কারবালার প্রান্তরেও মনে হয় রাসেলরা রক্ষা পেয়েছিলো”-..........প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ডেস্ক:
১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডে রক্ষা পায়নি শিশু রাসেলও। এই হত্যাকাণ্ড কারবালার হত্যাকাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ। কারবালার প্রান্তরেও মনে হয় শিশুদের রেহাই দেয়া হয়। কিন্তু ৭৫ সালে ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রাসেল। বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিনে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এসময় তিনি আরো বলেন, জন্মের পর থেকেই রাসেল বড় হয়েছে সবার ভালোবাসা নিয়ে। কিন্তু কতটা পেয়েছে পিতৃস্নেহ? ৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তার আগে কারাভোগের সময়গুলোতে সে কতটা বাবাকে পেয়েছে? কারাগারে আব্বার সঙ্গে দেখা করতে গেলে দেখতাম সে বাবাকে ছেড়ে আসতে চাইতো না। বাড়ি এসেও সবসময় আব্বা, আব্বা করতো। পরে মা তাকে বোঝানোর জন্য মা বলতো, আমি তোমার মা, আমি তোমার আব্বা। পরে দেখতাম মাকেও আব্বা বলে ডাকতো সে।

ক্যান্টনমেন্ট থেকে গ্রেফতারের পর ছয় মাস আব্বার কোনো খোঁজখবর পেলাম না। ৬৯ এ মুক্তি পেলেন আব্বা। ৭০ সালে নির্বাচন। বাড়িতে আব্বা থাকলেই দেখতাম রাসেল খেলার মাঝে মাঝে আব্বা কোথায় আছে সেটা দেখতে আসতো। বাবাকে হারানোর একটা ভয় সবসময় ছিলো তার মধ্যে।

স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর পিতৃস্নেহ পেয়েছে রাসেল। রাসেল নাম আমার মায়ের রাখা। মা পড়াশোনার তেমন সুযোগ পাননি কিন্তু পড়তে খুব ভালোবাসতেন। ইংরেজি পড়াশোনায় তার ততটা দক্ষতা ছিলো না। আব্বা বার্টান্ড রাসেলের দর্শনের খুব ভক্ত ছিলেন। দেখতাম তার লেখা বই অনুবাদ করে মাকে শোনাতেন আব্বা। শুনে শুনে বার্টান্ড রাসেলের ফিলসফির প্রতি অনুরক্ত হন মা। পরে তিনিই রাসেলের নামটি রাখেন।

কবিতা আবৃত্তির শখও ছিলো আব্বার। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করতেন আব্বা। ৭৫ এ একসঙ্গে সবাইকে হত্যার কারণ ছিলো বঙ্গবন্ধুর একটা রক্তও যেন জীবিত না থাকে সেটা নিশ্চিত করা। ভয়াবহ সেই দিনে সবার শেষে কষ্ট দিয়ে রাসেলকে হত্যা করা হয়। বাবার লাশ, মায়ের লাশ, ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে সেসব দেখিয়ে তারপর তাকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে।

রাসেলের আরো স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ওর কত কত ছবি তুলতাম আমরা ভাইবোনেরা। সেসব কিছুই আর আমাদের কাছে নেই। সবই আমরা হারিয়েছি বাড়িঘর লুটপাট হওয়ার সময়। ও আমাদের কাছে ছিলো একটা খেলার পুতুল। ও ছিলো আমাদের সবার প্রিয়। কিন্তু সেই ছোট ভাইকে হারিয়ে আমরা দুই বোন এখনো বেঁচে আছি।

রাসেলকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করতো বড় হয়ে কি হবে, বলতো আর্মি হবো। ভাইদের দেখেছে যে যুদ্ধে গেছে সেটা দেখেই তার এমন মনে হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সে আর্মি বাহিনী গড়ে তুলতো। তাদের পোশাক দিতো। খাবার দিতো আবার প্রতিদিন প্র্যাকটিস শেষে তাদের হাতে এক টাকা দুই টাকা দিতো। কাকা সবসময় তার হাতে নতুন নোট দিতো তাদের দেওয়ার জন্য। আম্মা পোশাক বানিয়ে দিতেন, কখনো ঢাকা থেকে মিষ্টি নিয়ে যেতেন ওদের জন্য। আজ বেঁচে থাকলে রাসেল কত বড় হোত সেটাই মাঝে মাঝে চিন্তা হয়।

এখনকার স্বপ্নের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর অপরাধ একটাই ছিলো যে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। হত্যাকারীদের দোসর আমাদের দেশের মানুষ। যারা বাড়িতে প্রতিনিয়ত এসেছে, খেয়েছে, থেকেছে তারাই একদিন বাড়িতে দানবের বেশে আসলো। এবং পুরো পরিবারকে হত্যা করলো। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচেছি। আমরা এই বাংলাদেশকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায়। চায় এদেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না। জ্ঞানে বিজ্ঞানে বিশ্বসেরা হবে। সেটাই ছিলো আমার বাবার স্বপ্ন। আগে মানুষ খাবার পেতনা, কতজন খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে। দেশের সব জায়গায় জাতির পিতা গেছিলেন। কাছ থেকে দেখেছেন মানুষের দুর্দশা। সেসব থেকে দেশকে রক্ষা করতে চেয়েছেন। জাতির পিতার হত্যার পর আবার দেশ গেলো বিপথে। সেই জায়গা থেকেই দেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। বাবা বলতেন বাংলাদেশ ভিক্ষুক থাকবে না। ৭৫ এর পর এদেশ আবার ভিক্ষুক হয়েছিলো। সেই জায়গা থেকে আবার দেশকে ফিরিয়ে এনেছি আমরা।

শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিশুদের বলবো- তোমাদের ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে, যুগের সঙ্গে মিলিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যেতে হবে। জঙ্গিবাদ এদেশে থাকবে সেটা আমরা চাইনা। জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় আঘাত আমরা পেয়েছি। একটি অন্ধকার যুগের অবসান ঘটাতে পারে শিক্ষা। সেটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা জাতি। আমরা বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে চলবো। আলোর পথে মশাল তোমরাই বহন করে নিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলো, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আসলেই কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 2351620796775615620

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item