মিঠাপুকুর সহ বৃহত্তর রংপুরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নাশকতার নেপথ্য যারা

হাজী মারুফ,রংপুর ব্যুরো:
মিঠাপুকুর সহ বৃহত্তর রংপুরের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নাশকতার নেপথ্যে যারা: বিগত ৫ ই জানুয়ারী ২০১৪ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিহত এবং বাতিল করার উদ্দেশ্যে জামাত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে আন্দোলন করলেও এই আন্দোলনের মূল পরিকল্পনাকারী এবং আন্দোলনকে বেগবান করতে এই দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়।
বিএনপির আন্দোলন পরিকল্পনায় বিগত সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশত্যাগী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নির্দেশে তার অনুসারী কিছু সংখ্যক তরুণ নেতৃত্বকে জড়িত মনে করা হলেও প্রকৃত পক্ষে দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতৃবৃন্দ উক্ত আন্দোলনে নিজেদেরকে জড়াননি। এদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির বৃহৎ অংশটি আন্দোলনের কথা মুখে বললেও মাঠে তাদের সক্রিয় না থাকার কারণ হিসাবে তারেক জিয়ার স্বেচ্ছাচারী আচরণ এবং ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করার বিষয়টি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। দলটির একটি অংশ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বেশ কিছু অদূরদর্শী সিদ্ধান্তকেও সমানভাবে দায়ী করেন।

৫ ই জানুয়ারী ২০১৪ ইং পূর্ব এবং এবছর জানুয়ারী থেকে মার্চের আন্দোলনের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল জ্বালাও-পোড়াও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর যত্রতত্র আক্রমন, বাস-ট্রাক-রেল সহ সকল গণপরিবহন ব্যবস্থা ধ্বংসে ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ জনগণকে দগ্ধ করা ও পুড়িয়ে মারা, অর্থনৈতিক উন্নতিকে সমূলে ধ্বংসের জন্য পন্য সরবরাহ ব্যবস্থা, আমদানী ও রফতানী কার্যক্রমে ছেদ ঘটানো সহ একটি সুদূর প্রসারী নীল নকশার নির্লজ্য বাস্তবায়ন।

এ সকল নাশকতার মূল সমন্বয়কারী, অর্থদাতা ও বাস্তবায়ন তদারকিতে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে অভিযুক্ত করা হয়। সরকার বিরোধী এসকল নাশকতায় জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য আর্থিক সংগঠনকেও দায়ী করা হয়। সারাদেশে জামায়াতের অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মধ্যম পর্যায়ের অর্থদাতাকেও এসকল নাশকতায় জড়িত হিসাবে তালিকাভূক্ত করা হয়। তবে জামায়াতের প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সংযোগের অনেক প্রমান পাওয়া গেলেও নাশকতায় জামায়াতের সাহায্যপূষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা খুব একটা শোনা যায়নি।

আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুর এলাকা জাতীয় সংসদের বর্তমান মাননীয় স্পীকার ডঃ শিরীন শারমীন চৌধুরীর আসন রংপুরের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর সহ রংপুর বিভাগের এসকল নাশকতায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সেগুলোকে ঘাটি হিসাবে ব্যবহার করে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কারনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারী থেকে নিজেদের আড়াল করতে এসকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে যেগুলো তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ইউনিট হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে।

এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার শাহ্ সুলতান বীজ হিমাগার, পীরগঞ্জ উপজেলার শান্তনা কোল্ড ষ্টোরেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে উক্ত প্রতিষ্ঠান দু’টির মালিক মোঃ আব্দুল গফুর। তার ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে পিতা- আকবর আলী, রাজাবাজার, বগুড়া।

অনুসন্ধানে জানা যায় একদা কুলি, দিন মজুর হিসাবে জীবন ধারন করা গফুর রাতারাতী আঙ্গূল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। বর্তমানে তার অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মিঠাপুকুরের শাহ্ সুলতান বীজ হিমাগার, পীরগঞ্জ উপজেলার শান্তনা কোল্ড ষ্টোরেজসহ পাঁচটি আলুর হিমাগার, বগুড়ার ধুনটে বৃহদাকার অটো রাইসমিল, পোল্ট্রী হ্যাচারী ও ফিড মিল, আমদানী-রফতানী ব্যবসা সহ মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, রংপুর সহ উত্তরবঙ্গে হাজার একরেরও উপর জমি। তার এ রাতারাতী উত্থানের তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, জামায়াতের বিশ্বাসী কর্মী হিসাবে পরিচিত আব্দুল গফুরের সঙ্গে বিগত জোট সরকারের সময় ২০০২ ইং সালে জামায়াত নেতা দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর পরিচয় হয়। তার পর থেকে গফুরকে আর পিছনে ফিরে তাকাােত হয়নি। মীর কাশেম আলীর সঙ্গে আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তার প্রত্যক্ষ আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় গফুর একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী, লেবার থেকে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সকলেই জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

জামায়াত প্রতিষ্ঠিত এসকল প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ নিয়মিত জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হয়। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পীরগঞ্জ আসনে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জামায়াত প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রার্থী জামায়েত নেতা এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম সহ বেশ কিছু জামায়াত নেতার ব্যাংক হিসাবে আব্দুল গফুর দীর্ঘদিন থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানগুলি লভ্যাংশ প্রদান করেছে যা অত্র এলাকার জামায়াতের নাশকতা কার্যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। জামায়াত নেতা আব্দুস সালামের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ, রংপুর প্রধান শাখা, ধাপ শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ, রংপুর শাখা এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিঃ, রংপুর শাখা এর ব্যাবস্থাপকগণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অভিযুক্ত গফুরের সাথে কথা বললে তিনি নিজেকে জামায়াত কর্মী হিসেবে পরিচয় দিলেও আর্থিক কিংবা নাশকতার বিষয়ে কোন কথা না বলে লাইন কেটে দেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান যে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ব্যক্তি পর্যায়ে জামায়াত প্রতিষ্ঠিত এ সকল প্রতিষ্ঠান সমূহ রংপুর বিভাগসহ সমগ্র উত্তরবঙ্গে যাতে কোন নাশকতার অর্থযোগানদাতা হিসাবে কাজ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছে অত্র এলাকার সচেতন, শান্তিকামী সাধারণ মানুষ।


পুরোনো সংবাদ

রংপুর 8444741294700192268

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item