কমতে পারে পশু কোরবানি, শঙ্কায় চিলাহাটির কামাররা
https://www.obolokon24.com/2020/07/kamar.html
করোনা ভাইরাস, প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্যা ও গবাদি পশুর ল্যাম্পি রোগ প্রভাব ফেলেছে এবারের কোরবানীর উপর।
ঈদুল আজহা মানেই পশু কোরবানির ঈদ। পশু কোরবানি ও মাংস তৈরিতে অতি প্রয়োজনীয় এসব ধারালো অস্ত্র সরবরাহের জন্য কামাররা দিনরাত কাজ করেন। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময়টাতে কামারদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় তাদের আয়-রোজগারও।
দিন যতই সামনে এগোচ্ছে ততই পবিত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসছে। আর তাই কোরবানির পশুকে ঘিরে খামারি থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজারে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট নিয়ে শঙ্কিত কোরবানীর পশু জবাই করার হাতিয়ার তৈরীর কারিগর কামাররা। বিগত বছরের তুলনায় এবারের কাজের ব্যস্ততার ফারাকের কারনে এমন শঙ্কা তাদের মনে। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটি কামারপাড়ার কামারদের মতে, করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক দৈন্যতায় পশু কোরবানি অনেকটাই কমে যেতে পারে। ইচ্ছা থাকলেও অনেকেই আর্থিক সমস্যায় কোরবানি নাও দিতে পারেন। তাই করোনায় কমতে পারে পশু কোরবানি। এছাড়া করোনাভাইরাস দুর্যোগের মধ্যে এবার আগাম বন্যায় বাংলাদেশে নয়টি জেলায় তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন । বন্যা কবলিত উত্তরের বিভিন্ন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে বলেছেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না এবং তরিতরকারি-শাকসবজিসহ বিভিন্ন শস্য ও চাষ করা মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর অনেকেই এবার কোরবানী নাও দিতে পারেন এমন শঙ্কাও করছেন তারা। করোনা মহামারি ও বন্যার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এলএসডি বা লাম্পি স্কিন রোগের ভাইরাস। ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদের আগে এই চর্মরোগটি গবাদিপশুর মাঝে ছড়িয়ে পড়ায় কোরবানীর সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন
তারা।
জানাযায়, চিলাহাটি কামারপাড়ায় বসবাস করে আসছে ৪০/৫০টি কামার পরিবার। অনেকেই আবার এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশাকে বেছে নিয়েছে।ঈদ-উল-আযহ্া আসার প্রায় ২/৩ মাস আগে থেকে কামারপাড়া এলাকাটিতে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা এক অদ্ভুত তরঙ্গে সময় কাঁটাতো। এমনকি কামাররা দুবেলা খাওয়ারও সময় পেত না। কামারদের এই ঠুক-ঠাক শব্দের কারনে এলাকার মানুষজন ঠিক করে ঘুমাতে পারতো না। এবার করোনা পরিস্থিতিতে দুমাস বেঁচাকেনা না থাকায় প্রায় বসে রয়েছেন কামার পরিবাররা। সামনে কোরবানী ঈদ হলেও কারো মুখে কোন খুশির আবছায়া নেই। নেই সেই ঠুং-ঠাং শব্দ। কামার বিধান, সদেশ, বুধারু, বিপুল কর্মকার ও হালিম কর্মকারের সাথে কথা হলে তারা বলেন,“আমাদের বাপ-দাদা সকলে এই কামারের কাজ করে আসছে। আর আমরা তাদের বংশধর হওয়ায় নিজেদের এই বংশ পরম্পরা এগিয়ে নেওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকে আমরাও এই কামারের কাজ করে আসছি। ঈদ-উল-আযহাকে এলাকায় বড় ঈদ বলে অভিহিত করা হয়। ঈদ মানেই খুশি। আর এই বড় ঈদের আনন্দ আমরাও অনুভব করি ঈদের প্রায় ২/৩ মাস আগে থেকে। কারন, এই এলাকা সহ পাশ্ববর্তী এলাকার যে যে ব্যক্তিরা পশু কোরবানী দেয় তারা সকলেই এখানে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরী করতে দেয়। যার ফলে আমাদের ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হয় । কিন্তু, এবার আমরা প্রায় সবদিক থেকে আটকে পরে আছি। সারাদিনে ৫/৭জন মানুষও আসছে না লোহার কোন জিনিস তৈরী করতে। তাই নিজের লোহা দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরী করে হাট-বাজারে পরশা সাজিয়ে বিক্রি করছি। কিন্তু, সেই ব্যবসাও এবার কম চলছে।”