নিদারুণ কষ্টে নদীপাড়ের লাখো মানুষ উত্তরাঞ্চলে পানিশূণ্য ৫০ নদী

মামুনুররশিদ মেরাজুলঃ   

এক সময় যেসব নদীতে নৌ চলাচল করত। গড়ে উঠেছিলো নদী কেন্দ্রিক বন্দর। মাঝি-মাল্লার কণ্ঠে ভেসে আসতো ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি ও ভাটিয়ালির সুর। নদী নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতো। অথচ বর্তমানে পানি শূণ্যতায় মৃত্যুর মুখে ধাবিত হয়ে পাল্টে গেছে সেই নদ-নদীর সার্বিক চিত্র। বদলে গেছে নদীর মানুষের আরাম আয়েশের জীবন সংগ্রাম।
বর্তমানে খরস্রোতা তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় অর্ধশত নদ-নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে নদী অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ নিজেদের পেশা হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসেছে। অনেকেই সংসারের অভাব-অনটনের কারণে গ্রামেগঞ্জে ফেরি করে হাড়িপাতিল, খেলনাসহ বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন। এদিকে পানি সংকটের কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে গিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। অথচ এসব নদীতে এক সময় পানি প্রবাহের গতি এতোটাই প্রবল ছিল যে, নদী পার্শ্ববর্তী হাজার হাজার হেক্টর জমি বছরের ৬ মাসই পানির নিচে তলিয়ে থাকতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ঘাঘট, ধরলা, করতোয়া, দুধকুমার, স্বতীঘাঘট, নীলকুমার, বাঙালি, বরাই, মানাস, কুমলাই, ধুম, বুড়িঘোড়া, সোনাভরা, হলহলিয়া, লহিতা, ঘরঘরিয়া, নলেয়া, জিঞ্জিরাম, ফুলকুমার, কাঁটাখালী, সারমারা, রায়ঢাক, যমুনেশ্বরী, চিতনী, মরা করতোয়া, ইছামতি, আলাই, কুমারীসহ ৫০টি নদ-নদী মৃত প্রায়। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব নদ-নদী।
চারিদিকে শুকিয়ে যাওয়ায় নদ-নদীগুলোর হাজার হাজার হেক্টর জমি ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে কমে গেছে আবাদি জমির পরিমাণও। দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী নির্ভর নানান পেশার মানুষগুলো।
রংপুর মহানগরী থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়ন তিস্তা নদী বেষ্টিত। বর্তমান মৌসুমে তিস্তা নদী ধু-ধু বালুচরে পরিণত হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের শত শত কৃষক, জেলে, মাঝি-মাল্লারা। এদিকে ডালিয়া থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল বালুচর। পানির অভাবে তিস্তা প্রকল্পে আধুনিক সেচ সুবিধা থাকলেও পানি প্রবাহ না থাকায় তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। নদীর ওপর নির্ভরশীল এসব মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম হাহাকার। গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, সদর থেকে পীরগাছা উপজেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত ছিল মানাস নদী। বর্তমানে এ নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। একই অবস্থা ঘাঘট নদীর। নগরীর অদূরে ঘাঘট নদীকে কেন্দ্র করে এক সময়ের গড়ে ওঠা নদী বন্দর বিলীন হয়ে গেছে।  ১৮২০ সালের পর থেকে এ অঞ্চলের প্রমত্তা করতোয়া নদী ক্ষীণ হয়ে আজ প্রায় মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। করতোয়া গাইবান্ধা ও বগুড়ার ওপর দিয়ে প্রবাহিত।  পীরগাছা উপজেলা দিয়ে এক সময়কার প্রবাহিত আড়াইকুমারী নদীর কোনো অস্তিত্বই আজ আর নেই। শুধুমাত্র রংপুর বিভাগের মধ্যেই প্রায় ৩৪টি নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে পড়েছে কৃষি ক্ষেত্র। প্রতিটি জেলায় দেখা দিয়েছে মৎস্য ঘাটতি। নদ-নদীগুলো মরে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় উত্তরাঞ্চল জুড়ে মরুকরণ সৃষ্টির লক্ষণ দেখা দেয়ায় শংকিত হয়ে পরেছেন নদী গবেষক ও পরিবেশবিদরা। উত্তরাঞ্চলে নদ-নদী, উপনদী, শাখা-প্রশাখা, ছড়ানদী এবং নদীখাতগুলোকে বাঁচিয়ে তুলতে পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি আলোকিত সময়কে বলেন, ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নদীগুলো পুনঃরুদ্ধার করতে অবৈধ বাঁধ অপসারণ, তলদেশ খনন, ড্রেজিং মাধ্যমে উৎস মুখ খোলাশা করে কৃত্রিম ক্যানেলের মাধ্যমে ছোট নদীগুলোর সঙ্গে বড় নদীগুলোর সংযোগ করা প্রয়োজন। নদী কেন্দ্রিক সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে না পারলে এক সময় উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি । 

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 4874962236869201965

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item