নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে জ্বীন ও আত্নার মাধ্যমে চিকিৎসার নামে প্রতারনা
মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ জ্বীন ও আত্নার নাম করে আধ্যাতিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে আসছেন এক ভন্ড প্রতারক(কবিরাজ)। চিকিৎসার নাম করে ওই ভন্ড কবিরাজ গ্রামের সহজ সরল রোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ওই কবিরাজের বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের সাতঘটিপাড়া গ্রামে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিতাই ইউনিয়নের সাতঘটিপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে আশরাফ আলী দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ তাঁর স্ত্রী রওশনআরার শরীরে জ্বীন ভর করে বিভিন্ন এলাকার অসহায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। মুলত তার এসব কার্যক্রমের প্রধান শক্তি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী এবং মার্ডার মামলার জামিন প্রাপ্ত আসামী।
গতকাল শুক্রবার, রাত আটটায় সরেজমিনে ওই কবিরাজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাড়ির বাইরে অটো ভ্যান, সাইকেল রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে শত শত রোগী এসে জড় হয়েছেন। এসময় বাহির থেকে কবিরাজের ঘরে রোগীর সাথে জ্বীনের কথোপোকথন শোনা যায়। এসময় এ প্রতিবেদক জ্বীনের সাথে কথা বলার জন্য কবিরাজের ঘরে ঢুকতে চাইলে কবিরাজের সহযোগী আয়েশা বেগম, রশেদুল মিয়া বাঁধা প্রদান করে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন। পরে তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগমকে জানালে তিনি কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশকে পাঠিয়ে দেন। থানা পুলিশ যাওয়ার আগেই জ্বীন, আত্না, কবিরাজ ও কবিরাজের সহযোগী পালিয়ে যায়।
কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছিটরাজিব বাংলাবাজার গ্রামের বাচ্চা মামুদের ছেলে শাহ আলম বলেন, আমি ছোট খাটো ব্যাবসা করি দোকানে আমার মন বসেনা । আমি শুনেছি এই কবিরাজ জ্বীন দিয়ে ভাগ্য গননা করে তাই এসেছি।
মমতা বেগম নামে এক রোগী বলেন বেশ কিছুদিন থেকে আমার জ্বর ,সর্দি, মাথাব্যাথা কোন ওষুধে কাজ করছেনা তাই আমি কবিরাজের কাছে এসেছি চিকিৎসা নিতে।
দোলাপাড়া গ্রামের হাসনা বেগম, বড়ভিটা ইউনিয়নের টঁটুয়ার ডাংগা গ্রামের আফজাল হোসেন সহ কবিরাজের কাছে আসা রোগীরা জানান, কবিরাজ জ্বীন ও আত্নার মাধ্যমে রোগীর সমস্ত সমস্যা বলে দেন। তাঁরপর রোগীর যে চিকিৎসা দরকার সেঅনুযায়ী ওষুধ পত্র সরবরাহ করেন।
সাতঘটিপাড়া গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আশরাফ আলী তাঁর স্ত্রীর শরীরে জ্বীন ভর করার নামে মানুষের সাথে প্রতারনা করছে। এলাকার কোন লোক তাঁর কাছে কোন চিকিৎসা নেননা। কবিরাজের কিছু লোকজন বাহিরে বিভিন্ন চিকিৎসার কথা প্রচার করে রোগীদের নিয়ে এসে প্রতারনা করছে।
নিতাই ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল খালেকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কবিরাজ আশরাফ আলী জ্বর সর্দি, যাদুটোনা সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য পানি পড়া দেয় বলে জেনেছি।
কবিরাজ আশরাফ আলীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন , এলাকার মানুষ বিশ্বাস করে আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু শফি মাহমুদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কবিরাজ দিয়ে জ্বর সর্দি কাশি মাথাব্যাথাসহ অন্যন্য রোগের চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নাই। এসব অপপ্রচারে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি।
কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়ালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ফোন পেয়ে কবিরাজের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই কবিরাজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।