করোনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে বিউটি পার্লার গুলো, চরম সংকটে নারী উদ্যোক্তারা

মেহেদী হাসান উজ্জল,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে বেশিভাগ নারীরা ঘরে অবস্থান করছে। এর ফলে অন্যান্য খাতের মতো মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের সৌন্দর্য সেবা খাত বা বিউটি ইন্ডাস্ট্রি।
অনুসন্ধানী তথ্যে সম্প্রতি এক গবেষণা মতে জানা গেছে,বর্তমানে দেশের ১৮ শতাংশ নারী এ পেশায় জড়িত। বিউটি পার্লারে উদ্যোক্তা ৩ লাখেরও বেশি ও ১০ লাখেরও কর্মী বেশি আছে । পার্লার খাত থেকে বার্ষিক আয় হয় প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়ীত হলে এই খাতের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নারী উদ্যক্তারা। এ বিষয়ে কথা হয় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী শহরের বিবি আনা বিউটি পার্লারের সত্বাধীকারী ও বিউটি এক্সপার্ট মোছা: মিরা পারভিন এর সাথে। 
পার্লার ব্যাবসা নিয়ে তার অবস্থার কথা জানতে চাইলে মিরা পারভিন বলেন,তিনি নিজের পায়ে দাড়াতে পরিবারের বাঁধা বিপত্তির মধ্যেও ২০০৭ সালে নিজের গহনা বিক্রি করে এবং পরিবারের কিছুটা সহযোগিতায় প্রথমে এই প্রতিষ্ঠান শুরু করি। এ পর্যন্ত প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অনেক টাকা ইনভেষ্ট করে এই ব্যাবসা করছি। এতে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশী এলাকার কিছু অবেহেলিত নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে,কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সকল নারী উদ্যোক্তারা খুব অসহায়ত্বের মাঝে ব্যাবসা পরিচালনা করে যাচ্ছি। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে প্রায় দেড় মাস আমার এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। 
তিনি বলেন, বর্তমানে বসে বসে স্টাফদের বেতন,প্রতিষ্ঠান ভাড়া,কারেন্ট বিল দিয়ে আসছি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে এই প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হতো ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা,যা বর্তমানে আয় হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা,প্রতিমাসে সবমিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের খরচ হয় ২৬হাজার টাকা। এ পরিস্থিতিতে বাড়ী থেকে টাকা ভুত্তুর্কি দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিমাসে লোকশান গুনতে হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। আগে ৪জন স্টাফ কাজ করতো,এখন বাধ্য হয়ে বর্তমানে ২জন স্টাফ দিয়ে চালাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পার্লাার ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তবে অসছে ঈদে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তবে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,আমরা পার্লার মালিকরা ভালো নেই। ‘ঘর ভাড়া, পার্লার ভাড়া, স্টাফের বেতন,সব মিলিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ বা এককালীন সাহায্য চাই না। আমাদের যদি সরকারে তরফ থেকে স্বল্প সুদে দির্ঘ মেয়াদী লোনের ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা সেই লোন দিয়ে এই দুঃসময়ে জীবন পরিচালনা করতাম। এ বিষয়ে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন এই নারী উদ্যোক্তা মিরা পারভীন। 
একই কথা বলেন পৌর শহরের মৌ বিউটি পার্লারের সত্বাধীকারী লিপা সরকার, তিনি বলেন,করোনার কারনে মানুষ তেমন আর সাজগোজ করছে না এবং বিয়ের অনুষ্ঠানও নেই তাই। কাষ্টমাররা তেমন পার্লারে আসছেননা 
সে কারনে ব্যাবসা এখন মন্দা,তাই খরচ পুষিয়ে ওঠা যাচ্ছেনা,তিনজন ষ্টাফ ছিলো তাদেরকে কাজে আসতে মানা করেছি। টুকটাক কাষ্টমার এলে যতটুকু পারছি নিজেই কাজকরছি। রাফা বিউটি পার্লারের সত্বাধীকারী স্নিগ্ধা শারমিন বলেন,গত ৪বছর ধরে পার্লার ব্যাবসা করছি, এই প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি সংসারে সিংহভাগ খরচ চালান,কোনোদিন এরকম সমস্যায় পড়তে হয়নি,করোনার কারনে কাষ্টমার খুব কম, তাই ব্যবসা ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন,ফুলবাড়ীতে প্রায় ২০-২৫টি পার্লার রয়েছে এর মধ্যে অনেক মেয়েরা সংসারের পাশাপাশী নিজে কিছু আয় করতে নিজ বাড়ীতেও এই পার্লার ব্যাবসা করছে,সংসারে বাড়তি টাকা যোগান দিতে। কিন্তু বর্তমান এই পরিস্থিতিতে তাদের পার্লার ব্যাবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
শহরের একাধিক পার্লার ব্যাবসায়ী নারী উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা চাই সরকারি খাতে পার্লার জগতের নাম যুক্ত হোক। আমরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছি, যা কখনোই সবার সামনে আসে না। আমরা এখন হতাশার সমুদ্র্রে হাবুডুবু খাচ্ছি, আমাদের দিকে একটু হাত বাড়িয়ে দিন। আমরা চাই সরকারিভাবে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হোক। এই খাত ও এর সঙ্গে জড়িতদের রক্ষার্থে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রত্যাশা এই বিউটিশিয়ানদের।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচিত 6668596437072261318

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item