দফায় দফায় বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি


হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: 

ধানি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। মোট কথা জেলার মানুষদের জীবিকা কৃষি নির্ভর। জেলার নাগেশ^রীতে এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক কৃষক। এবারে পাঁচ দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই কৃষিতে। ধার-দেনা-ঋণ করে করা আমন আবাদের এমন ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। নিজেদের খাবারতো জুটবেই না খাদ্যাভাবে পড়বে পোষা গরুও। এ অবস্থায় সরকার সহায়তা না করলে আগামী মৌসুমে জমি পরিত্যক্ত থাকারও শঙ্কায় কৃষক। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে অবশিষ্ট জমিতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে দপ্তরে। বলা হচ্ছে ধানের জেলায় বন্যার চোটে দিশেহারা কৃষক।

১৬ নদ-নদীর জেলা বলা হলেও এ জেলায় রয়েছে ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক নদ-নদী। এরমধ্যে ১৬টি নদীই ভারত থেকে নেমে আসা। বড় নদী ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও শঙ্কোশও এসেছে ভারত থেকে। এবার ভারতে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে জুন মাস থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পরপর পাঁচ দফা বন্যায় কুড়িগ্রামের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় ইরি, আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন, চিনা, তিল ও মরিচসহ চিনাবাদাম ও সবজি ক্ষেত। এসব ফসলের ক্ষতি কৃষকদের হতাশ করে তুলেছে। 

তথ্য বলছে, প্রথম দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও শেষ দু’দফায় নাগেশ^রী উপজেলায় ৬হাজার ৫৫হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর ১১হাজার ৬শ ৬২হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে নিরুপন করে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে আমন বীজতলা ১হাজার ৪শ ৯হেক্টর, আউশ ৫হাজার ২শ ১৭হেক্টর, সবজি ৯শ ৫৩হেক্টর, পাট ৯হাজার ২শ ৩৫হেক্টর, তিল ৩শ ৫হেক্টর, মরিচ ২শ ৫হেক্টর ও চিনা ১শ ৪০হেক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় এ দুই মিলে ১লাখ ৩৪হাজার ৮শ ৫৮জন কৃষকের মোট ১শ ৪০কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। তৃতীয় দফা বন্যা শেষে জেলার ২৭হাজার ৭শ ৬১জন কৃষককে সবজি বীজ, ১শ ৫টি কমিউনিটি বীজতলা ও শতাধিক ভাসমান বীজতলা এবং ১শ ১২টি ট্রে বীজতলা প্রস্তুত করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমন চারা বিতরণ করে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি বিভাগের সহায়তা ও নিজেদের চেষ্টায় আমন চাষ পূনরায় শুরু করে জেলার কৃষক। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন নিয়ে নতুন করে আমনের চারা লাগানোর পর আবারও অতি বৃষ্টিতে শুরু হয় বন্যা। সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফা বন্যা একই সাথে ভারি বৃষ্টিতে নিচু এলাকার আমনের আবাদ আবারও তলিয়ে গেলে উঠতি আমন ধানের চারা পানির নিচে তলিয়ে থাকায় অনেক আবাদ পঁচে নষ্ট হয়। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে সেপ্টেম্বরের দুই দফায় ১৯হাজার ২৩হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। 

নাগেশ^রী উপজেলায় ৬হাজার ৫৫হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়। এখনও অনেক আবাদ পানির নিচে রয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে পানি নামার পর থেকে ক্ষতি নিরূপণ করতে কাজ করছেন তারা। তবে এবারে ক্ষতির পরিমান বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিস্ট সকলে। এ অবস্থায় মুলধন হারানোর শঙ্কায় থাকা কৃষকরা বলছেন সরকারীভাবে সহায়তা না পেলে আগামী মৌসুমে কোন আবাদই তারা করতে পারবেনা না অর্থের অভাবে। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামীতে সরিষায় জোর দেওয়া হবে। কৃষকদের সহযোগিতার জন্য দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাষের মাজিয়া বেগম জানান, প্রথম দফার বন্যায় ৪বিঘা কাউন আবাদ নষ্ট হয়েছে তার। পরে চড়া দামে আমন চারা কিনে ২বিঘা জমিতে লাগানোর পর বন্যায় আবারও নষ্ট হয়। সামনের দিনগুলোতে কেমনে চলবে পরিবার এ দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তার। কচাকাটার কৃষক আব্দুল বাতেন জানান, ‘প্রথম বন্যায় ১৫বিঘা পাট নষ্ট হয়। পরে ধানও পঁচে যায়। অনেক ঋণে পড়েছেন তিনি। ফসল নেই শোধ কেমনে হবে এ চিন্তায় ঘুম আসে না। বলেন, সরকারি সহায়না না পেলে আাগামী মৌসুমে আবাদ করার সামর্থ্য নেই। সবজি চাষি আতোয়ার জানান, ৩বিঘা মুলা ও লাল শাক অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। যাতে তার ক্ষতি প্রায় ৩০হাজার টাকা। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের খামার এলাকার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমার প্রায় ১০একর জমির ধান পঁচে কাঁদার সাথে মিশে গেছে। এতো ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার মত কোন উপায় নেই। সরকারি প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, আমন মৌসুমে জেলায় ১লাখ ১৫হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ১লাখ ১৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। বন্যার ক্ষতি লক্ষমাত্রা অর্জনে শঙ্কা তৈরী করেছে। তবে অবশিষ্ট আবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ। জানান, আর্থিক ক্ষতির পরিমান নিরুপন শেষে সহায়তা প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হবে। কুড়িগ্রাম খামারবাড়ির (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিঞা জানান, এখন পর্যন্ত শেষ দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জন্য কোন প্রকার প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতে মাঠ পর্যায় কাজ চলছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।  


পুরোনো সংবাদ

কৃষিকথা 6892261506673718425

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item