কুড়িগ্রামে এনজিওর বিরুদ্ধে ভিজিডির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মানববন্ধন
হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
সরকারের ভিজিডি কর্মসূচির সুবিধাভোগী দুঃস্থদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা কিরারা নো কাই এর বিরুদ্ধে। এ অর্থ ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ দুঃস্থ নারীরা। মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন হয়। অংশ নেন ভিতরবন্দ ও হাসনাবাদ ইউনিয়নের কয়েকশত উপকারভোগী দুঃস্থ নারী।
সমাবেশে ভুক্তভোগী নারী ফাতেমা, ঝর্না ছাড়াও অনেকে বক্তব্য রাখেন। ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল হক খন্দকার বাচ্চু, হাসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মওলা আজাদ বাবুল, নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রভাত কুমার ভৌমিক, হাসনাবাদ ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, ভিতরবন্দ ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান আনিছ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ২০১৭-২০১৮ সালের ভিজিডি চক্রের হাসনাবাদ, ভিতরবন্দ, নেওয়াশী, সন্তোষপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৩শতাধিক দুঃস্থ নারী উপকারভোগীদের সঞ্চয়ী অর্থ ব্যাংকে জমা না করে বাস্তবায়নকৃত এনজিও কিরারা নো কাই আত্মসাৎ করে। সেই অর্থ ফেরতের জন্য নারী ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাদের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করেও এইসব দুঃস্থ মহিলারা তাদের জমা কৃত প্রায় ১৫ লাখ টাকা ফেরত পায়নি। এরই দাবিতে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করে। অভিযোগ নাগেশ^রী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জিন্নাতারা ইয়াসমিনের যোগসাজস রয়েছে এতে। মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে একটি মিছিল করে আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করে।
জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ভিজিটি চক্রের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায় বেসরকারি সংগঠন ‘কিরারা নো কাই’। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী দুঃস্থ উপকারভোগীরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে। যা পরবর্তীতে এককালীন ফেরত দেয়া হয়। এতে করে প্রত্যেক পরিবার প্রায় ৪ হাজার ৮শত করে টাকা পায়। এই সঞ্চয়ের অর্থ কিরারা নো কাই- এর মাঠ কর্মীরা পাশ বইয়ের মাধ্যমে উপকারভোগীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। পরে ভিজিডি চক্র শেষ হলে উপকারভোগীদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে পাসবইগুলো গুটিয়ে আনেন মাঠ কর্মীরা। তারপর থেকে ঘুরাতে থাকে এই এনজিওর কর্মকর্তা ও কর্মীরা। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকারভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা কোনো ব্যাংকেই তারা জমা করেন নি। বরং এনজিওর নিজস্ব লেজার বই-এ লিখে সেই টাকা আত্মসাত করে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার নাগেশ^রী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পায় নি।
এ ব্যাপারে নাগেশ^রী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জিন্নাতারা ইয়াসমিন বলেন, ভুক্তভোগিদের অভিযোগ পাওয়ার পর কিরারা নো কাই এর পরিচালক খাজা গোলাম মুর্শিদ পিন্টু সাহেবের সাথে মৌখিক এবং লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এখনও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় নি।
অপরদিকে অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে কিরারো নো কাই এর পরিচালক অ্যাডভোকেট খাজা গোলাম মুর্শিদ পিন্টু তার সংগঠনের কর্মী মিলি বেগম উপকারভোগীদের টাকা হতিয়েছে বলে স্বীকার করে জানান, এই ঘটনার সাথে নাগেশ^রী মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তারও গাফলতি আছে। ঐ কর্মীসহ মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জিন্নাতারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমরা এ ব্যাপারে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
স্মারকলিপি পেয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীরা যাতে দ্রুততম সময়ে অর্থ ফেরত পান সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।