চিলাহাটি-হলদিবাড়ি নবনির্মিত রেল লাইনে বাংলাদেশের ইঞ্জিনের সাফল্যের সঙ্গে মহড়া অনুষ্ঠিত


ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, চিলাহাটি থেকে॥
সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হল বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি ও ভারতের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি ব্রডগেজ সেকশন রুটে নবনির্মিত রেল লাইনটি। 

আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর/২০২০) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের (জিরো ল্যান্ড) বাংলাদেশে রেলওয়ের ইঞ্জিনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এই মহেন্দক্ষণে বাংলাদেশের ইঞ্জিনটি নো-ম্যানস ল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যান ইঞ্জিন চালক(লোক মাস্টার) মনিরুল ইসলাম ও সহকারী চালক আব্দুল মান্নাফ। 



এর আগে বাংলাদেশ অংশের নতুন রেলপথটির ইঞ্জিনের মহড়া সূচনায় চিলাহাটি স্টেশন থেকে ফিতা কেটে উদ্ধোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী। সেখানে মোনাজাত পরিচালনা করেন রেলের পাকশি বিভাগের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। দোয়া শেষে জেলা প্রশাসক সহ ইঞ্জিনে করে মহড়ায় অংশ নেন নীলফামারী ৫৬ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মামুনুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল-ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, পাকশী বিভাগীয় বানিজিক কর্মকর্তা আনন্দ মোহন চক্রবর্তী, পাকশী বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকম প্রকৌশলী রুবাইয়াত শরীফ, বাংলাদেশ রেলওয়ে পার্বতীপুর চীফ ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম, চিলাহাটি রেলপথ নির্মানের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন ও উপসহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম ও গনমাধ্যম কর্মীরা। 


ভারতের হলদিবাড়ি সীমানার নোম্যান্স ল্যান্ডে বাংলাদেশের মহড়ার ইঞ্জিনটি পৌছলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান, ভারতীয় উত্তরপূর্বসীমান্ত রেলের চীফ ইঞ্জিনিয়ার ভিকে সিনহা, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন) এনজেপি ভিকে মিনা, ডি.এস.টি.ই সুভাস সরকার, সিনিয়র এডিএন ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ কুমার, এ.এস.টি.ই বিনোদ কুমার, সিনিয়র মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ার বিপ্লব ঘোষ প্রমুখ। সেখানে ঘন্টাখানে উভয়দেশের প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নোম্যান্ড ল্যান্ডে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রায় একঘন্টাব্যাপী আলোচনায় অংশ নেন। 


নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সাফল্যের সঙ্গে ইঞ্জিন মহড়া হল। আশা করছি চলতি বছরের বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অচিরের এই পথে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করবে।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী আল-ফাতাহ্ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কোন রকম সমস্যা ছাড়াই ট্রায়াল রান স¤পূর্ণ হয়েছে। আমরা সেখানে ঘন্টাখানিক অবস্থান করেছি। রেল লাইনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। চিলাহাটি রেলস্টেশনে পৃথকভাবে ২ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার লুপলাইন বিছানোর কাজ বাকী রয়েছে। এটি ১৬ ডিসেম্বরের আগে শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন চিলাহাটি থেকে  ঢাকা ও খুলনা পর্যন্ত রেলপথ আধুনিকায়ন রেলপথ রয়েছে। চিলাহাটি থেকে  ঢাকা খুলনা রাজশাহী সরাসরি ট্রেন চলাচল রয়েছে। 


চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেলপথ নির্মানের বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহীম চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী নতুন আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ উদ্বোধন করবেন এবং শুরুতে পণ্যবাহী ট্রেন চলবে। এছাড়া আগামী ২০২১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোরপরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান এর আগে গত ৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভারতীয় উত্তরপূর্বসীমান্ত রেলের ইঞ্জিনের মহড়া সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। তিনি বলেন আমরাও আজ সাফল্যের সঙ্গে ইঞ্জিনের ট্রায়াল শেষ করলাম। 


সরেজমিনে দেখা যায়,আন্তর্জাতিক সীমান্তের স্থানে যেখানে দুই দেশের রেললাইন সংযুক্ত হয়েছে সেইস্থানটি বিশেষ ভাবে চিহিৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অংশে লাল-সবুজ ও ভারতীয় অংশে লাল সাদা। তারপর নো-ম্যান্সল্যান্ড। নো-ম্যান্স ল্যান্ড পেরিয়ে তারকাটা বেড়া। তারকাটার বেশকিছু অংশ কেটে সেখানে ভারতের পক্ষে নির্মান  করা হয়েছে খাচার মতো করে দরজা। দুই দেশে ট্রেন প্রবেশের সময় সেই দরজা খুলে যাবে।


তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এই পথেই চলত ট্রেন। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর দুই দেশের সরকার  এই রেলপথ ফের চালু করতে উদ্যোগী হয়। ৫৫ বছর পর পুরনো হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেল রুটে ইঞ্জিনের মহড়া দেখতে দুই দেশেরই বহু মানুষ সীমান্তে হাজির ছিলেন এ দিন। অনেকেই পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন এ দিন। বাংলাদেশের নাগরিক প্রবীনব্যাক্তি আব্দুর রাজ্জাক বসুনিয়া বলেন, ছোটতে এই লাইন দিয়ে ট্রেন চলত তা দেখেছিলাম। শুনেছিলাম ট্রেনের হুইসেল। দীর্ঘ ৫৫ বছর আর সেই হুইসেল শোনা যায়নি। তাই আজ নিজের চোখে দেখতে এসেছি। আশা করি, দ্রুত হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথ দিয়ে চলবে ট্রেন। এতে দুই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সম্প্রীতির মেলবন্ধনও ঘটবে।

ইঞ্জিন মহড়ার সময় সীমান্তে কড়া নজরদারীতে ছিল দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ।

এদিকে সাফল্যের সঙ্গে দুই দেশের রেল ইঞ্জিনের মহড়া শেষ হওয়ায় ওই রুটে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের অপেক্ষা মাত্র। # 


পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 3284517215329947530

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item