বন কর্মীদের দূর্নীতি, প্রতারণার শিকার ডোমার উপজেলার বনভূমির জমির মালিকগণ

আব্দুর রউফ,উন্নয়ন কর্মীঃএলাকাবাসী ও বন বিভাগের বিভিন্ন  সময়ে প্রকাশিত গেজেট অনুলিপি ও নোটিশের মাধ্যমে জানা যায় ১৯৫৯ সালের ইষ্ট পাকিস্তান ব্যাক্তিগত বন অধ্যাদেশ নং ৩৪ এর উপধারা ১১ এর অধীন জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় ব্যাক্তি
মালিকানাধীন জমিতে উপধারা ১১ এর ৩ অনুচ্ছেদ এর ভিত্তিতে ডোমার উপজেলায় ৪৯২.৭৬ একর জমি বন বিভাগ জমির মালিকদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করেই উপজেলার গোমনাতী, ভোগডাবুড়ী, বোরাগাড়ী ও ডোমার সদর ইউনিয়নের আবাদী কৃষি জমি, বসত বাড়ী, পুকুর ব্যাক্তি মালীকানাধীন সিএস, আরএস খতিয়ান ভুক্ত  জমি পতিত দেখিয়ে ১৯৬১-৬৬ সময় কালে তালিকা ভুক্ত করেন। উক্ত জমি ব্যাক্তিগত বন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদানের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকতার অধীনে ১০০ বছরের জন্য অর্পন করে, একতরফা গেজেট প্রকাশ করেন। পাকিস্তান আমলে বনায়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হলেও জমির মালিকদের বাধার মুখে তা থেমে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে মালিকদের ৫০% শেয়ার দেয়ার কথা বলে এক প্রকার জোর করে বনায়ন করা হয়। অধ্যাদেশ এ ভূমি মালিকদের অধিকার সু-রক্ষায় আপিল কমিটিতে অংশগ্রহণ, আপিল আবেদনের সুযোগ, কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। দরিদ্র ভূমি মালিকদের ক্ষতিপুরণ, ঋণ প্রদান এবং বনায়নের আয়ের ৫০% শেয়ারের কথা বলা থাকলেও বন বিভাগ এই আইনের কোনটাই বাস্তবায়ন করেন নাই। জমি ফেরত চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলেও ভূমি হারা দরিদ্র এই মানুষ গুলোর কষ্টের কথায় কেহই গুরুত্ব দেয়নি। ্২০০২ সালে প্রথম বার প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার গাছের লট টেন্ডার হলেও বন বিভাগ জমির মালিকদের কোন অংশ দেয় নাই।  গোমনাতী ইউনিয়নে সরেজমিন দেখতে গেলে বন বিভাগের সর্বস্তরের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি খুজে পাওয়া যায়, গাছ নাই এমন প্রায় ১০০ একর আবাদী জমি, প্রতি বিঘা ৩০০০-৪০০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক লীজ দিয়েছেন, টাকার বিনিময়ে ঁজমির মালিক নয় এমন ব্যাক্তিদের বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার জন্য জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জমির মাটি  বিক্রি, উপকারভোগী দলের সদস্য পদ দেয়ার জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা  ঘুষ নেয়া, গেজেটের তালিকা থেকে জমি অবমুক্ত করে দেয়ার  নামে ২০-৩০ হাজার  টাকা  করে একাধিক ব্যাক্তির কাছে ঘুষ নিয়েছেন গোমনাতী বন বিভাগের বিট অফিসার সহিদুর রহমান ও মালী আনিছুর রহমান। এছারাও বিট অফিসার সহিদুর রহমান মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে তার সহযোগী রফিকুল ইসলাম (হাচ্ছাউ) এর মাধ্যমে এলাকার অনেক নিরিহ মানুষের কাছে চাঁদা আদায় করেছেন। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করেছেন তাদের মিথ্যা মামলায় জরিয়ে দেয়া হয়েছে, বর্তমানে ৩টি মামলা চলমান আছে, আসামীর সংখ্যা ২২ জন এবং প্রতিটি মামলার সাক্ষী তার সহযোগী রফিকুল ইসলাম (হাচ্ছাউ) । মামলার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।
জমির মালিক আবুল কাসেম, ইসমাইল হোসেন, দুলাল উদ্দিন বলেন, আমরা এই সমস্যার সমাধান চেয়ে অনেক আবেদন করেছি কেউ কোন ব্যবস্থা নেয় নাই, যেমন জেলা প্রশাসক, নীলফামারী বরাবরে ৮ ফেব্রুয়ারী’ ১৯৮৬, মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর ০৮/০৮/১৯৮৮, সিনিয়ার সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয় ২২/০৬/২০১৪, উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ২৩/১২/২০১৪  ও ০৪/০১/২০১৫  তারিখ আবেদন করা হয় , উল্লেখিত আবেদনের অনুলিপি সংস্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়, কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
গত ১৩/০১/২০১৫ তারিখ মাননীয় সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আসাদুজামান নুর বরাবরে আবেদনের  প্রেেিত গত ১৪/০১/২০১৫ তারিখে জেলা প্রশাসক নীলফামারীকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করলেও  জেলা প্রশাসক দীর্ঘ ৪ মাসেও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন নাই। ভূমি অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি গোমনাতী এর আয়োজনে ১৮ এপ্রিল’২০১৫ নীলফামারী জেলা শহরে সাংবাদিক, আইনজীবি ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বনভূমির মালিকানা উদ্ধারে করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ও আইনজীবিদের পরামর্শ অনুযায়ী দরিদ্র ভূমি মালিকদের সহায়তা করার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি নাগরিক কমিটি গঠিত হয়। নাগরিক কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসক এর সাথে দেখা করে মাননীয় সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জনাব আসাদুজামান নুর কর্তৃক সুপারিশকৃত আবেদনের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি জরুরী ভাবে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। 
কমিটির সদস্যগণ মাননীয় সংসদ বীর-মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, ডোমার-ডিমলা, নীলফামারী-১ এর সাথে দেখা করেন এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভাগীয় বনকর্মকর্তাসহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সকল সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা আহবান করান জন্য অনুরোধ করেন, মাননীয় সংসদ সদস্য গত ১৩ মে ডোমার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে একটি সভা আহবান করেন। সভায় ডোমার উপজেলা চেয়ারম্যন আব্দুর রাজ্জাক বসুনীয়া,  বিভাগীয় বনকর্মকর্তা রংপুর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, গোমনাতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন, আইনজীবি, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক ও স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিিিধগণ অংশগ্রহণ করেন। মাননীয় সংসদ সদস্যের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বন বিভাগের বিরুদ্ধে বন ভূমির জমির মালিকগণ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই জমির মালিক ও বন বিভাগের সমন্বয়ে একটি কর্ম পরিকলœা তৈরী করা হবে এবং তা আপিল কমিটি কতৃক অনুমোদিত হতে হবে। সভায় বিভাগীয় বনকর্মকর্তার কছে বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে! কর্ম পরিকল্পা নেই বলে তিনি জানান। সভায় বনকর্মীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসহ জমির মালিকানার বিষয়টি তদন্তপৃর্বক সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যেও প্রস্তাবে উপজেলা চেয়ারম্যানকে আহবায়ক, ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, জমির মালিক একজন এবং বনবিভাগের একজন সহ মোট ০৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। কমিটিকে পরবর্তী উপজেলা সমন্বয় সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেন। তদন্তে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তি করনীয় ঠিক করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সেই কমিটি এখনো তদন্তের কাজ শুরু করেন নাই। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাময়িক ভাবে টেন্ডারকৃত বাঁশ কাটা বন্ধ থাকলেও গতকাল বৃস্পতিবার ২৮ মে’ ২০১৫ সকাল থেকে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার বাঁশ কাটা শুরু করেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item