দেবীগঞ্জে গৃহবধূ আত্মহত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা। আটক ১
সাইদুজ্জামান রেজা, পঞ্চগড়ঃ
পরকীয়া প্রেমিকের সাথে আটকের পর শালিসের সিদ্ধান্ত। শালিসের আগেই গৃহবধূর মৃত্যু। সব মিলিয়ে এই মৃত্যু নিয়ে এলাকায় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের মল্লিকাদহ সাহাপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূর স্বামীর নাম মুকুল চন্দ্র। শনিবার সকাল ১১ টায় নিজ বাড়ির রান্নাঘরে ওই গৃহবধূকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাড়ির সদস্যরা পুলিশকে জানায়। পরে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেন। ওইদিন রাতেই মেয়ের বাবা মলিন চন্দ্র বর্মন বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। যেখানে মেয়ের স্বামী মুকুল, শাশুড়ী অঞ্জনা রায় সহ পরকীয়া প্রেমিক শফি আলমকে আসামী করা হয়। শফি পার্শ্ববর্তী কান্তখুটা এলাকার জহুরুল হকের ছেলে।
ঘটনার পর থেকেই স্থানীয়দের মাঝে নানান প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। অনুসন্ধানে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। নিহত গৃহবধূর সাথে শফির পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি মেয়ের শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা জানতেন। এর আগে এই বিষয়ে পারিবারিক ভাবে মিমাংসা করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল গৃহবধূ ও শফিকে সাহাপাড়ার নিজ বাড়িতে স্থানীয়রা আটক করেন। ঘটনার দিন গৃহবধূর স্বামী মুকুল চন্দ্র দিনাজপুরে ছিলেন।
পরে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র রায় সরকারকে বিষয়টি অবগত করেন স্থানীয়রা। দুই পক্ষের সাথে কথা বলে শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আলোচনার জন্য দিন ঠিক করা হয়। কিন্তু আলোচনায় বসার আগেই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়রা বলছেন, মুকুল কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন। অন্য জেলায় কাজ করতে যাওয়ার সুযোগে শফির সাথে ওই গৃহবধূর পরকীয়ার সম্পর্ক তৈরি হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন গৃহবধূর ভাই মানিক চন্দ্র বর্মন। তিনি জানান, ৮ তারিখে ঘটনার দিন আমার বাবা দিদিকে বাসায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন এবং ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্রকে আশ্বস্ত করেছিলেন আলোচনার দিন দিদিকে সাথে নিয়ে আসবেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বাবার সাথে দিদিকে পাঠান নি। সেদিন চেয়ারম্যান সম্মতি দিলে দিদি হয়তো আজ আমাদের সাথে থাকতেন।
তিনি আরো বলেন, গতকাল আমার দিদিকে মারধর করা হয়েছিল।
সুন্দরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র রায় সরকার বলেন, ঈদের কারণে ভিজিএফের টাকা বিতরণ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ঈদের পরের দিন আলোচনার দিন ঠিক করা হয়। এর আগেই যে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবি নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসএম হাফিজ হায়দার জানান, প্রাথমিক ভাবে মারধরের কোন চিহ্ন আমরা পাইনি। তবে গলায় ফাঁসের চিহ্ন ছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই স্বজনরা মরদেহ নামিয়ে ফেলেন। মৃত্যু নিয়ে মেয়ের পরিবারের সন্দেহ থাকায় গতকাল ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।