চিলাহাটি -হলদিবাড়ি রেললাইনে ভারতীয় ইঞ্জিনের ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত (ভিডিও সহ)
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয় ও আশরাফুল হক কাজল॥এপার বাংলা ওপার বাংলার তারকাটা বেড়ার ধারে শতশত উৎসুক মানুষজনের অপেক্ষা। কখন আসবে ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামুলক যাত্রা) ভারতীয় রেল ইঞ্জিন। আর এরজন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জোর প্রস্তুতি। ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে সাক্ষী থাকতে সীমান্তে এলাকায় তাই দুই দেশের প্রচুর মানুষের ভিড়। কড়া পাহাড়ায় দাঁড়িয়ে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীও।
আজ বৃহস্পতিবার ঠিক দুপুর ১২টা। ভারতের হলদিবাড়ি রেলস্টেশন থেকে বাংলাদেশের সীমান্ত চিলাহাটির ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় হুইসেল বাজিয়ে ছুটে আসে ট্রায়াল রানের ভারতীয় রেল ইঞ্জিনটি। ৫৬ বছর পর বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি ট্রেন রুটকে পুনরুজ্জীবিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রুটে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক ট্রেনের হুইসেল বাজার অপেক্ষা। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে (স্বাধীনতার ৫০ বছর) ১৬ ডিসেম্বর/২০২০ বা ২৬ মার্চ/২০২১) দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে রেল চলবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে। সেই ভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তাই ট্রায়াল রানে দুই বাংলার বাসীরা সেই আনন্দ উল্লাসে আত্নহারা হয়ে উঠেছিল।
ট্রায়াল রানের নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়ার জেপি শিং,ডিপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার ভিকেমিনা ও নির্বাহী প্রকৌশলী পিকেজে। ভারতী রেল ইঞ্জিনটি নো-ম্যান্স ল্যান্ড অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমানা পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় ভারতীয় প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী ডিবিশনের প্রকৌশলী-২ প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহীম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন ও উপ সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম।
ট্রায়াল রানে আসা রেল ইঞ্জিন হতে নেমে ভারতীয় প্রতিনিধিগন সীমান্তে বাংলাদেশের রেলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হয়। এরপর ট্রায়াল ইঞ্জিনটি নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিরা ফিরে যান।
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশ অংশের বিছানো রেললাইনে আমাদের রেল ইঞ্জিনের ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হবে চলতি মাসের আগামী ২৭ অক্টোবর।
সুত্র মতে ভারতীয় রেল ইঞ্জিনের ট্রায়াল রানের জন্য দুই দেশের বিছানো রেললাইনের সীমান্তের ৭৮২ সীমান্ত পিলারের নো-ম্যান্সল্যান্ডে গত মঙ্গলবার (৬ অক্টেবর) ফাঁকা অংশটি যুক্ত করা হয়েছে। এরপর সংযোগস্থল থেকে ভারতের সীমান্তের দিকে লাইনটি রঙ করা হয়। ভারতীয় রেল ইঞ্জিনটি আসার আগে রেললাইনের সীমানা বরাবর টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় লাল সংকেত চিহৃ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমরা দুই দেশের রেলওয়ে বিভাগের পক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলবেন। যাতে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর উদ্ধোধন করতে পারেন এমন প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, ১৯৬৫ সালের পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পরিত্যক্ত রেলপথটি চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় এই রেলপথের বিষয়ে একটি চুক্তি হয় দুই দেশের সরকারের মধ্যে।
সুত্র মতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট পাক-ভারত বিভক্তের পরে এ পথে রেল চলাচল চালু ছিল। সে সময়ে এ পথে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করত যাত্রী ও মালবাহি ট্রেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বন্ধ হয় দুই দেশের মধ্যে রেল চলাচল।
বন্ধ থাকা রেলপথটি চালু করতে বাংলাদেশ অংশে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চিলাহাটি রেল স্টেশন চত্বরে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট চিলাহাটির জিরো পয়েন্টে ভারত-বাংলাদশ সংযোগস্থলে রেলপথের নির্মাণ কাজের পরিদর্শন করেন তিনি।
অপর দিকে ভারতের পক্ষে তাদের অংশের ব্যয় ৪২ কোটি রুপি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় ভারতের হলদিবাড়ি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পাতা হয় (নো-ম্যান্স ল্যান্ড সহ) ৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রেল লাইন। এ ছাড়া হলদিবাড়ি থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার রেলপথকে নতুন করে স্থাপন করা হয়। অপর দিকে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার বিছানা হয়েছে রেলপথ। সেই সঙ্গে চিলাহাটি রেলস্টেশনে পৃথকভাবে ২ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার লুপলাইন রয়েছে। এ ছাড়া চিলাহাটি থেকে ঢাকা ও খুলনা পর্যন্ত রেলপথ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ডবল লাইন স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান এই রেলরুটে শুরুতেই চলবে মালগাড়ি। এরপর চালু করা হবে-ঢাকা-খুলনা থেকে যাত্রীবাহি ট্রেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে কোলকাতা-শিলিগুড়ি ট্রেন সার্ভিস।
চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথটিকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বান্ধব রেলপথ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।এই ট্রেন রুট ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে মালামাল পরিবহন করতে পারবে। ফলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও এই পথে আমদানি রপ্তানি করা যাবে।#