ঈদ আনন্দে প্রকৃতির বিনোদন কেন্দ্র গুলো পর্যটকদের পদভারে মুখরিত


ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৪ সেপ্টেম্বর॥ কৃত্রিম বিনোদন কেন্দ্রের চেয়ে প্রকৃতির বিনোদনের আনন্দ উল্লাসের ভিন্নতা রয়েছে ভিন্নতার আমেজ। তাই ঈদের আনন্দের সাথে প্রকৃতির আলো বাতাস আর বাস্তবতা উপভোগ করছে হাজারো দর্শনার্থী।
এবারের ঈদে নীলফামারীর তিস্তা অববাহিকার দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ, ১৫৫ একর জমির উপর বিন্যাবতী রানীর বিশাল দিঘি নীলসাগর, ৮০০ বছর আগের পাল বংশের গড় ধর্মপালের পুরান কৃর্তি এবার পর্যটকদের বেশী কাছে টেনে নিয়েছে। তাইতো এই সব প্রকৃতির বিনোদন কেন্দ্র গুলোতে চলছে স্বপরিবারের মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পশু কোরবানীর ঈদের দিন সকল ব্যস্ততা কাটিয়ে এখন চলছে ঘুরে বেড়ানোর উৎসব।
আজ বৃহস্পতিবার ঈদের তৃতীয় দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ প্রিয় মানুষদের মিলন মেলায় ভরপুর এসব এলাকা। দুরদরান্ত হতে ছুটে আসছে মানুষজন। আর তাই এসব এলাকা শিশু থেকে শুরু করে, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরিব-ধনী, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল বয়সের ও সর্বস্তরের মানুষদের এ যেন সত্যিই এক মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।
পর্যটকদের বহনকারী বিভিন্ন সাজে সজ্জিত গাড়িগুলোতে শোভা পাচ্ছিলো নানান রঙ্গের বর্ণিল কাগজ ও পরিচয়ের ব্যানার। বাস, মাইক্রো, জিপ, পিকআপ, নছিমত করিমন, ইজিবাইক ভটভটি মোটর সাইকেল, প্রাইভেট গাড়ি, আর পায়ে হাটা মানুষদের উপস্থিতে যেন মনের খোরাকের মেটাবার সুন্দর উপভোগ্য এক পরিবেশ। এসব যান গুলোর পোয়া বারো। এসব যানে ভ্রমন পিপাসু মানুষজন প্রকৃতির বিনোদন কেন্দ্রগুলো সরব করে তুলেছে।

 
তিস্তা অববাহিকাঃ- তিস্তা অববাহিকায় স্থানীয় বাসিন্দারা নানান রকম খাবার দোকানসহ বাড়তি বিনোদনের জন্য বসিয়েছেন চর্কিখেলা, মিনি লটারিখেলা, বেলুন টার্গেট সুট খেলাসহ বিভিন্ন সামাজিক খেলা। আর এখানে বাড়তি বেচাকেনায় দোকানীরাও বেশ খুশি। আরো বেশি বিনোদন উপভোগের জন্য নদীরধাড়ে এখানে প্রস্তুত রয়েছে  স্পিটবোড ও নৌকা । উজান হতে তিস্তার ঢেউয়ের মাতনের সাথে প্রকৃতির নদীর বাতাস শরীরের দোলা লাগাতে নৌকা বা স্পিট বোডে জনপ্রতি মাত্র ১০/২০ টাকার বিনিময়ে দর্শনার্থীদের নিয়ে তিস্তা নদীর অথৈই পানির বুকজুড়ে ঘুরে নিয়ে আসছে।

আছে তিস্তাপাড়ের নদীর হাওয়ায় মোবাইলে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কি যে মজা তা প্রকৃতির আলো বাতাস জীবনকে ধন্য কর তুলছে। এসবের সাথে রয়েছে নিজেদের রান্না করে  সঙ্গে নিয়ে আসা এবং খোলা মাঠের গাছের ছায়ায় এক সাথে খাওয়া দাওয়া। মুক্ত পরিবেশে মন খুলে খোশ গল্প করা আনন্দের মাত্রাকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতি।

 
নীলসাগরঃ- বিন্নাবতি রানীল নীলসাগর দিঘির বিশাল এলাকায় এতই অবস্থা। পুরো দিঘি ঘুরে দেখতে রয়েছে ঘোড়ার গাড়ী। এখানেও রয়েছে স্পিটবোড। ভাড়া ২০টাকা। দিঘি ভর্তি ঠান্ডা পানির পরশ মানুষের মন প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ গোছলেও নেমে পড়ছে।

ধর্মপালের গড়ঃ- নীলফামারীর জলঢাকায় রয়েছে ধর্মপাল রাজার গড়। চলতি সনে সেখানে খনন করে পাওয়া গেছে ধর্মপাল রাজার মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া মন্দির, রাজপ্রাসাদ সহ অরেক কিছু। এগুলো সংরক্ষন করছে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়। এখানেও এসব পরানকৃর্তি দেখতে ছুটে আসছে মানুষজন।

এসব এলাকায় ঘুরতে আসা অনেকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা নীলফামারীর তিস্তা অববাহিকার তিস্তা ব্যারাজ, নীলসাগর ও ধর্মপাল রাজার গড় পরিদর্শন করেছে স্ব স্ব পরিবারে। দিনাজপুর বগুড়া, রাজশাহী, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা জয়পুরহাট হতেও অনেক পরিবার এসেছে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে।
সকলেই এক বাক্যে বলেছেন কৃতিম বিনোদন কেন্দ্র গুলোর চেয়ে প্রকৃতির বিনোদন কেন্দ্র গুলো শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে।
তিস্তা অববাহিকার এলাকার রফিকুল, লেবু, সামিউল সহ অনেকে বললেন- শুধু ঈদেই নয়, বিশেষ কিছু দিন ও দিবসে, তিস্তা অববাহিকার তিস্তা ব্যারাজ ভরে উঠে মানুষজনের পদভারে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বললেন, প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবে এখানে মানুষজন প্রকৃতির বিনোদনে ভিড় করে। এবার ভিড়টা আরো বেশী। তাই আনসার সদস্য সহ পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দর্শনার্থীদের সেবায় নিয়োজিত রাখা হয়।
এখানে রয়েছে শিক্ষার জানার অনেক বিষয়। অসংখ্য শিক্ষার্থী তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম কি ভাবে পরিচালিত হয় তাও ঘুরে ঘুরে দেখছে এবং কোন জিজ্ঞাসা থাকলে তা পানি উন্নয়ন বোডের কর্মকর্তাদের নিকট হতে জেনে নিতে পারছে।

ধর্মপাল গড় এলাকার সতিষচন্দ্র রায় বললেন, আগে এখানে লোক আসতো না। এখন হাজারো মানুষজন ছুটে আসছে ধর্মরাজার গড় দেখতে। মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া ধর্মরাজার মন্দির রাজপ্রাসাদ বেড়িয়ে আসায় মানুষজন এসব দেখতে আসছে। বিনা টিকেটে মানুষজন প্রকৃতির আলোবাতাসে এসব ঘুরে ঘুরে দেখছে।

নীলসাগর দিঘি এলাকাটি রক্ষনা বেক্ষন করা হয় নীলফামারী জেলা প্রশাসনের পক্ষে। এখানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সকল সুবিধা রেখে দর্শনার্থীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। কেউ রাত্রীযাপন করতে চাইলে এখানে রয়েছে রেষ্ট হাউস। কেউ মাছ শিকার করতে চাইলে তারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4654823739248381628

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item