বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনিশ্চয়তা দূর হলো মেধাবী শিক্ষার্থী সুকুমার রায়ের

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
 হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান সুকুমার রায়। সে এবারে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভর্তির সুযোগ পেয়েছে । কিন্তু টাকার অভাবে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তিতে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তাঁর। তাকে নিয়ে মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। “অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে  ভর্তি হতে পারছেন না সুকুমার রায়” শিরোনামে  প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনটি নজরে আসে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস. এম গোলাম কিবরিয়ার। তিনি  মঙ্গলবার সকালে খবরটি পত্রিকায় দেখেই মেধাবী শিক্ষার্থী সুকুমার রায়কে তাঁর দপ্তরে ডেকে পাঠান। এ সময় তিনি সুকুমার রায়ের মুখ থেকে তাঁর লেখাপড়ায় এ পর্যন্ত আসার বিষয়ে বিস্তারিত অবগত হন। পরে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুকুমার রায়ের ভর্তির জন্য তাঁকে নগদ ৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। সৈয়দপুরে মটর মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে আসা নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের সহায়তার ওই অর্থ সুকুমার রায়ের হাতে তুলে দেন। এ সময় সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ্জাহান পাশা উপস্থিত ছিলেন।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার ৩ নম্বর বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর বালাপাড়া মুড়ি বিক্রেতা দীনবন্ধু রায়ের  তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছেলে সুকুমার রায়। তাঁর বড় ভাই  বিষ্ণুপদ রায় নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে রসায়ন বিদ্যা বিষয়ে অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছে। আর মেঝো বোন দীপা রানী রায় ডিগ্রীতে অধ্যয়ন করছেন সৈয়দপুর ডিগ্রী মহিলা মহাবিদ্যালয়ে। ফেরি করে মুড়ি বিক্রেতা দীনবন্ধুর যৎসামান্য আয়ে পরিবারের ৫ সদস্যের তিন বেলা খাবার তেমন জোটেনা। সেখানে পরিবারের তিন সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করা অনেকটাই কষ্টকর। তারপরও  হতদরিদ্র দীনবন্ধু রায় প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম ও অনেক কষ্ট সহ্য করে তিন ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগান দিয়ে আসছেন। অত্যন্ত মেধাবী সুকুমার রায় খেয়ে না খেয়ে পরিবারের শত অভাব-অনটনের মধ্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।  নিজের চেষ্টার আর অধ্যবসায়ে সে  উপজেলার  লক্ষণপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায়  জিপিএ - ৫ পায়। এরপর  সে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসিতেও পেয়েছে জিপি এ ৪ দশমিক ১৭।  পরে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। এবারের ওই বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দুইটি ইউনিটে মেধা তালিকায় স্থান পায় সুকুমার। আজ (বুধবার) ছিল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি শেষ দিন। কিন্তু গত সোমবার পর্যন্ত তাঁর ভর্তিতে ছিল  অনেকটাই অনিশ্চয়তা । কারণ ওই দিন পর্যন্ত সে ভর্তি টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। গতকাল মঙ্গলবার পত্রিকায় প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম গোলাম কিবরিয়ার মতো অনেকেইে মেধাবী সুকুমার রায়ের পাশে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন। এদের মধ্যে একজন হলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তাঁর নির্দেশে অধিদপ্তরের পরিচালকের (অর্থ ও প্রশাসন) সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিস এর কল্যাণ তহবিল হতে ১৫ হাজার টাকা, রেলওয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ১৫ হাজার টাকা, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা মন্ডল ২ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মুঠোফোনে যোগাযোগ সঙ্গে করে মেধাবী সুকুমার রায়ের  উচ্চ শিক্ষায় আর্থিক সহযোগিতা আশ^াস দেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস. এম গোলাম কিবরিয়া জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীর সুকুমার রায়ের উচ্চ শিক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।       

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 4946299368066461836

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item