তামাক চাষকে ‘লাল’ কার্ড

মামুনুররশিদ মেরাজুল,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
     
তামাক চাষে খ্যাত বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে এবার পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বেশি লাভের আশায় তামাক চাষ করা হলেও এবার এই চাষে স্বাস্থ্যহানীর পাশাপাশি অন্য ক্ষতিকর দিকগুলো বিষিয়ে তুলেছে কৃষকদের। তাইতো তামাক চাষকে ‘লাল’ কার্ড দেখিয়ে তামাকের জমিতেই একসাথে চাষ হচ্ছে দুই ধরনের সফল। এতে একদিকে অধিক লাভ হচ্ছে তাদের। বাড়ছে জমির উর্বরতা শক্তিও। রংপুরের তারাগঞ্জ, পীরগাছা, মিঠাপুকুর উপজেলার পাশাপাশি  লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার বেশ কিছু এলাকায় তামাকের জমিতে একসাথে ভুট্টা আর আলু চাষ করতে দেখা গেছে কৃষকদের। 
গত বছর ভালো ফলন না পাওয়ায় অনেক চাষীই এবার গুটিয়ে নিয়েছেন তামাক চাষ। কেউ কেউ তামাকের চাষ কমিয়ে ভুট্টা, আলু, গম, পেয়াজ ও রসুনসহ সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। আর এতে সহায়তাসহ পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
তামাক চাষ করে জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় গতবছর অনেক লোকসান হওয়াতে এবছর তামাক চাষ করেনি মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি সেড়–ডাঙ্গা এলাকার কৃষক আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, তামাক চাষে যেমন লাভ হয়, তেমন ক্ষতিও হয়। জমির উর্বরতা থাকে না। শরীরের স্বাস্থ্যহীনতার পাশাপাশি পরিবেশের এবং সমাজের ক্ষতি হয়। এছাড়া তামাক বিক্রির সময়ে অনেক ঝামেলা সামলাতে হয়। তাই তামাকের জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করেছি। আশা করছি ভালই লাভ হবে। তারাগঞ্জের জিকরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কোম্পানীর লোভনীয় আশ্বাসে তামাক চাষ করি। কিন্তু বিক্রয়ের সময় অনেক ঝামেলা হয়, তাই এবছর চামাক চাষ করিনি। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগোত না বুজিয়্যা টাকার লোবেতে তাংকু চাষ করছি। এ্যালা তাংকু চাষ বাদ দিচি। তাংকুর বদলে অন্য ফসল চাষ করি। দেহের অবোস্তাও ভালো আছে। হামার জমিও ভালো আছে।’
এদিকে লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবীর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘লোভোতপরি হামরা (আমরা) এতদিন তামাক চাষ করছি। এবার তামাকের জমিত একসাথে ভুট্টা আর আলু চাষ করোছি।’ প্রান্তিক এই কৃষক জানান, তামাক চাষ না করে এবছর ৩৩ শতক জমিতে একই সাথে এক জমিতে ভুট্টা আর আলু চাষ করেছেন। এতে অধিক ফলনের পাশাপাশি লাভবান হবার সম্ভাবনা রয়েছে তার। কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডের কৃষক বাবুল মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরে ভার্জিনাল তামাক চাষ শুরু করে ভালই মুনাফা পেয়েছেন। কিন্তু এবছর তিনি তামাকের পরিবর্তে ৫ বিঘা জমিতে দেশি আলুর চাষ করেছে। ভাল ফলন হয়েছে বলেও জানান।
সরেজমিনে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর সবচেয়ে কম তামাক চাষ হয়েছে। এখানে তামাকের পরির্বতনে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা, আলু, গম, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া ও বাদাম চাষ হয়েছে।
একই জমিতে একসাথে দুই ফসল চাষ হওয়ায় এই প্রযুক্তি চাষীদের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে উল্লেখ্য করে হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শ্রী প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, চাষীরা যাতে তামাক চাষ না করে তাই এ বছর উপজেলায় পরীক্ষামুলকভাবে প্রায় ২০ হেক্টর  জমিতে দুই ফসল চাষ করা হয়। এ বছর আলু চাষ হয়েছে ৯ শত ৩৫ হেক্টর। ভুট্টা ৮ হাজার ৫শত ৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। উপজেলায় ৫টি প্রকল্পে ভুট্টার সাথে আলু সাথী ফসল হিসেবে চাষ হয়।
জানা গেছে লালমনিরহাটে গত বছরে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হলেও এ বছর তা কমিয়ে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে। এতে করে আগামীতে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে বিষবৃক্ষ তামাক চাষ কমে আসবে। চাষিরা ঝুঁকে পড়বে নতুন ফসল চাষে।

পুরোনো সংবাদ

লালমনিরহাট 3854384293881183637

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item