুলে এসে প্রথম দিনে ক্লাস করে অনেক আনন্দিত। ৪র্থ শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীতে উর্ত্তীণ হওয়ার পর আজকে প্রথম স্কুলে এসে অনেক ভালো লাগছে। এতোদিন অনলাইনে ক্লাস করেছি বলে জানায় সে। 

হরিবল্লভ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজি জীবন নাহার মিনু বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা পাশাপাশি সকল শিক্ষকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করেছি। 

অপরদিকে জেলা শহরের ছমির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের এসএসসি পরীর্ক্ষাথী সুমাইয়া আক্তার তিথি বলেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরে বাড়িতে বসে অনলাইনে ক্লাস করেছি। দীর্ঘ দেড় বছর বাড়িতে থাকায় আমরা মোবাইল ফোন ও টেলিভিশনের প্রতি বেশি আশক্ত হয়ে পড়েছিলাম। ফলে আমাদের মেধাবিকালে কিছুটা ঘাটতে চলে আসে। আজ পূর্ণরায় স্কুলে এসে সহপাঠীদের সাথে দেখা করে অনেক ভালো লাগছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। অপর এসএসসি শিক্ষার্থী সুমাইয়া আনজুম বিনতী জানান, আজ আমরা দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসলাম। স্যারেরা আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের মূল্য গেটে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক দিয়ে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে স্যানিটাইজ করা হয়। এরপর আমরা সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে ক্লাস রুমে প্রবেশ করে। ক্লাস রুমে প্রবেশ করার পর আমাদের ‘জেড’ আকৃতিতে বেঞ্চে বসানো হয়। এই স্কুলের শিক্ষার্থী ফারিন বলেন, স্কুলের ডেকোরেশন দেখে খুব ভালো লেগেছে। গেটের পাশে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই থার্মাল মেশিন দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপেছেন শিক্ষকরা। আবার হাত স্যানিটাইজ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর গোলাপ ফুল ও চকলেট দিয়ে আমাদের বরণ করা হয়।


বিলকিস আকতার। এবারের(২০২১ এর) এসএসসি পরীক্ষার্থী। নীলফামারীর পলাশবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেবে সে। করোনায় দীর্ঘ বন্ধের এই সময়টা নানা ভাবে কাটালেও সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়েছে সে। বই পড়া, অনলাইনে ক্লাশ, এ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করার পাশাপাশি সেলাই শিখে কাজে এসেছে তার। বিলসিক আকতার জানান, বাবা একজন শ্রমজীবী মানুষ। সংসারে অভাব রয়েছে। সেলাই শিখে নিজের পোষাক তৈরি করার পাশাপাশি এখন থেকে অন্যের কাজও করে দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিবেশি একজনের কাছ থেকে সেলাই শিখেছি আমি। আরেকজন মনি আক্তার। একই এলাকার কেবার উদ্দিনের মেয়ে সে। এ বছরই মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেবে এসএসসির। সেও সেলাই শিখে অর্থ উপার্জনের সম্পৃক্ত হতে চায়। 

মনি আক্তার জানায়, বন্ধের সময় কাজে লাগাতে পেরেছি। পড়াশোনার ক্ষতি হলেও সেলাই এর কাজ আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। স্কুল এখন খুলেছে পড়াশোনার চাপ সামলে নিতে হবে। সকাল দশটায় স্কুল শুরু হয় এই বিদ্যালয়ে। ঘন্টা বাজিয়ে ক্লাশ শুরুর আনুষ্ঠানিকতা রুপ পায়। পরে জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ক্লাশ শুরু হয় এসএসসি ২০২১ শিক্ষার্থীদের। 

আজ ৬১জনের মধ্যে উপস্থিত হয়েছিলো ৩৭জন। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে প্রবেশ কালে থার্মার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এরপর সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ক্লাশে প্রবেশ করানো হয়। শ্রেণীকক্ষে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বসানো হয় তাদের। এছাড়া বিদ্যালয়ে ছিলো করোনা মোকাবেলায় সচেতনতা মুলক নানান বার্তা। তবে সবাই এসেছে মাস্ক পড়ে। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তপন রায় বলেন, আজকে ক্লাশ শুরুর প্রথম দিন। অনেকটা জানা অজানার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে অথবা কোথাও বেরাতে,কেউ হয়তো অসুস্থ্য একারণে অনেকে আসেনি। আজকে আড়াই ঘন্টা ক্লাশ করানো হবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। 

দুপুর দুইটা থেকে ২০২২সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাশ শুরু হবে। তাদেরও দুই আড়াই ঘন্টা ক্লাশ করানো হবে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার রায় বলেন, আমরা সরকারী সকল নিয়ম অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী ক্লাশ পরিচালনা শুরু হয়েছে। আমরা চাই যাতে কোন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ না হোক। তিনি বলেন, অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাশ নেয়া হবে। এজন্য রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। করোনা সংকটে তাদের দীঘদিন পর স্কুলে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের সুরক্ষা প্রদানে আমারা সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করেছি। সরকারের দেয়া প্রতিটি নির্দেশনা এ জেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সঠিক ভাবে পালনে আমরা তদারকি করেছি। #


পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 50890136266248099

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item